IQNA

‘টিকটক’ অধিগ্রহণের আড়ালের কাহিনি ও তেলআবিবের পক্ষে গণমাধ্যমিক কার্যক্রম

0:01 - October 08, 2025
সংবাদ: 3478209
ইকনা- একটি গবেষণা কেন্দ্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজনীতি, বিনিয়োগ ও ইসরায়েলের স্বার্থের পারস্পরিক সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে প্রকাশ, মার্কিন বিলিয়নিয়ার ও ‘ওরাকল’ কোম্পানির মালিক ল্যারি এলিসন শুধু টিকটকের বৃহৎ অধিগ্রহণ চুক্তির প্রধান বিনিয়োগকারীই নন, বরং তিনি এই প্রকল্পকে তেলআবিবের অগ্রাধিকারগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

‘ড্রপ সাইট’ (DropSite) নামের একটি অনুসন্ধানী প্ল্যাটফর্মের প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ইমেইল ফাঁস থেকে জানা যায়, ল্যারি এলিসন সেই সময়ে জাতিসংঘে ইসরায়েলের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত রন প্রোসর (বর্তমানে জার্মানিতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত) এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন। তারা মার্কিন সিনেটর ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মার্কো রুবিওর ইসরায়েলপ্রীতি নিয়ে আলোচনা করেন।

এলিসন প্রোসরকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে রুবিও ইসরায়েলের এক শক্তিশালী মিত্র হবেন।

 

ড্রপ সাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যোগাযোগগুলি—যার সত্যতা স্বাধীন অনুসন্ধানকারী দলগুলোও নিশ্চিত করেছে—একটি সংগঠিত নেটওয়ার্ক প্রকাশ করে, যা এলিসন, ইসরায়েলি কূটনীতিক ও কিছু রিপাবলিকান রাজনীতিবিদের মধ্যে সক্রিয় ছিল। এই নেটওয়ার্কই পরবর্তীতে টিকটক চুক্তির পথকে এলিসনের পক্ষে সহজ করে তোলে।

 

 রাজনীতি ও পুঁজির যোগসূত্র

 

ইসরায়েলের নীতির একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত এলিসন কেবল প্রযুক্তি খাতের ধনকুবের নন; তিনি টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট–এরও অন্যতম বড় অর্থদাতা, যা গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের যৌথ কর্মপরিকল্পনার অংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে রুবিওর অবস্থান যাচাইয়ের উদ্যোগই পরবর্তীতে রুবিওকে টিকটকের এক প্রবল সমালোচকে পরিণত করে। তিনি টিকটককে “ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি” বলে উল্লেখ করেন—যা শেষ পর্যন্ত মার্কিন সরকারের টিকটক সীমিতকরণ ও নতুন চুক্তি প্রক্রিয়ায় প্রবেশের পথ তৈরি করে।

 

বৈশ্বিক গণমাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা

 

ড্রপ সাইটের বিশ্লেষণ অনুসারে, টিকটক চুক্তিটি এলিসন পরিবারের একটি বৃহত্তর মিডিয়া প্রভাব কৌশলের অংশ।

ল্যারি এলিসনের ছেলে ডেভিড এলিসন ইতিমধ্যেই সিবিএস নিউজ, সিএনএন, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও প্যারামাউন্ট–এর মতো বড় সংবাদমাধ্যম ও চলচ্চিত্র সংস্থাগুলো অধিগ্রহণের পরিকল্পনা চালাচ্ছেন।

এই প্রচেষ্টা সফল হলে এলিসন পরিবার বিশ্ব গণমাধ্যম শিল্পের অন্যতম প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হতে পারে।

 

ল্যারি এলিসন: প্রযুক্তি ধনকুবেরের চেয়েও বেশি কিছু

 

ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা এলিসন আজ শুধু সফটওয়্যার সাম্রাজ্যের মালিক নন; তিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী ও কৌশলগত প্রভাবক, যিনি ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের সংযোগস্থলে অবস্থান করছেন।

টিকটক অধিগ্রহণে তাঁর ভূমিকা প্রমাণ করে যে এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক চুক্তি নয়, বরং এটি জনমত ও তথ্যপ্রবাহ পুনর্গঠনের একটি রাজনৈতিক প্রকল্প।

 টিকটক চুক্তির বিবরণ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালের নির্বাহী আদেশ অনুসারে, চীনের বাইটড্যান্স কোম্পানিকে টিকটকের নিয়ন্ত্রণমূলক মালিকানা থেকে সরে দাঁড়াতে হয় এবং সেটি আমেরিকান বিনিয়োগকারীদের এক কনসোর্টিয়ামের হাতে হস্তান্তর করতে হয়।

এই কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছে ওরাকল, এলিসনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে যুক্ত আছেন মাইকেল ডেল (ডেল টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা) ও রুপার্ট মারডক (আমেরিকান–ব্রিটিশ মিডিয়া টাইকুন)।

প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির আওতায় টিকটককে তিন ভাগে বিভক্ত করা হবে—টিকটক আমেরিকা, টিকটক চীন, এবং অন্যান্য অঞ্চলের জন্য আলাদা সংস্করণ।

 

ওরাকল এই কাঠামোর আওতায় টিকটকের অবকাঠামো, অ্যালগরিদম নিরাপত্তা ও কনটেন্ট প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে।

যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, বিশ্লেষকদের মতে এর মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পরিসরে মার্কিন প্রভাব ও তথ্য নিয়ন্ত্রণ পুনর্গঠন করা।

 

 চুক্তির ইসরায়েলি দিক

 

ড্রপ সাইটের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টিকটক ইস্যুতে এলিসনের প্রবেশ ইসরায়েলকে এক নতুন হাতিয়ার প্রদান করেছে—যখন গাজায় যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দেশটি নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার মুখে।

টিকটক বর্তমানে এমন একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম যেখানে ফিলিস্তিনের বাস্তবতা ও ইসরায়েলের সমালোচনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে।

এখন এই প্ল্যাটফর্মের নিয়ন্ত্রণ এমন একজনের হাতে গেলে, যার ইসরায়েলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তা বাস্তবে ডিজিটাল পরিসরের ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে।4309270৩

captcha