IQNA

গত দুই বছরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে ২৩৩ মুসলিম আলেম ও ২০ জন খ্রিস্টান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নিহত

0:05 - October 08, 2025
সংবাদ: 3478212
ইকনা- গাজা উপত্যকায় গত দুই বছরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে সংঘটিত গণহত্যা মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, ইমাম, খতিব এবং উপাসনালয়গুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই দখলদার শাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনি সমাজের নৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে।

ইকনার (IQNA) সংবাদ সংস্থা আনাতোলি সূত্রে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ইসরায়েলি নীতিকে “নৃশংস” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, এই শাসন নানা কৌশল ব্যবহার করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ ধ্বংস এবং ফিলিস্তিনিদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব মুছে দিতে কাজ করছে।

 

এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নিরাপত্তা কর্মীদের হত্যা, মানবিক সহায়তা লুটে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহায়তা করা, এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও উপাসনালয়গুলোকে টার্গেট করা।

 

গাজার সরকারি গণমাধ্যম দফতরের পরিচালক ইসমাইল আল-সাওয়াবতা জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গণহত্যার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৩৩ জন মুসলিম আলেম, ইমাম ও ধর্মীয় নেতা এবং ২০ জন খ্রিস্টান নিহত হয়েছেন।

 

তিনি আরও জানান, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৮৩৫টি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস এবং ১৮০টিরও বেশি মসজিদ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এছাড়া, তিনটি বড় গির্জায় একাধিকবার বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

 

সাওয়াবতা বলেন, “যেসব ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা হয়েছে, তারা জাতীয় ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষায়, গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং সমাজে ধৈর্য ও সংহতি জাগিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন।”

 

তিনি আরও যোগ করেন, “ধর্মীয় নেতাদের ওপর এই পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনি সমাজের মনোবল দুর্বল করা, ধর্মীয় ও জাতীয় বক্তব্যকে নিঃশেষ করা—যে বক্তব্য ইসরায়েলি অপরাধ ও দখলদারিত্বকে উন্মোচিত করে। পাশাপাশি, এটি এমন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, যারা জাতিকে সংগঠিত রাখতে এবং ফিলিস্তিনের ধর্মীয় ও জাতীয় পরিচয় রক্ষা করতে সক্ষম।”

 

৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে যেসব বিশিষ্ট ধর্মীয় আলেমকে ইসরায়েলি হামলায় হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: ইউসুফ সালামা, আল-আকসা মসজিদের খতিব, ওয়ায়েল আল-জারদ, গাজার আল-উমারি জামে মসজিদের খতিব, ওয়ালিদ আওইজাহ, আন্তর্জাতিক মুসলিম আলেম ইউনিয়নের সদস্য এবং নায়েল মিসরান, গাজার ধর্মীয় নেতা।

 

ইসরায়েল খ্রিস্টান উপাসনালয় ও ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের প্রতিও কোনো দয়া দেখায়নি। দখলদার বাহিনীর বিমান হামলায় গাজার প্রধান গির্জাগুলো—যেগুলো শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল—লক্ষ্যবস্তু হয়। এতে বহু বেসামরিক মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

 

সাওয়াবতা জানান, গণহত্যার সময় ইসরায়েল অন্তত তিনটি প্রধান গির্জায় একাধিকবার বিমান হামলা চালিয়ে সেগুলোর বড় অংশ ধ্বংস করেছে। ঐতিহাসিক স্থাপনা ও সেবামূলক স্থাপনাগুলোও এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

ইসরায়েলের হামলার শিকার গাজার তিনটি প্রধান গির্জা হলো: সেন্ট পোরফিরিয়াস গ্রীক অর্থোডক্স চার্চ, হোলি ফ্যামিলি চার্চ এবং ইভানজেলিক্যাল ব্যাপ্টিস্ট চার্চ

captcha