'ইরান ইন্টারন্যাশনাল' চ্যানেল ইরানিদের বিরুদ্ধে মোসাদের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের হাতিয়ার

ইকনা  – বিভিন্ন দলিল প্রমাণে দখা যায় যে ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক চ্যানেল মোসাদের গোয়েন্দা প্রকল্পের একটি শাখা এবং এটি ইরানিদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশীদার।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন নেটওয়ার্ক যার অনুষ্ঠান লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত হয়। এই ফার্সি ভাষার নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটটি ইংরেজি এবং আরবি ভাষায়ও সক্রিয়। ইরান ইন্টারন্যাশনাল ইসরায়েল এবং তার সমর্থকদের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধের সময় এবং তার আগে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করেছিল। এই নেটওয়ার্ক বারবার মিথ্যা এবং বিকৃত সংবাদ প্রকাশ করে ইরানে বিভাজন এবং নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি, "হানজালা" হ্যাকার গ্রুপ ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক হ্যাক করেছে। পার্সটুডে-র এই নিবন্ধটিতে ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ‌ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে এই টিভি চ্যানেলের সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে:

প্রাপ্ত তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায় যে ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ককে একটি স্বাধীন মিডিয়া আউটলেট হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, বরং ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে মোসাদের একটি শাখা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নেটওয়ার্কটির ইরান-বিরোধী ব্যাপক ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যদিও ইহুদিবাদীরা এবং ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কের সাংবাদিকরা এর আগেও মোসাদের  সাথে তাদের এই সংযোগের কথা স্বীকার করেছেন।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের দৈনিক হারেৎজের একজন গোয়েন্দা বিশ্লেষক ইয়োসি মিলম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, "ইরান ইন্টারন্যাশনাল হলো মোসাদের মালিকানাধীন একটি নেটওয়ার্ক এবং মোসাদ যেসব তথ্য নিজেদের নামে  প্রকাশ করতে চায় না সেসব  তথ্য তারা এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রকাশ করে।"

একজন বিখ্যাত ইসরাইলি সাংবাদিক "বারাক রবিদ"ও স্বীকার করেছেন যে, "মোসাদ নিয়মিতভাবে ইরানের বিরুদ্ধে তথ্য যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হিসেবে ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।"

ইসরাইলে ইরান ইন্টারন্যাশনালের একজন সংবাদদাতা বাবাক ইসহাকি সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপদেষ্টা শহীদ জেনারেল সৈয়দ রাজি মুসাভির হত্যাকাণ্ডে এই নেটওয়ার্কের জড়িত থাকার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন।

এই দলিল ইরান ইন্টারন্যাশনাল এবং ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি যোগসাজস থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ

তবে, সম্প্রতি ইরান-বিরোধী নেটওয়ার্ক ইরান ইন্টারন্যাশনালের গোপন ইমেল হ্যাকিংয়ের পর, সাইবার গ্রুপ "জেমনামান" একটি নথি প্রকাশ করেছে যাতে দেখা যায়, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এই নেটওয়ার্কের জন্য একটি সরকারী প্রশংসাপত্র দেয়অ হয়েছে। প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে, এই নথিটি ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক এবং ইসরাইলের মধ্যে সরাসরি সংযোগের বড় প্রমাণ।

এই নথিতে ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও এর সাংবাদিকদেরকে সাহসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে যা থেকে এই নেটওয়ার্কের সাথে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। তাই নি:সন্দেহে বলা যায় ইরান ইন্টারন্যাশনাল চ্যানেল ইরানী জাতির বিরুদ্ধে হাইব্রিড যুদ্ধে মোসাদ গোয়েন্দা প্রকল্পের মিডিয়া শাখার অংশ।

ইরানি জনগণের প্রতি প্রকাশ্য শত্রুতার ক্ষেত্রে ইরান ইন্টারন্যাশনালের কিছু ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যেতে পারে:

ইরান-বিরোধী ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিত  করে বলা

ইরানের অভ্যন্তরের সমস্যাগুলিকে অনেক বড় করে তুলে ধরা

ইরানের চরিত্রে কালিমালেপন করা

ইরানি জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা

ইরান সরকারের বিরোধী মহল ও সন্ত্রাসীদেরকে সমর্থন করা

ইরানে অস্থির পরিবেশ তৈরি করা

ইরানি কর্মকর্তাদের সম্মান খর্ব করা

ইরানিদের ঐক্য বিনষ্ট করা

গাজা ও ইরানের জনগণকে হত্যাকারীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের মাঝে, ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ইহুদিবাদী ইসরাইলেল প্রধানমন্ত্রী "বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু"-এর সাথে এক সাক্ষাৎকার নেয় যার সঞ্চালক ছিলেন পুরিয়া জারাআতি। ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরুকারী এবং যার হাত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ও ইরানের জনগণের রক্তে রঞ্জিত সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এই সাক্ষাৎকারটি ইরান ইন্টারন্যাশনালের সাথে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

ইরান ইন্টারন্যাশনালের উপস্থাপক পুরিয়া জারাআতির সাথে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকার

তবে, অন্যদিকে, ইরান বিরোধী ইসরাইলের ইরান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্কের ব্যাপক অপপ্রচারে খোদ ইরানের সরকার বিরোধীদের অনেক সদস্যও বিরক্ত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে, পাহলভি শাসনামলের বিশেষ বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা "ফারামার্জ দাদরাস" সাম্প্রতিক একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে জোর দিয়ে বলেছেন যে ইরানের ক্ষমতাচ্যুত মোহাম্মদ রেজা শাহের পুত্র রেজা পাহলভি এই নেটওয়ার্কের সাহায্যে ইসরায়েলের হয়ে ইরানিদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে।

"মোহাম্মদ মানজারপুর", একজন প্রবাসী এবং বিবিসি পার্সিয়ানের সাবেক সম্পাদক, যার কিনা ইরানের বিরোধিতা করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তিনি সম্প্রতি এই যুদ্ধে ইরানের দেওয়া প্রতিটি শহীদের রক্তের জন্য ওই নেটওয়ার্কটিকে সরাসরি দায়ী করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে এই ইরান-বিরোধী মিডিয়ার কর্মীরা ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে।

"তাকি রহমানি", যিনি ইরানের বিরোধী দলের সদস্যদের একজন; তিনি সম্প্রতি বলেছেন যে ওই নেটওয়ার্কটি "ইসরায়েলের নিজস্ব কণ্ঠস্বর"।

১২ দিনের যুদ্ধে ইরান ইন্টারন্যাশনালের ইরান-বিরোধী ভূমিকার আগে, লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের পরিচালক শাহরাম হোমায়ুন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: " ইরান ইন্টারন্যাশনালের জন্য এটা লজ্জার যে, এই নেটওয়ার্কের বিশ্বাসঘাতকতা ইতিহাসে নজিরবিহীন।"#

পার্সটুডে