
ইরনা'র বরাত দিয়ে পার্সটুডে'র রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে সেনেগালের শেষ সামরিক ঘাঁটিগুলো হস্তান্তর সম্পন্ন করেছে, এর মধ্যদিয়ে সেখানে দেশটির দীর্ঘ সামরিক উপস্থিতির অবসান ঘটল। আগামী তিন মাসের মধ্যে অবশিষ্ট প্রায় ৩৫০ জন ফরাসি সেনা সেনেগাল ছেড়ে চলে যাবে। এসব সেনার প্রধান কাজ ছিল সেনেগালের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা।
এর আগে আফ্রিকার মালি, নাইজার ও বুরকিনাফাসোসহ বিভিন্ন দেশ ফরাসি বাহিনীকে বহিষ্কার করে এবং তাদের ঘাঁটিগুলো বন্ধ করে দেয়।
আফ্রিকার দেশগুলোর এই অবস্থানের কারণ কী?
আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ফরাসি সেনা বহিষ্কারের পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণ। বিশেষ করে আফ্রিকার উপকূলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলের কিছু দেশে ফরাসি সেনাদের উপস্থিতি ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়েছে। স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো মতে, ফ্রান্সের সেনা উপস্থিতি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতিতো করেইনি বরং সন্ত্রাস, সহিংসতা ও অস্থিরতা আরও বাড়িয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মালিতে একাধিকবার সাধারণ জনগণের ওপর ভুলভাবে হামলা চালিয়েছে ফরাসি সেনারা, যা জনমনে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
এছাড়া, কিছু ফরাসি সামরিক ঘাঁটির আশেপাশে গণকবর পাওয়া গেছে। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে এই ধারণা আরও জোরদার হয়েছে যে, ফ্রান্স আসলে নিজের স্বার্থেই কাজ করে, অন্যদের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা নেই।
ঔপনিবেশিক যুগের ফরাসি নিপীড়ন, শোষণ ও দখলদারিত্ব আজও আফ্রিকানদের স্মৃতিতে গাঁথা। নতুন প্রজন্ম সেই অতীত মানতে চায় না, তারা এমন শোষকদের আর তাদের দেশে স্থান দিতে চায় না। ফরাসি প্রভাব খর্ব করা ও পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনই এখন তাদের লক্ষ্য।
সম্প্রতি আফ্রিকার বহু দেশে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়েছে। তারা রাশিয়া, চীন ও ইরানের মতো নতুন বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী। এই নতুন বাস্তবতায় আফ্রিকার দেশগুলো পুরনো শক্তি ফ্রান্সের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পথ বেছে নিচ্ছে।
এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় ফ্রান্সও আফ্রিকা বিষয়ক নিজের নীতি নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছে এবং শেষমেশ তাদের ঘাঁটি বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।#
পার্সটুডে