IQNA

রাহবারের ইমামতিতে তেহরানে বিশাল ঈদুল ফিতরের জামাত

18:44 - July 06, 2016
সংবাদ: 2601141
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে আজ বুধবার ৬ই জুন পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ইরানের পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে তেহরানে। এ জামাতের ইমামতি করেছেন ইসলামী বিপ্লবের মহামান্য রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী।
মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি ইহুদিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রধান কর্মসূচি

বার্তা সংস্থা ইকনা: গতকাল সন্ধায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে সাওয়াল মাসের চাদ দেখা যাওয়াতে আজ বুধবার ৬ই জুন সেখানে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশটির রাজধানী তেহরানে। ইরানের ঈদের জামাত কমিটির ঘোষণা মতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও এ জামাতের ইমামতি করেছেন ইসলামী বিপ্লবের মহামান্য রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী।

পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিন রাহবারের ইমামতিতে ঈদুল ফিতরের জামাতে শরিক হওয়ার জন্য সর্বস্থরের জনগণ ফজরের নামাযের পর থেকেই প্রধান মুসাল্লাতে আসতে শুরু করে। এ নামাযে ইরানের প্রেসিডেন্ট ডা: হাসান রুহানি, বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাদেক লারিজানি এবং পার্লামেন্টের স্পীকার ডা: আলী লারিজানিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।

সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেছেন , মুসলমানদের মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি করে তাদের ঐক্যের ওপর আঘাত হানা ইহুদিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর প্রধান কর্মসূচি।

তিনি আজ তেহরানে ঈদুল ফিতরের নামাজের খুতবায় মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ছড়ানোর চেষ্টার বিষয়ে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে দিয়ে এই মন্তব্য করেছেন।

মুসলিম বিশ্বের যেসব সম্পদ ও ক্ষমতা রয়েছে সেসব ব্যবহার করে ও ঐক্যবদ্ধ থেকে মুসলিম উম্মাহকে সবচেয়ে ভালোভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব বলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

শত্রুদের বিচিত্র ও জটিল নানা ষড়যন্ত্র বানচাল করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যের চেতনা জোরদার সবচেয়ে সহজ এবং কম-খরচের পথ বলে মনে করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের চেতনা দুর্বল হয়ে গেলে এই দেশগুলোর মধ্যে শত্রুর প্রভাব সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হবে বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।

আজ পরে অন্য এক সমাবেশেও তিনি ইসলামী ঐক্যের বিরুদ্ধে শত্রুদের মহাষড়যন্ত্রের কথাটি তুলে ধরেছেন। আর তা হল, শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিন ইস্যুটিকে ভুলিয়ে দিতে চায়।

শত্রুদের এই মহাষড়যন্ত্র মোকাবেলার জন্য প্রকৃত শত্রুকে চেনা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, ইরানি মুসলিম জাতি এটা প্রমাণ করেছে যে প্রতিরোধই উন্নতি আর অগ্রগতির একমাত্র পথ।

তিনি তার বক্তব্যে বাগদাদ, ইস্তাম্বুল ও ঢাকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর আসল কারণও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোতে সংঘটিত সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাগুলো ইঙ্গ-মার্কিন ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার হাতে বিকশিত সন্ত্রাসবাদেরই পরিণতি যার উদ্দেশ্য হল ফিলিস্তিন প্রসঙ্গটিকে ভুলিয়ে দেয়া।

সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে সংকট অব্যাহত থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, এসব সংকটের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলমানদের প্রধান সমস্যা তথা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বের সমস্যা সমাধানের দিক থেকে মুসলমানদের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া ঠিক হবে না।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার সংগ্রাম একটি ইসলামী সংগ্রাম, বিষয়টি কেবল ফিলিস্তিনি সংগ্রাম নয়।

মুসলমানরা তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে মেতে থাকায় ফিলিস্তিনে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ জোরদার হচ্ছে বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও তার এই বক্তব্যের সত্যতা ফুটে ওঠে। যেমন, গত বছরের অক্টোবর মাসের পর থেকে ইসরাইল ২২৫ জন ফিলিস্তিনিকে শহীদ করেছে, জোরদার করেছে গাজার ওপর অবরোধ এবং গড়ে তুলেছে ইহুদিবাদী দখলদারদের জন্য অবৈধ হাজার হাজার বাসভবন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার আজকের এইসব বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদী মহল এবং বিশেষ করে এর শীর্ষে থাকা ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন সরকারকে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ বা হানাহানির পরিবেশ তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই পরিবেশ সৃষ্টিতে সহযোগিতা দেয়ার অর্থ হবে মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদীদের সম্প্রসারণকামিতা জোরদারের সুযোগ দেয়া, যা কোনোমতেই ঠিক হবে না। #

iqna


captcha