বার্তা সংস্থা ইকনা: মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) কাছেও আলী (আ.) ছিলেন রাসূলের পরই সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয় নেতা। কারণ, তিনি মনে করতেন জ্যোতির্ময় এ মহামানব রাসূল (সা.)'র যোগ্যতম উত্তরসূরি বা তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মহাসম্মানিত নেতা। তাঁর মতে বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের সদস্যরাই ছিলেন শেষ নবী (সা.)'র উত্তরসূরী ও মানবজাতির পরবর্তী নেতা। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন মানব জাতির সর্বকালের সেরা শিক্ষক। আর তাঁর পরই মানব জাতির সবচেয়ে বড় শিক্ষক হলেন আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)। এ মহামানবের প্রতি মরহুম ইমামের অপরিসীম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা উচ্চারিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে বা উপলক্ষে। একবার তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: "অশেষ সালাম ও দরুদ বর্ষিত হোক রাসূলে আজমের প্রতি যিনি (হযরত আলী-আ.'র মত) এমন এক সৃষ্টিকে নিজের আশ্রয়ে রেখে প্রশিক্ষিত করেছেন এবং তাঁকে মানবতার পূর্ণতায় উন্নীত করেছেন। আমাদের এ মহান মাওলা বা নেতার প্রতি সালাম ও দরুদ যিনি আদর্শ মানব এবং জীবন্ত কোরআন। তাঁর নাম চিরকাল টিকে থাকবে, তিনি মানুষের জন্য মডেল ও আল্লাহর মহতী নাম বা ইসমে আযমের অন্যতম প্রকাশ।"
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) বিশ্বনবী (সা.)'র আহলে বাইতের জীবনধারা অনুসরণের চেষ্টা করেছেন। অত্যন্ত খোদাভীরু বা তাকওয়াশীল ও পরহিজকার হিসেবে এই ইমাম সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত আলেমদের চেয়েও ছিলেন অগ্রবর্তী। বিশ্বনবী (সা.)'র বংশধারায় জন্ম নেয়া এই মহান আলেম আধুনিক যুগেও বিশ্বের প্রধান পরাশক্তির জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রবল সংগ্রামের ধারা সৃষ্টি করে তাগুতি শক্তিগুলোর ঘুম হারাম করেছিলেন।
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) নিজ জীবনকে ইমাম আলী (আ.)র আদর্শের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তুলতে সফল হয়েছিলেন বলেই বিশ্বের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর মতে, আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ছিলেন ইসলাম ও কোরআনের বাস্তব প্রকাশ। উন্নত জীবনের সব দিক বা ক্ষেত্রেই (রাসূল সা.'র পর) আলী (আ.)কে মানুষের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ বা দৃষ্টান্ত বলে মনে করতেন এই মহান ইমাম। যেমন, জোহদ বা সংযম সাধনায়, জ্ঞান ও প্রজ্ঞায়, দূর্বল ও বঞ্চিতদের প্রতি দয়ায়, যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ভিকতায় ইত্যাদি ক্ষেত্রসহ উন্নত মানব জীবনের সব দিকেই আলী (আ.)-কে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা যায়। যেখানে কোমলতা দরকার সেখানে কোমলতায় এবং যেখানে কঠোরতার দরকার সেখানে কঠোরতায়ও তিনি ছিলেন আদর্শ বা দৃষ্টান্ত। মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) দৃষ্টিতে এরকম হাজারও মহান দিক নিয়ে গড়ে উঠেছিল হযরত আলী (আ.)'র মহান ব্যক্তিত্ব।
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) মতে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)'র মহাবিস্ময়কর ব্যক্তিত্বে কোমলতা ও কঠোরতার মত বিপরীতমুখী নানা দিকের অপূর্ব সংমিশ্রণ ছিল লক্ষ্যনীয়। তিনি ছিলেন একাধারে জাহেদ বা সংযম-সাধক, আরেফ বা খোদাপ্রেমের গভীর ও সূক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারী এবং ধর্মের শত্রুদের মোকাবেলায় অপরাজেয় যোদ্ধা। তিনি জ্ঞান ও জিহাদি তৎপরতায় ব্যস্ত থাকার মাঝেও চালিয়ে যেতেন অর্থনৈতিক তৎপরতা এবং এর পাশাপাশি সক্রিয় থাকতেন রাষ্ট্র পরিচালনায় ও নীতি নির্ধারণে। এরি ফাঁকে সময় দিতেন পরিবারকে ও সন্তানকে প্রশিক্ষিত করার কাজে। আল্লাহর দরবারে গভীর রাতে নির্জন পরিবেশে এবাদত, মুনাজাত ও কাকতি-মিনতি কিংবা গভীর খোদাপ্রেমের আলাপচারিতা তাঁকে বিচ্ছিন্ন করেনি সমাজ থেকে।
