IQNA

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ধারণা দু’ভাবে দেখা হয়— সমবায় প্রতিষ্ঠান এবং সমবায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।

14:22 - November 19, 2025
সংবাদ: 3478462
ইকনা- পবিত্র কুরআন কারিমে সহযোগিতা (تعاون) নীতিকে মানবজীবনের একটি মৌলিক নীতি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি শুধু সামাজিক বা নৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যদিও কুরআনে উল্লিখিত تعاون শব্দটি সরাসরি আধুনিক সমবায় অর্থনৈতিক কাঠামোর নির্দেশনা নয়, তবে এর ভিত্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য।

কুরআনের আলোকে সহযোগিতা (তাওয়ুন) / পর্ব

 

ইসলামের দৃষ্টিতে সহযোগিতা ও সমবায় অর্থনীতি

 


বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমবায় কোম্পানিগুলো কুরআনের أَوْفُواْ بِالْعُقُودِ” (চুক্তি-সম্মতি রক্ষা করো মায়েদা: ১) আয়াত এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর المؤمنون عند شروطهم” (মুমিনরা তাদের চুক্তির প্রতি বিশ্বস্ত) হাদিসের অধীনে বৈধতা পায়।

সমবায় ব্যবস্থার উদ্ভব

১৯তম শতাব্দীর শুরুর দিকে পুঁজিবাদী লিবারেল ব্যবস্থার নেতিবাচক ফলবিশেষ করে শ্রমিকদের শোষণ ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সমাজে মারাত্মক বৈষম্য তৈরি করে। এ অবস্থায় চিন্তাবিদরা শ্রমিকদের রক্ষায় এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সমবায় ভিত্তিক অর্থনৈতিক মডেল উপস্থাপন করেন।

এই ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, যা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গির থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ফাদাকারি, ইথার, ন্যায়বিচার, পরোপকার, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং সততাএ মূল্যবোধগুলো ছাড়া সমবায় অর্থনীতি সফল হতে পারে না।

সমবায় ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক সমবায় ইউনিয়ন (ICA) বিভিন্ন মডেল ও নীতি প্রণয়ন করলেও প্রত্যাশিত মাত্রায় বিশ্বব্যাপী সমবায় ব্যবস্থা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। বিশ্লেষকদের মতে, এর প্রধান কারণ হলোসমবায় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার মতো প্রয়োজনীয় গ্যারান্টির অভাব।

ইসলামী মূল্যবোধ ও সমবায় অর্থনীতি

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট, বিশেষ করে স্বার্থপর পুঁজিবাদী কাঠামোর দৌরাত্ম্য, দেখিয়েছে যে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সহযোগিতামূলক অর্থনৈতিক মডেল জরুরি হয়ে পড়েছে। ইসলামের শিক্ষায় ব্যক্তিস্বার্থকে বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণের মধ্যে বিস্তৃত করার আহ্বান রয়েছে।

ইসলামী বিশ্বদৃষ্টিতে কেউ যদি সহযোগিতামূলক কাজে যুক্ত হয়, তবে সে এটিকে ক্ষতি নয় বরং এক ধরনের স্থায়ী বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ তার বিশ্বাসদুনিয়ার পরেই আরেকটি চিরস্থায়ী জীবন রয়েছে, যেখানে এসব কাজের স্থায়ী ফল পাওয়া যাবে।

অর্থনৈতিক গবেষকদের দাবিপুঁজিবাদী দর্শনের সাথে ইসলামের বহু মূল্যবোধের অসামঞ্জস্য থাকলেও সমবায় অর্থনীতি কিছু সংশোধনের মাধ্যমে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গ্রহণযোগ্য অংশ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক সমবায় আন্দোলন যদি ইসলামের নির্দেশিত নৈতিক পরিসর অনুযায়ী ব্যক্তিস্বার্থের সীমা সম্প্রসারিত করতে পারে, তবে কম খরচে বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

 

captcha