
মরিয়াম ফ্রাংকয়েস বিবিসি ওয়ানের ‘দ্য বিগ কোয়েশ্চেন’ প্রগ্রাম ও সানডে মর্নিং লাইভের নিয়মিত অতিথি, টিআরটি ওয়ার্ল্ডের ফ্রেঞ্চ রাজনীতিবিষয়ক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে আলজাজিরার হেড টু হেড প্রগ্রাম প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেন। চ্যানেল ফোরে তিনি দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট মুসলিম ম্যারেজ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এ ছাড়া হাফিংটন পোস্ট, নিউজ নাইট, ফোর থট টিভি, বিবিসি নিউজ, ক্রোসটক, বিবিসি রেডিও, স্কাই নিউজসহ বহু টিভি ও সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন। ২০১৭ সালে ইউরোপের তরুণ নেতাদের মধ্যে ফোরটি আন্ডার ফোরটি-এর তালিকায় মনোনীত হন।
মরিয়াম বলেন, কেমব্রিজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে আমি ইসলাম গ্রহণ করি। এর আগে আমি একজন সংশয়বাদী ক্যাথলিক পরিবারের সদস্য ছিলাম, যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় রূপকে অস্বীকার করে। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে পবিত্র কোরআন আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। প্রথমে আমি তা রাগের বশে পড়তাম। কেননা তখন মুসলিম বন্ধুদের ভুল প্রমাণের চেষ্টার অংশ হিসেবে তা পাঠ করা হতো। পরে আরো খোলা মনে পড়া শুরু করি। পবিত্র কোরআনের প্রথম সুরা ফাতিহা আমাকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে খুবই নাড়া দেয়। তা ছাড়া খ্রিস্টবাদ সম্পর্কে আমার বহু সন্দেহের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তা পাঠ করে আমি হঠাৎ উপলব্ধি করি যে আমার ভাগ্য ও কর্মের পরিণতির জন্য আমি নিজেই দায়ী থাকব। ক্যান্ট, হিউম, সার্ত্রে ও অ্যারিস্টটলে ভাবনা একত্রিত করে পবিত্র কোরআন দীর্ঘকাল ধরে মানব অস্তিত্ব নিয়ে উত্থাপিত গভীর দার্শনিক প্রশ্নের জবাব দেয়। তা ছাড়া মৌলিক একটি প্রশ্ন ‘আমরা এখানে কেন’-এর উত্তরও প্রদান করে।
আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ভেবেছিল যে আমি অন্য কোনো ধাপ পার করছি ও অপরিবর্তিত হয়ে উঠব। তখনো বুঝতে পারছিলাম না যে পরিবর্তনটি আরো অনেক গভীর ছিল। কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাকে সমর্থন করে আমার সিদ্ধান্তগুলো বোঝার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। শৈশবের কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তাদের মাধ্যমে আমি ঐশী বাণীর সর্বজনীনতা উপলব্ধি করি। আমি নিজের পরিবর্তনকে কখনো সংস্কৃতিবিরোধী হিসেবে মনে করিনি।
আমি মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রথমে অনুধাবন করতে পারিনি। অনেক বিষয়কে আমার অদ্ভুত ও আচার-ব্যবহারকে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ের চেয়ে বাহ্যিক বিষয়ের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ আমাকে গভীরভাবে কষ্ট দিত। ইসলাম আমাদের ভালো কাজের বৈধতা ও মন্দ কাজ সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে। ইসলামে সব কাজের ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। আমি মনে করি, মহানবী (সা.)-এর কথাগুলো আমাদের সব কাজে ভারসাম্য তৈরির মৌলিক ভিত্তি।
মন্দ কাজের জবাবে ভালো ব্যবহার করবেন—এটাই মহানবী (সা.)-এর শিক্ষা। মনে রাখবেন, আল্লাহ ন্যায়বিচার পছন্দ করেন। তাই মানুষ আপনার বিরুদ্ধে অন্যায় কাজ করলেও আল্লাহর সামনে আপনার নৈতিকতাবোধ ও বাধ্যবাধকতা আছে। ন্যায় পন্থার পক্ষাবলম্বন করে কখনো তা সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। ইসলামের নিজস্ব সৌন্দর্য উপলব্ধি করুন। আপনি যখন নিজের মধ্যে, সমাজ ও মানবকল্যাণে ইসলাম অনুসরণ করবেন তখন এর সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। সূত্র : আরব নিউজ