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) মতে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা পদের চাকচিক্য কখনই বিন্দুমাত্র আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারেনি ইমাম আলী (আ.)'র হৃদয়ে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা পদ তাঁর কাছে কখনও লক্ষ্য ছিল না, ছিল নানা মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম মাত্র। তিনি ইবনে আব্বাসকে বলেছিলেন, "তোমাদের শাসক হওয়া আমার কাছে একটি জুতার চেয়েও কম মূল্যের বিষয়, অবশ্য এই শাসনের মাধ্যমে আমি যদি তোমাদের মধ্যে সত্য বা ইসলামকে প্রতিষ্ঠা ও বাতিল তথা অন্যায্য আইন ও ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করতে পারি তা ভিন্ন কথা।"
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) মতে, হযরত আলী (আ.)'র শাসন-ব্যবস্থা থেকে উপনিবেশবাদীদের এ ধারণার অসারতা ফুটে উঠে যে রাজনীতি ও ধর্ম পৃথক। মুসলমানদের সামাজিক জীবনের ওপর ধর্মের প্রভাবকে বিলুপ্ত করার জন্যই উপনিবেশবাদীরা ও ইসলামের শত্রুরাই এই প্রতারণাপূর্ণ বা অসুস্থ ধারণা প্রচার করছে বলে মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) মনে করতেন। তিনি প্রশ্ন করেছেন: রাসূল (সা.)'র যুগে এবং আমিরুল মুমিনিন (আ.)'র যুগে কি রাজনীতি ধর্ম থেকে পৃথক ছিল?"
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) দৃষ্টিতে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছিল হযরত আলী (আ.)'র শাসন-ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। বায়তুল মালের সম্পদ সবার মধ্যে সমান মাত্রায় বণ্টণের নীতি- যা ছিল রাসূল (সা.)'রই সুন্নাত তা পুনরায় চালু করায় হযরত আলী (আ.)'র প্রশংসা করেছেন মুসলিম ও অমুসলিম অনেক মনীষী। তাঁর ৫ বছরের শাসনকালকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ বলে উল্লেখ করেছেন মরহুম ইমাম।
ইমাম আলী (আ.)'র জীবন থেকে অন্যায়, জুলুম, শোষক ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন ও অকুতোভয় সংগ্রামের শিক্ষা নিয়েছেন এই যুগের মহানায়ক ইমাম খোমেনী (র.)। তিনি একে ধর্মীয় দায়িত্ব বলে মনে করতেন। ইমাম খোমেনী (র.) ইমাম আলী (আ.)'র মতই বাধা-বিঘ্ন আর সংকটের পাহাড় দেখে হতাশ হতেন ন, আবার বিপুল অনুসারী দেখেও গর্বিত হননি। কঠিনতম মুহূর্তেও ইমাম থাকতেন প্রশান্ত ও অবিচল। তাই জনগণ গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল আল্লাহর প্রতি তার এই গভীর আস্থাশীলতায়।
কঠোরতা ও কোমলতার প্রচণ্ড সংমিশ্রণ ঘটেছিল এ যুগের এই মহানায়কের চরিত্রেও। তাই পরাশক্তিগুলোর হৃদয়ে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছিলেন আলী (আ.)'র অনুসারী এই ইমাম যিনি নির্ভিক চিত্তে গভীর আস্থা নিয়ে বলতেন: আমেরিকা আমাদের কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। অন্যদিকে গভীর স্নেহের ধারায় ধন্য করতেন যুব সমাজ ও শিশুদেরকে। ইরাকে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ইমাম খোমেনী (র.) প্রতি রাতেই আমিরুল মুমিনিন (আ.)'র পবিত্র মাজার জিয়ারত করেছেন এবং এক রাতের জন্যও এই জিয়ারত ত্যাগ করেননি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ভাষায় ইমাম খোমেনী (র.)'র চরিত্রের মধ্যে সমন্বিত হয়েছিল ঈমানী শক্তি ও সৎকর্মের, নৈতিক সাহসিকতার সাথে প্রজ্ঞার, আধ্যাত্মিক পবিত্রতার সাথে বিচক্ষণতার, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বের সাথে স্নেহ ও দয়া-মায়ার...।"
ইমাম খোমেনী (র.) মনে করতেন, আমিরুল মুমিনিন (আ.)'র প্রশংসা পুরোপুরি ব্যক্ত করা কখনও কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত জ্ঞানী, গুণী, দার্শনিক, আরেফ ও কবিরা তাঁর সম্পর্কে যা বলে গেছেন, তা এ মহাপুরুষের প্রকৃত ব্যক্তিত্বের অতি সামান্য দিক মাত্র।
ইমাম খোমেনী (রঃ)এর দৃষ্টিতে মুক্তি ও স্বাধীনতা
ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার সময় "স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামী গণ-শাসন ব্যবস্থা" ছিল ইরানি জনগণের এবং তাদের অবিসংবাদিত নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ)'র অন্যতম প্রধান শ্লোগান। ১৯৭৯ সালে বিপ্লব বিজয়ের পরই ইরানের রাজনৈতিক ও আইনী কাঠামোয় স্বাধীনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। পর পর বেশ কয়েকটি গণভোট ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দেশটিতে গড়ে ওঠে স্বাধীন রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র ও বিভিন্ন নাগরিক প্রতিষ্ঠান।
এভাবে ইসলামী বিপ্লবের আদর্শে উজ্জ্বীবিত ইরান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নানা বাধা ও ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও স্বাধীনতা ও মুক্তির আদর্শ বাস্তবায়নে সক্রিয় থেকেছে এবং স্বৈরাচারি সরকারের পতন ঘটানোর পর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। আর এ কারণেই ইসলামী ইরান আজ একটি স্বাধীনচেতা ও মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বে অনন্য গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত।
ইরানের মুসলিম জাতির বিপ্লবী আদর্শ বর্তমানে নিপীড়িত ও স্বৈরশাসনের শিকার মুক্তিকামী জাতিগুলোর জন্য অনুকরণীয় মডেল। ইরানের ইসলামী গণ-শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় শাসনেরও এক অনন্য আদর্শ। "ধর্ম মেনেই স্বাধীনতা অর্জন" ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আন্তর্জাতিক বার্তা। অথচ সমাজবাদী ও লিবারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থার কর্তৃত্বাধীন আধুনিক বিশ্ব-ব্যবস্থায় ধর্মীয় আইন-ভিত্তিক সমাজ-ব্যবস্থার কথা কেউ কল্পনাও করেনি।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বার্তা মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে জাগরণের জোয়ার বইয়ে দেয়। মুক্তিকামী আন্দোলনগুলো ইসলামী জাগরণে রূপান্তরিত হয়। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বেলজিয়ামের বিশিষ্ট গবেষক ক্রিস জনসন বলেছেন, "ইরানের ইসলামী বিপ্লব তার বিজয়ের লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিকামী ও স্বাধীনচেতা জাতিগুলোর আদর্শ। এমনকি এ বিপ্লব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতেও নন্দিত হচ্ছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিকামীতার ক্ষেত্রে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এই মহান বিপ্লবের ফলে জাতিগুলো তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও মুক্তিকামী আন্দোলনে আরো অবিচল বা দৃঢ়-সংকল্প হয়ে উঠছে।"
ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের পাশাপাশি স্বাধীনতা বা মুক্তি বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। স্বাধীনতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিমা মতাদর্শের মত একপেশে নয়। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, "মহান আল্লাহ তোমাদের স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন, তাই কারো গোলাম বা দাস হয়ো না।" স্বাধীনতা ধীরে ধীরে অর্জিত কোনো বিষয় নয়। বরং মানুষের স্বাধীনতা মহান আল্লাহর এমন এক উপহার যা মানুষের প্রকৃতির সাথে মিশে রয়েছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা মানুষের ধর্মীয় ও প্রকৃতিগত অধিকার। ইসলামে স্বাধীনতা বেঁচে থাকার অধিকার ও জীবন যাপনের অধিকারের মতই গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ চিন্তা, বিশ্বাস ও আদর্শ বেছে নেয়ার ব্যাপারে স্বাধীন এবং স্বাধীন মতের অধিকারী ব্যক্তির সকল অধিকারকেও স্বীকার করে। এই ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষ তার বিবেক-বুদ্ধি ও যোগ্যতার আলোকে জীবনের পথ অতিক্রম করার ব্যাপারেও সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে ইসলাম স্বাধীনতার কিছু সীমারেখা টেনে দিয়েছে যাতে তা মানুষের বিভ্রান্তি ও অধপতন কিংবা অন্যদের ক্ষতির মাধ্যম না হয় বা অন্যদের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ না করে।