ইকনা সূত্রে জানা যায়, আলজাজিরার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে—গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর স্থানীয় প্রশাসন দাবি করেছে যে, এই ধ্বংসযজ্ঞ “সরকারি সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে অভিযান” এবং এটি ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ।
গত মাসে, এক হিন্দু চরমপন্থীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি অবমাননাকর বার্তা নিয়ে গুজরাটের এক গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই পোস্টে মুসলমানদের উদ্যোগে চালু হওয়া “আমি মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসি” প্রচারণাকে অবমাননা করা হয়।
এরপর কয়েকজন মুসলমানের বিরুদ্ধে পাথর নিক্ষেপ ও সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা আলজাজিরা মুবাশিরকে জানিয়েছেন যে, তাদের দোকানগুলো বৈধ জমিতে নির্মিত এবং তারা কোনো ধরনের সহিংসতায় অংশ নেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা মুছতাক মালেক জানান, তার পরিবারের ১৮টি দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছে, যদিও জমিটি তার দাদার নামে নিবন্ধিত ছিল এবং তারা প্রমাণস্বরূপ সব নথি দেখিয়েছেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে তারা এসব দোকান পরিচালনা করছিলেন ও নিয়মিতভাবে পানি ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেন।
তিনি বলেন, “হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষের অজুহাতে আমাদের দোকানগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো অপরাধ করিনি, কোনো ভিডিওতেও আমাদের দেখা যায়নি। আমরা সম্পূর্ণ নির্দোষ।”
তিনি আরও জানান, তিনি একটি শপিং সেন্টারের মালিক ছিলেন এবং এতে ১০ থেকে ২০ লাখ রুপি (প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার) ক্ষতি হয়েছে। যদিও তিনি বৈধ মালিকানা প্রমাণের নথি জমা দেন, কর্মকর্তারা তা গ্রহণে অনীহা দেখান এবং শেষে উপেক্ষা করেন।
৭০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মোস্তফা মালেক বলেন, তিনি কর্মকর্তাদের কাছে বারবার অনুরোধ করলেও তার দোকানটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “তারা আমাকে জানায় যে, যেভাবেই হোক দোকানটি ধ্বংস করা হবে।” তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই লাখ রুপি (প্রায় ২,২৫০ ডলার)।
তিনি বলেন, “আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব, কারণ কেউ আমাদের কথা শুনছে না। কর্মকর্তারা বলেন, তারা ওপর থেকে নির্দেশ পেয়েছেন।”
মুসলিম নেতা ও গুজরাটের সাবেক আইনপ্রণেতা সবির ক্ববলিওয়ালা জানান, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু ব্যবসায়ীকে সহায়তা করছেন যাতে তারা সুপ্রিম কোর্টে ধ্বংসের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।
তিনি বলেন, “এটি মুসলমানদের পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করার একটি প্রচেষ্টা, যেমন বিজেপি সরকার দেশজুড়ে করছে। তারা ‘দাঙ্গা দমন’-এর অজুহাতে দোকান ভাঙছে, অথচ দাঙ্গার নেপথ্যে তারাই।”
ক্ববলিওয়ালা আরও বলেন, “মুসলমানদের দোকান ও ঘরবাড়ি ভাঙার এই নীতি ঠিক সেইভাবে চলছে, যেমনভাবে ইসরায়েলি দখলদাররা গাজায় করে। বিজেপি সরকারের নীতি ও ইসরায়েলের নীতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।”
তবে গুজরাট রাজ্য সরকার দাবি করেছে, অভিযানে কেবল বেআইনি স্থাপনা লক্ষ্য করা হচ্ছে, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সঙ্ঘভি বলেন, “এই অভিযানে সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, এবং আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।”4310188#