IQNA

লাইবেরিয়ায় মুসলমানের সংগ্রামী ইতিহাস

0:08 - September 08, 2022
সংবাদ: 3472426
তেহরান (ইকনা): পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার দাপ্তরিক নাম ‘দ্য রিপাবলিক অব লাইবেরিয়া’। দেশটির মোট আয়তন ৪৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। লাইবেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে আছে সিয়েরা লিওন, উত্তরে ঘানা, পূর্বে আইভরিকোস্ট এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত।
মনরোভিয়া দেশটির সর্ববৃহৎ শহর ও রাজধানী। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকের তথ্য (২০০৮ সালের পরিসংখ্যান) অনুসারে লাইবেরিয়ার ১২.২ শতাংশ মানুষ মুসলিম। আর ৮৫.৬ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। তবে স্থানীয় মুসলিমদের দাবি তারা জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ।
লাইবেরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে লাইবেরিয়ার বেশির ভাগ ভূমি মালি ও সোংগাই সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ১৮২২ সালে এই অঞ্চলে আমেরিকান ঔপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকা অঞ্চলটিকে আদিবাসী ও দাসপ্রথা বিলুপ্তির কারণে মুক্ত হওয়া দাসদের নির্বাসকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। ১৮৪৭ সালে লাইবেরিয়ার জনগণ আমেরিকার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। ১৮৬২ সালে আমেরিকা লাইবেরিয়ার স্বাধীনতা মেনে নেয়।
 
ইসলামের আগমন : ধারণা করা হয়, মুসলিম নাবিক ও দ্বিনপ্রচারকদের মাধ্যমে লাইবেরিয়াতে ইসলামের আগমন ঘটে। খ্রিস্টীয় দশম শতকে মরক্কোর মুরাবিতিন মুসলিমরা দক্ষিণ সাহারা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। আফ্রিকার বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক শায়খ আবদুল্লাহ বিন ইয়াসিনের আহ্বানে সেনেগালের শাসক ‘উর জাই’ ইসলাম গ্রহণ করেন। রাজ্যের বহু উপজাতি গোষ্ঠী রাজার অনুসরণ করে ইসলাম গ্রহণ করে। যাদের শীর্ষে ছিল মানদিংগো, ফুল্লানি ও সোনিনকিরা। এই গোত্রগুলো পরবর্তী লাইবেরিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রাখে।
 
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম : ফুল্লানি উপজাতি ‘ফুওতা ডিজালন’ উচ্চ ভূমিতে বসতি স্থাপন করে এবং বর্তমান নাইজেরিয়া একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। উত্তরের বেশ কিছু উপজাতি রাজ্য ও অঞ্চল ইসলামী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করে। মানদিংগো উপজাতি ছড়িয়ে পড়ল দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে। যে অঞ্চলটি ঘানা, ঘানা-বিসাউ, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া ও মালি নামে পরিচিত। মানদিংগো ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে ব্যবসা করতেন এবং তাঁরা ধর্মপরায়ণ মুসলিম হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তাঁরাই আধুনিক লাইবেরিয়ার উত্তরাঞ্চল এবং বিস্তৃত অঞ্চলে ইসলাম প্রসারে ভূমিকা রাখেন। ‘কিংডম অব ঘানা’-এর পতন হলে মুসলিম মানদিংগোরা মালি নামে একটি ছোট রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয় এবং তা ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল।
 
অন্যদিকে ফুল্লানি উপজাতি লাইবেরিয়ার নিকটবর্তী ফুওতা ডিজালনে একটি ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পৌত্তলিক রাজারা ইসলাম প্রচারে বাধা দিলে শায়খ ইবরাহিম মুসা ও শায়খ ইবরাহিম সুরি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং পরাজিত হন। ১৮৬৯ সালে আইনজ্ঞ সুলাইমান মানদিংগো ও সুনিনকি উপজাতিকে একত্র করে একটি ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু তা অল্পদিনেই ভেঙে পড়ে।
 
লাইবেরিয়া ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার শেষ চেষ্টা করেছিলেন ইমাম সামুরি। তিনি নাইজার নদীর তীরে একটি স্বাধীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেন এবং আইভরিকোস্ট ও লাইবেরিয়াকে তাঁর শাসনাধীন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৮২২ সালে স্বাধীন দাসদের প্রত্যাবর্তন এবং তাদের দ্বারা লাইবেরিয়ার স্বাধীনতা লাভের ঘটনা ইসলামী রাষ্ট্রের সম্ভাবনা শেষ করে দেয়। কেননা সাবেক দাসরা মার্কিন সামরিক বাহিনীর মদদে মুসলিমদের স্বাধীনতা সংগ্রাম স্তিমিত করে দিতে সক্ষম হয়। লাইবেরিয়াতে খ্রিস্টধর্মের প্রচারের লক্ষ্যে খ্রিস্টান ধর্মগুরুদের রাষ্ট্র কাঠামোতে যুক্ত করেছিল। ১৮৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত লাইবেরিয়ার সব প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিশপ (খ্রিস্টান ধর্মগুরু)।
 
বিংশ শতাব্দীতে মুসলিমরা : স্বাধীনতার পর থেকে মুসলিমদের শিক্ষা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। স্বাধীনভাবে ধর্ম ও জ্ঞানচর্চারও অনুমতি ছিল না তাদের। ১৯৬০ সালে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ভি এস টুবম্যান প্রথমবারের মতো মুসলিমদের ভোট দান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অধিকার দেন। ২০০২ সাল থেকে লাইবেরিয়ার মুসলিমরা হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
 
বর্তমানে লাইবেরিয়ার মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষা ও চিকিৎসা। দেশটিতে মাত্র একটি তিনতলা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যা মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশের সাধারণ ধারার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খ্রিস্টানরা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাতে অঘোষিতভাবে মুসলমানের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মুসলমানদের নিজস্ব কোনো হাসপাতালও নেই।
 
রাজধানী মনরোভিয়াতে ১৫ হাজার মুসলমানের বাস। তাদের জন্য মসজিদ আছে মাত্র পাঁচটি। সম্প্রতি ‘দ্য অ্যারাবিক অরগানাইজেশন ফর স্টাডিজ’ এবং ‘ইসলামিক অরগানাইজেশন ফর ইডুকেশন’ নামে দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। যারা অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দেয় এবং ইসলামী শিক্ষা প্রসারে কাজ করে।
 
     তথ্যঋণ : মুসলিম পপুলেশন ডটকম
 
 
captcha