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (রঃ) স্বাধীনতা ও মুক্তিকামীতাকে ইসলামী বিপ্লবের ভিত্তি বলে উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন, " মানুষের জীবন তখনই মূল্যবান যখন তা হবে স্বাধীন এবং আমরা পরাধীন জীবনের কোনো মূল্য আছে বলে মনে করি না।" তাই তিনি স্বাধীনতা অর্জন ও তা রক্ষা করাকে প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব বলে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ) বলেছেন, " স্বাধীনতা এক খোদায়ী আমানত যা মহান আল্লাহই আমাদের দান করেছেন।"
অন্য কথায়, অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা বা বিশ্বাসঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়। মহান এই ইমাম অন্যত্র বলেছেন, " আমাদের জাতি বিপ্লব করেছে এবং এ বিপ্লবকে এগিয়ে নেয়া গোটা মানব জাতির যৌক্তিক দায়িত্ব।... ... জনগণ তাদের প্রাথমিক অধিকার দাবি করছে। স্বাধীন থাকা ও নিজের কথা স্বাধীনভাবে বলা মানুষের প্রাথমিক অধিকার।"
ইমাম খোমেনী (রঃ) স্বাধীনতা প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার বক্তব্য তুলে ধরে বলেছেন, "মানবাধিকারের ঘোষণায়ও বলা হয়েছে, যে কোনো জাতির প্রত্যেক ব্যক্তি তার মতামত তুলে ধরার ব্যাপারে স্বাধীন এবং প্রত্যেক জাতি নিজের ভাগ্য নিজে নির্ধারণ করার অধিকার রাখে- আর এটা হচ্ছে মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার বা মানবাধিকার।" তাই মার্কিন সরকারসহ মানবাধিকারের ধ্বজাধারী যেসব পশ্চিমা সরকার ইরানি জনগণের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র করছে সেগুলো অব্যাহত রাখার বা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র পাকানোর কোনো অজুহাত বা যুক্তি নেই।
ইমাম খোমেনী (রঃ)'র মতে মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হলে তারা বিভ্রান্ত হয় এবং অধঃপতনের শিকার হয়। বিপ্লব ও পরিবর্তনগুলোর মধ্য দিয়ে মানুষের যে বিকাশ, উন্নয়ন বা পরিপক্কতা ঘটে তা স্বাধীনতার ছায়াতলেই সম্ভব। মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ) স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরার পর মুক্ত বা স্বাধীন চিন্তার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, "চিন্তার স্বাধীনতার অর্থ মানুষ স্বাধীনভাবে বা নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করবে। জ্ঞানগত বিষয় বা বৈজ্ঞানিক বিষয়ে স্বাধীন চিন্তার ফল হয় এক ধরনের এবং আর পূর্বানুমান বা বিশেষ অবস্থানের ভিত্তিতে ওই বিষয়ে চিন্তার ফল হয় অন্য ধরনের।"
মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ)'র মতে, নৈতিকতার বিরোধী ও লাগামহীন খেয়াল-খুশী উদ্ভুত স্বাধীনতা তথা পাশ্চাত্যের কথিত স্বাধীনতাকে মানুষের জন্য ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক। তাঁর মতে, এ ধরনের নিয়ম-বহির্ভূত স্বাধীনতা অন্তসারশুন্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, " পাশ্চাত্য কল্যাণকর বা ভাল কিছু আমাদেরকে দেয় না। পশ্চিমারা ইরান ও প্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য যে স্বাধীনতা দিতে চায় বা যেসব বিষয়ে স্বাধীনতা দিতে চায় সেগুলো আমাদের জাতি ও যুব সমাজের জন্য ধ্বংসের মাধ্যম।" ইমাম খোমেনী (রঃ)'র দৃষ্টিতে রাষ্ট্র জনগণের নাগরিক স্বাধীনতার পথে বাধা নয়, বরং মানুষের স্বাধীনতাগুলো মানবাধিকার ও ইসলামী আইনের আওতায় অর্থবোধক হয়। তাই নবী-রাসূলগণের শিক্ষার আলোকে ইরানে স্বাধীনতার নানা দিকের বিকাশ ঘটানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। যেমন, সামাজিক স্বাধীনতা, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা, নারীর ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা।
