IQNA

পবিত্র কুরআনে সহযোগিতা / পর্ব ১

কুরআনের দৃষ্টিতে পারস্পরিক সহায়তা ও সহযোগিতা

0:01 - October 14, 2025
সংবাদ: 3478244
ইকনা- ইসলাম তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছে যে তারা যেন সৎ ও কল্যাণকর কাজসমূহে একে অপরের সহায় হয়। যখন মানুষ পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে ও সমাজিকভাবে সংযুক্ত হয়, তখন তাদের মধ্যে ঐক্যের চেতনা জাগ্রত হয় এবং তারা বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা থেকে নিরাপদ থাকে।

যদি কোনো সমাজে সহযোগিতার মনোভাব প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সেই সমাজের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহায়তা এমন এক উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা সমাজের সর্বাঙ্গীন বিকাশ, অগ্রগতি ও উৎকর্ষে সহায়তা করে। এই কারণেই ইসলাম ব্যক্তিগত কাজের তুলনায় দলগত বা সমষ্টিগত কাজকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ, দলগত কাজ অধিক দৃঢ় হয় এবং ব্যক্তিবিশেষের শক্তিগুলো একত্রিত হলে একটি বৃহৎ শক্তি গড়ে ওঠে, যা কঠিন থেকে কঠিন কাজকেও সহজ করে তোলে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

যে ব্যক্তি মুসলমানদের কাজকর্মের প্রতি উদাসীন থাকে, সে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত নয়; এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে সাহায্যের জন্য আহ্বান করতে শুনেও সাড়া দেয় না, সে মুসলমান

নয়।
(من أصبح لا يهتم بأمور المسلمين فليس منهم ومن سمع رجلاً ينادي يا للمسلمين فلم يجبه فليس بمسلم)

অতএব, সমাজকল্যাণমূলক ও উপকারী কাজগুলোতে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করা প্রতিটি মুমিনের জন্য অপরিহার্য ও কর্তব্য। যে ব্যক্তি মুসলমানদের সমাজিক অগ্রগতির প্রতি কিংবা এমনকি কোনো একক মুসলমানের উন্নতির প্রতিও উদাসীন থাকে এবং কেবল নিজের কথা চিন্তা করেসে প্রকৃত মুসলমান নয়।

উদাহরণস্বরূপ, মানবসমাজে বরাবরই এক গুরুতর সমস্যা বিদ্যমান, আর তা হলো শ্রেণি বৈষম্যএই বৈষম্য সমাজকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেএকদিকে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ, যারা খাদ্য, বাসস্থান ও বস্ত্রের মতো ন্যূনতম চাহিদাগুলোও পূরণ করতে পারে না; অন্যদিকে এমন এক শ্রেণি, যাদের সম্পদ ও বিলাসিতা এত বেশি যে তারা নিজেদের সম্পদের হিসাবও জানে না।

কিন্তু একটি ন্যায়নিষ্ঠ ও ঈমাননির্ভর সমাজ হলো সেই সমাজ, যেখানে সকল মানুষ, তাদের যোগ্যতা ও সামর্থ্যের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, আল্লাহর নেয়ামতসমূহে অংশীদার হবে এবং পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে। কেননা সামাজিক জীবনের মূল উদ্দেশ্যই হলো পারস্পরিক সাহায্যের মাধ্যমে মানুষকে তার পরিপূর্ণতার দিকে পৌঁছে দেওয়া।

ইসলাম এই শ্রেণি বৈষম্য দূর করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি প্রণয়ন করেছেযেমন সুদহারাম, ইসলামী করব্যবস্থা, দান-খয়রাত, ওয়াকফ, সুদবিহীন ঋণ (قرض‌الحسنة), এবং আর্থিক সহায়তার বিভিন্ন রূপে উৎসাহ প্রদান। তবে এসবের পাশাপাশি দরিদ্রদের প্রয়োজন পূরণে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তাই সবচেয়ে কার্যকর পন্থাগুলোর একটি।

পরবর্তী পর্বগুলোতে তাওআউন’ (تعاون) তথা সহযোগিতার ধারণা, এর প্রয়োজনীয়তা, এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর তাত্ত্বিক ভিত্তি বিশ্লেষণ করা হবে।3494983#

 

captcha