IQNA

ভারতীয় মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য

12:36 - May 10, 2022
সংবাদ: 3471833
তেহরান (ইকনা): ভারতীয় মুসলিমরা তাদের ভারতীয় সব বৈশিষ্ট্য এবং ভারতের প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরতম সম্পর্ক বজায় রাখা সত্ত্বেও—যেমনটি গুস্তাব লে বন তার ‘হাদারাতুল হিন্দ’ গ্রন্থে বলেছেন তারা একটি অনন্য জাতি।
তাদের স্বভাব-চরিত্র, মনোভব, জীবনধারা, ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি তাদের স্বকীয় একটি বিশেষ আত্মমর্যাদাবান জাতিতে পরিণত করেছে, যার মাধ্যমে ভারতের যেকোনো প্রান্তে মুসলিমদের খুব সহজেই পৃথক করা যায়। সেটা হলো এমন সেতুবন্ধ, যা আগের মুসলিমদের পশ্চিমের মুসলিমদের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে এবং দক্ষিণের মুসলিমদের উত্তরের মুসলিমদের সংযোগ রক্ষা করেছে। ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তারা বসবাস করার পরও যেন প্রতিবেশী এবং তাদের ভাষাও যেন অভিন্ন।
 
যদি সম্মানিত পাঠক কোনো দূর দেশ থেকে ভারতবর্ষ সফরের সুযোগ পান এবং তিনি ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে মেশেন, ভারতীয় সমাজের অন্তরাত্মায় প্রবেশ করতে পারেন, তবে তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন যে ভারতে আছে দুটি পৃথক সম্প্রদায়, দুটি পৃথক সভ্যতা, দুটি পৃথক সমাজ। এই ভিন্নতা জীবনের নানা দিকে প্রতিফলিত, নাগরিক জীবনের নানা ধারায় প্রকাশিত; এমনকি তাদের আচার-আচরণে প্রস্ফূটিত।
 
আপনি যদি আপনার কোনো মুসলিম বন্ধুর অতিথি হন—তবে এটা আবশ্যক নয় যে আপনাদের ভেতর পূর্বপরিচয় ও বন্ধুত্ব থাকতে হবে; বরং মুসলিমরা ভাই ভাই। পথিক মুসলিম স্থানীয় মুসলিমের অতিথি। আপনার সামনে প্রশস্ত দস্তরখান বিছিয়ে দেওয়া হবে এবং তাতে থাকবে বড় বড় পাত্র এবং থালা—প্রাচীন ভারতীয় রীতির ঠিক বিপরীত। থাকতে রুটিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ অন্যান্য খাবার। অতিথির প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ খাবার, যে খাবার জন্য আরো অতিথিদের ডেকে আনা হয়। হাতে হাতে সে খাবার বিতরণ করা হয়। যদি অতিথিরা তা পছন্দ করেন তবে তাদের জন্য হৃদয় প্রশস্ত, ঘর প্রশস্ত এবং দস্তরখান উন্মুক্ত। এই অভিজ্ঞতা লাভ করা যাবে ভারতের প্রতিটি অঞ্চলে এবং প্রতিটি মুসলিম পরিবারে। যদি না ইসলামী সভ্যতার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়, তারা প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বসবাস করে এবং তার সঙ্গে মিশে যায়। যখন কোনো মুসলিম রেল গাড়িতে অথবা অপেক্ষা-কক্ষে খাবার গ্রহণের ইচ্ছা করে, তখন যার জন্য আবশ্যক হলো আপনাকে খাবার গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো এবং বারবার অনুরোধ করা।
 
আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল তাঁর একজন ইংরেজ বন্ধুর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমরা এখানে তা বর্ণনা করছি।
 
ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড এলিসন লাহোর থেকে প্রকাশিত একটি বিখ্যাত ইংরেজি পত্রিকা ‘মুসলিম আউট লুক’-এ একটি ইসলামী ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি ইংল্যান্ড থেকে এসে বোম্বাইতে অবস্থান করছিলাম। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করত। বোম্বাইতে ধর্মীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। আমি ভারতের রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ শুরু করি। সেখানে কয়েকজন মুসলিমের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তাদের ব্যাপারে আমার ভেতর দ্বিধা কাজ করত। একবার একজন প্রসিদ্ধ মুসলিম নেতা আমাকে তার সঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি ইসলামী রীতি দস্তরখান বিছালেন এবং মুসলিম সমাজে প্রচলিত খাবার উপস্থিত করলেন। আমি মুসলিমদের পরিচ্ছন্নতা বোধ, সুরুচি ও সূক্ষ্ম অনুভূতি দেখে বিস্মিত হলাম। আমি মনে মনে বললাম, নিশ্চয়ই মুসলিমরা এমন জাতি, যারা তাদের সভ্যতার উন্নতি ঘটিয়েছে, শিষ্টাচারকে পূর্ণতা দিয়েছে, সুরুচি ও সূক্ষ্ম অনুভূতির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। নিশ্চয়ই এটা উচ্চ মূল্যবোধ ও জীবনমানের পরিচায়ক আর ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার জন্য উচ্চ মূল্যবোধ অপরিহার্য, যা তাদের সর্ব ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুণে গুণান্বিত করে। এভাবেই আমি ইসলাম ও ইসলামী জীবনধারা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই। আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় ইসলাম উচ্চ মূল্যবোধ ও উন্নত চিন্তাধারার ধারক এবং তা সব ধরনের দুর্বলতা, পঙ্কিলতা ও হীনতা থেকে মুক্ত। এই পরিচ্ছন্নতা, উচ্চ মূল্যবোধ ও উন্নত চিন্তা ধারা আলো ফেলেছে তার সভ্যতা-সংস্কৃতি, খাদ্য ও পোশাক রীতিতে। যেমন আলো ফেলেছে তার ইবাদত, আমল ও চরিত্রে। যে ব্যক্তি ইসলামকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে সে পূর্বের চেয়ে উন্নত জীবন লাভ করবে।
 
‘মুসলিমুনা ফিল হিন্দ’ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর
 
 
captcha