মানুষের পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ইমাম খোমেনী (রঃ) স্বৈরাচারী ও পাশ্চাত্যের ক্রীড়নক মুসলিম সরকারগুলোর কঠোর সমালোচনা করতেন। আর তাই তিনি ওইসব দেশের জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য জেগে উঠতে বলতেন। মরহুম ইমাম খোমেনী (রঃ)'র ইন্তেকালের ২২ বছর পরও তাঁর ওইসব বার্তার প্রতি জাতিগুলো ও বিশেষ করে আরব বিশ্বের জনগণের সাড়া প্রদান অব্যাহত রয়েছে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি জালেম শাসক, শোষক ও দখলদার শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে মিশর, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন ও বাহরাইনের মত দেশগুলোর জনগণ জেগে উঠেছে।
ইমাম খোমেনী (রহ.)এর চিন্তা-দর্শন ও জীবন
বিশ্বের আধিপত্যকামীদের বুকে কাঁপন সৃষ্টিকারী অবিসংবাদিত নেতা ইমাম খোমেনী (রহ.)'র মৃত্যুর খবর স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়েছিল। বিবিসি রেডিও ইমাম খোমেনীর মৃত্যুর খবর দিতে যেয়ে বলেছিল, আজ এমন এক ব্যক্তি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন,যার মৃত্যুতে পাশ্চাত্যের অনেকেই প্রশান্তিতে ঘুমোতে পেরেছেন। সেদিন অনেকেই এটা ভেবেছিল যে, ইমাম খোমেনী (রহ.)'র ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে তার চিন্তা-চেতনা ও আদর্শেরও মৃত্যু ঘটবে এবং বিশ্বব্যাপী অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধের ধারা সূচিত হয়েছে তা স্তব্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ইমামের ইন্তেকালের পর দুই দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তার চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের প্রভাব কমেনি বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইমাম খোমেনীর চিন্তা ও আদর্শ ইরানসহ গোটা বিশ্বকেই প্রভাবিত করেছে।
সুদানে ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর হামেদ মালাকুতি বিশ্বব্যাপী ইমাম খোমেনী (রহ.)'র প্রভাব সম্পর্কে বলতে যেয়ে নিজের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, একদিন অফিসে বসে আছি। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল, মোবাইলের ওপাশ থেকে এক তরুণ কথা বলছিল। সুদানি ঐ তরুণটি নিজের পরিচয় দিতে যেয়ে বলল, আমি খোমেনী বলছি। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, আপনার নামটি আরেক বার বলবেন প্লিজ? ঐ তরুণ আরেকটু জোরালো কন্ঠে বললেন, আমার নাম খোমেনী। এরপর ঐ তরুণ আমার সাথে দেখা করে জানায় যে, তার বয়স ২৮ বছর, সুদানের রাজধানী খার্তুমে ১৯৮২ সালে সে জন্ম গ্রহণ করেছে। কৃষ্ণাঙ্গ ঐ তরুণের বাবা, ইমাম খোমেনী (রহ.)'র চিন্তা-চেতনা ও আদর্শে এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন যে, তিনি তার সন্তানের নামটি পর্যন্ত রেখেছিলেন খোমেনী এবং এজন্য তিনি গর্ববোধ করতেন।
খোমেনী নামের ঐ তরুণ ইরানের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনাদের সৌভাগ্য যে আপনারা ইমাম খোমেনী (রহ.)'র মতো একজন নেতা পেয়েছেন। আপনারা সত্যের পথে পথচলা অব্যাহত রাখুন। মরহুম ইমাম খোমেনী এবং ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষের গর্ব। ইমাম খোমেনী (রহ.) দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেও সারা বিশ্বে হাজার হাজার খোমেনীর জন্ম হয়েছে, তারা ইমাম খোমেনীর চিন্তা-চেতনাকে লালন করছে এবং ইমামের নীতি-আদর্শকে সামনে রেখে পথ চলা অব্যাহত রেখেছে বলে ঐ তরুণ মন্তব্য করেছে। আসলে শুধু সুদান নয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ইমাম খোমেনী (রহ.)-র চিন্তা ও আদর্শ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। গোটা বিশ্বের স্বাধীনচেতা মানুষগুলো সত্যের পথে চলার ক্ষেত্রে নতুন করে সাহস পেয়েছে।
বিশ্বে এখন ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই এই পরিস্থিতিকে ইমাম খোমেনী (রহ.) অবদান বলে মনে করেন। ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির প্রবনতা দেখে মরহুম ইমাম খোমেনীর সেই বক্তব্যটি খুব মনে পড়ছে। তিনি বলতেন, বিশ্বের জাতিগুলো আজ চিরন্তন ঐশী মূল্যবোধের তৃষ্ণায় কাতর হয়ে আছে, ঐশী মূল্যবোধগুলোর সাথে তাদের পরিচিত করানো গেলে তারা সে দিকেই ঝোকে পড়বে। মার্কিন লেখক রবার্ট মাকওয়ান্দ একবিংশ শতাব্দীকে আধ্যাত্মিকতা অনুসন্ধানের শতাব্দী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন, বর্তমান শতাব্দী ধর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হবার শতাব্দী এবং এই শতাব্দীতে আর কোন সামাজিক শক্তিই ধর্মের মতো এত বেশী প্রভাবশালী নয়।
