IQNA

আনসারুল্লাহ নেতা হুথি: গাজায় নিজের লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল

0:01 - October 11, 2025
সংবাদ: 3478227
ইকনা- ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়্যেদ আব্দুলমালিক আল-হুথি বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি দখলদারদের ভয়াবহ অপরাধসমূহ আধুনিক যুগের এবং শতাব্দীর ভয়াবহতম অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করা যায়। তিনি বলেন, এই শাসন গাজায় নিজের কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
 ইকনা ও আল-মাসিরা টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও ‘তোফান আল-আকসা’ অভিযানের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে এক ভাষণে হুথি এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, তোফান আল-আকসা অভিযানের পেছনে যে প্রেক্ষাপট রয়েছে, তা হলো—প্যালেস্টাইনি জনগণের বিরুদ্ধে গত ৭৫ বছরের ইসরায়েলি অপরাধের ধারাবাহিকতা।
আনসারুল্লাহ নেতা জানান, “ইসরায়েলি শত্রুরা গাজার সাধারণ জনগণকে গণ-অনাহারে ফেলার চেষ্টা করেছে, এমনকি শিশুর দুধকেও নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, “শত্রু ইসরায়েল গাজার জনগণকে তৃষ্ণায় কষ্ট দিয়ে হত্যা করছে—এটি এক ভয়াবহ অপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে চরম বর্বরতা।”
আল-হুথি জানান, “ইসরায়েলি সেনারা গাজার পানির কূপ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, ফলে পানি সংগ্রহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি যারা পরিবারের জন্য পানি আনতে বের হয়, শিশুদেরও বাদ দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “তোফান আল-আকসার আগেই শত্রুরা প্যালেস্টাইনি আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা জোরদার করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল পুরো প্যালেস্টাইনের ওপর আধিপত্য স্থাপন এবং ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রকল্প বাস্তবায়ন।”
আনসারুল্লাহ নেতা সতর্ক করে বলেন, “আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ (নরমালাইজেশন) ইসরায়েলের জন্য পুরো অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের পথ খুলে দিয়েছে। এই নরমালাইজেশন আরব দেশগুলোর জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয়।”
তিনি উল্লেখ করেন, “কিছু উপসাগরীয় দেশ ইসরায়েলের জন্য গোয়েন্দা সহযোগিতার দরজা খুলে দিয়েছে, অথচ ইসরায়েল একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।”
আল-হুথি বলেন, “আমেরিকা, পশ্চিমা দেশ এবং জায়নিস্টদের যৌথ উদ্যোগের সম্প্রসারণ দেখিয়েছে যে, ‘তোফান আল-আকসা’ অভিযান শত্রুর জন্য কত বড়ো ভূমিকম্প ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু আরব শাসকের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি যোগ করেন, “শত্রু কোনো বন্দিবিনিময় চুক্তি ছাড়াই বন্দিদের মুক্ত করতে পারেনি, প্যালেস্টাইনি প্রতিরোধ ভাঙতে বা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের সব লক্ষ্যই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।”
হুথি বলেন, “দশকের পর দশক ধরে জায়নিস্টদের প্রশংসা ও প্যালেস্টাইনি সংগ্রামকে অস্বীকারের সাংস্কৃতিক প্রচারণা চালানো হলেও এখন সারা বিশ্বে, এমনকি আমেরিকাতেও, ইসরায়েলি শাসনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “লেবাননের প্রতিরোধ ফ্রন্ট প্যালেস্টাইনের পক্ষে সবচেয়ে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে কঠিনতম যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। ইরাক থেকেও সহায়তা অব্যাহত রয়েছে এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান নিরবচ্ছিন্নভাবে এই লড়াইয়ে পাশে রয়েছে।”
আনসারুল্লাহ নেতা আরও জানান, “ইয়েমেন থেকেও গাজার প্রতি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে, দূরত্ব ও জটিলতা সত্ত্বেও।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন গণসমাবেশ ও প্রতিবাদ আমরা আগে দেখিনি—যেখানে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ ইয়েমেনি জনগণ প্যালেস্টাইনের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে।”
হুথি জানান, “আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অভিযানগুলো প্যালেস্টাইনে পৌঁছানোর আগেই পাঁচ স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়। এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে স্থাপন করা।”
তিনি বলেন, “এই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অভিযানগুলো ইসরায়েলের বিমান চলাচলে প্রভাব ফেলেছে, বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে, এবং সমুদ্রপথে অবরোধ ইসরায়েলের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে—এমনকি এলাত (উম্ম আল-রাশরাশ) বন্দর সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে গেছে।”
সাইয়্যেদ আব্দুলমালিক আল-হুথি আরও জানান, “আমাদের সহায়ক অভিযানের সংখ্যা এখন ১,৮৩৫-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে ব্যালিস্টিক, ক্রুজ ও সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্ত।” 4309807#
 
captcha