ইমাম খোমেনী (রহ.) ধর্মীয় দায়িত্ববোধ থেকেই ঐতিহাসিক ও মহা সংগ্রামের ময়দানে প্রবেশ করেন এবং সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত রীতি-নীতি সংশোধনের উদ্যোগ নেন। তিনি ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলেন এবং সবাইকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর আহ্বান জানান। ইমাম খোমেনীর চিন্তা-চেতনা ও দর্শন. সমাজের বিশেষ কোন শ্রেণী বা গোষ্ঠী কেন্দ্রীক ছিলো না। তিনি গোটা বিশ্বকে নিয়ে ভাবতেন। গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য সঠিক পথ তুলে ধরেছেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে মানুষ গড়ে তোলার ও সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন। তিনি নিজে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করে সবার সামনে বাস্তব উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। ইমাম খোমেনী(রহ.) তার ওসিয়তনামায় যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তা মেনে চললে মানুষ তার প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে।
ইমাম খোমেনী (রহ.)'র দৃষ্টিতে, মানব জাতি পবিত্র কোরআনের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে এবং যোগ্য ও পুণ্যবানদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্পনের মাধ্যমে উন্নয়ন ও অগ্রগতির শিখরে আরোহন করতে পারে। তিনি ধর্ম ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থাকে আদর্শ ব্যবস্থা হিসেবে তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থায় জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি ও আগ্রাসনের কোন স্থান নেই। কাজেই ধর্ম ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষমতালোভীদের স্বার্থকে মারাত্মকভাবে বিপদগ্রস্ত করে। এ কারণে স্বার্থান্বেষী মহল সব সময় ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছে এবং এখনও করছে। ইমাম খোমেনী (রহ.) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন এবং স্বনির্ভর হবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে তার সাথে ইসলাম এমনকি কোন একত্ববাদী ধর্মেরই বিরোধ নেই। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যখন ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহৃত হয় তখনই এর সাথে ইসলামের বিরোধিতার প্রসঙ্গ আসে।
নিজের ভবিষ্যত নির্ধারণে যে, খোদ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তা ইমাম খোমেনী(রহ.) মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। ইমাম খোমেনীর মতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামত, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে। এ কারণে তিনি দেশের মানুষকে সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং সরকারের কাজ তদারকির আহ্বান জানাতেন। তিনি যোগ্য ও নীতিবানদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করার উপর সর্বদা গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইমাম খোমেনী(রহ.) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন শক্তির উপাসনা করা থেকে সরে আসাকেই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন বলে মনে করতেন।
ইমাম খোমেনী (রহ.)'র চিন্তাধারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ইস্পাত কঠিন দূর্গ গড়ে উঠেছে। লেবাননও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসরাইলের বিরুদ্ধে লেবাননীদের সংগ্রামের কারণ তুলে ধরতে যেয়ে লেবাননের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ শেখ মোহাম্মদ বলেছেন, আমরা আশাবাদী মন নিয়ে কোন ভয়-ভীতি ছাড়াই যে সংগ্রাম করছি তার পেছনে রয়েছে ইমাম খোমেনীর গঠনমূলক চিন্তা-দর্শন। যখনই মানুষের অধিকারের প্রসংঙ্গ এসেছে তখনি ইমাম খোমেনী গোটা বিশ্বের মানুষের অধিকারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইমাম খোমেনী (রহ.) সবার সামনে এটা তুলে ধরেছেন যে, বিভিন্ন জাতি যদি মানবীয় মূল্যবোধ রক্ষা করে চলে এবং অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়,তাহলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের জুলুম-অত্যাচার আর অব্যাহত রাখতে পারবে না। তিনি মনে করতেন, বিশ্বের জাতিগুলো যদি বিজাতীয়দের কাছে আত্মসমর্পনের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে আসতে পারে তাহলে তারা ভবিষ্যতে সম্মান ও মর্যাদার স্বাদ আস্বাদন করতে সক্ষম হবে।
ইমাম খোমেনী (রহ.)'র চিন্তা ও দর্শন স্থান ও কালের গন্ডিকে অতিক্রম করে বিশ্বের সর্বত্র স্বাধীনচেতা মানুষদের এখনও অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বর্তমান যুগের মানুষকে ভ্রান্ত পথ ছেড়ে সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সুস্পষ্ট ভাবে। সুইজারল্যান্ডের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আহমাদ হুবার বলেছেন, বর্তমান যুগের মানুষ যে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে সে ব্যাপারে ইমাম খোমেনী (রহ.) সবাইকে বিপদ সংকেত দিয়েছেন। মহরহুম ইমাম খোমেনী (রহ.) কেবল একজন আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই ছিলেন না একই সাথে তিনি রাজনৈতিক দিক দিয়েও ছিলেন অত্যন্ত দূরদর্শী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। তিনি সাম্রাজ্যবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে ইসলামী বিপ্লব সফল করেছেন এবং ইসলামী ইরানকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করেছেন। শত্রুদের ধারণার বিপরীতে ইমাম খোমেনীর আদর্শ ও চিন্তাধারা ক্রমেই বিস্তার ঘটছে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ক্রমেই কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ইমাম খোমেনী (রহ.)'র দিকনির্দেশনাগুলো আমরাও আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো, এই প্রত্যাশা করছি।
হাজার বছরের বিস্ময় ইমাম খোমেনী (র.)
কত যে তারার মহাসমুদ্র কেটে কেটে অবশেষে
নয়া আফতাব জাগলো ঘুমের দেশে
নীল ঝরোকায় রূপালী ঝলক-বিছানায় জেগে দেখি
এ কোন্ ইমাম ডাকছে আমায় একি!
রঙীন মিনারে আজান হেঁকেছে এ কোন্ মুয়াজ্জিন!
দুয়ারে আমার নওল আশার হাসছে নতুন দিন!
হ্যাঁ! আমরা একজন মহান ইমামের কথা বলছি। পবিত্র ইসলাম ধর্ম নবী-রাসূল ও পবিত্র ইমামগণের পরও বিশ্বকে এমন কয়েকজন ইমাম বা মহাপুরুষ ও সংস্কারক উপহার দিয়েছে যে তারা প্রকৃত ইসলামের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে মানব ইতিহাসের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করা হয়। বিশ্ব ও ইসলামের ইতিহাসের হাজার বছরের বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত এমনই এক চিরস্মরণীয় মহাপুরুষ হলেন মরহুম ইমাম আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী (র.) । জনগণের সমর্থন নিয়ে ইসলামী আইন ও ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে আধুনিক যুগেও যে একটি জনকল্যামূলক রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব এবং খালি হাতেই পরাশক্তিগুলোর প্রভাবকে নিজ দেশ থেকে প্রায় পুরোপুরি নির্মূল করা যে সম্ভব - তা দেখিয়ে গেছেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সফল রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) । যে যুগের বস্তুবাদী ও জড়বাদী আধুনিক শিক্ষায় ধর্মকে মনে করা হয় সেকেলে, পশ্চাদপদ, অপ্রগতিশীল ও নিছক ব্যক্তিগত চর্চার বিষয় সে যুগে তিনি ইসলামকে নিয়ে আসেন বিশ্ব রাজনীতির মূল আলোকমঞ্চে এবং এর ফলে হতচকিত ও আতঙ্কিত বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বিশ্ব সভ্যতা হিসেবে ইসলামের পুনরুত্থান ঠেকানোর জন্যে ইসলামকে তাদের প্রধান শত্রু হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে ও সে অনুযায়ী তাদের বিশ্ব-কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে বাধ্য হয়েছে ।
সমকালীন বিশ্বে বা অন্ততঃ এক হাজার বছরের মধ্যে মরহুম ইমাম খোমেনী (র.)'র সমকক্ষ কাউকে দেখা যায় না। কারণ, গত এক হাজার বছরে অনেক ইসলামী সংস্কারক শুধু চিন্তা বা জ্ঞানগত ক্ষেত্রে বা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন, আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনে অবদান রাখলেও একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মতো বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। ইমাম খোমেনী (র.) ছিলেন একাধারে একজন বড় দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্ব রাজনীতিজ্ঞ, সমরবিদ, শ্রেষ্ঠ ইসলামী আইনজ্ঞ ও মুজতাহিদ, অনন্য সংগঠক, আপোসহীন সংগ্রামী, শ্রেষ্ঠমানের শিক্ষক, অনুপম লেখক, সম্মোহনকারী বক্তা, আধ্যত্মিক কবি এবং সর্বোপরি মুসলিম জাতিগুলোকে উজ্জ্বীবনকারী অলৌকিক ক্যারিজম্যাটিক ও আধ্যাত্মিক নেতা । সমকালীন যুগে বা হাজার বছরের ইতিহাসে কোনো মুসলিম মনীষীর মধ্যে এতগুলো সফল দিক বা গুণের সমাবেশ দেখা যায়নি ।
ইরানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে আধুনিক যুগে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাটা ছিল একটি কল্পনা বা স্বপেড়বর বিষয়। ইমাম খোমেনী (র.) বাস্তবে এ অসাধ্য সাধন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি প্রবল বিক্রমে দশ বছর ধরে এ স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বের ইসলাম প্রেমিক মানুষের মনে আধুনিক যুগেও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের উপযোগিতা ও কার্যকারিতাকে প্রমাণ করেছেন। একজন আধ্যত্মিক সাধক ও খোদাভীরু বা পরহেহজগার আলেম হিসেবে জনপ্রিয় ইমাম খোমেনী কখনও নেতৃত্বের পিছনে ছুটেননি বরং মজলুম মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা, দেশ ও জাতির স্বার্থে সময়োপযোগী কার্যক্রম, দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব, ইসলামের প্রতি অবিচল আস্থা, আত্মবিশ্বাস এবং যুগোপযোগী অসাধারণ জ্ঞান ও যোগ্যতার কারণেই তিনি কোটি কোটি মজলুম জনতাসহ মুক্তিকামী মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা এবং বিশেষ করে ইসলামী ইরানের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিলেন । এটা ঠিক যে, মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) যে সফল বিপ্লব ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা তার পেছনে অতীতের মহান মুসলিম দার্শনিক, মুজতাহিদ এবং সংগ্রামী আলেমগণের অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা পটভূমি হিসেবে কাজ করেছে, কিন্তু ইমাম খোমেনী (র.)'র বড় অবদান হলো তিনি অতীত আন্দোলন ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়াকে আরো গতিশীল করে তাকে পূর্ণতা দিতে পেরেছেন এবং ইরানের ইসলামী রাষ্ট্র ও ভবিষ্যত বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের জন্যে শক্তিশালি ভিত্তি রচনাসহ তাঁর সাফল্যগুলোকে ধরে রাখা ও জোরদারের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। তাই যতই দিন যাচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর জন্যে তাঁর অবদানগুলো আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অনেকে মরহুম ইমাম খোমেনী (র.)'র রাজনৈতিক সাফল্যটাকেই বড় করে দেখেন। এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ হামিদ আলগার বলেছেনঃ "ইমামের বিপ্লব শুধু রাজনৈতিক ও কৌশলগত ব্যাপার ছিল না, তাঁর বিপ্লব আধ্যাত্মিকতার এক অন্তর্নিহিত শক্তির মাধ্যমেও নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছে। ইমাম খোমেনী ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে দেশে ফিরে আসলেন। কিন্তু তিনি সাথে করে কোনো সম্পদ নিয়ে এলেন না। কোনো রাজনৈতিক দলও তিনি গঠন করেননি। কোনো গেরিলা যুদ্ধও তিনি পরিচালনা করেননি। কোনো বিদেশী শক্তির সাহায্যও তিনি নিলেন না। অথচ এরই মধ্যে তিনি ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলনের তর্কাতীত নেতৃত্বে সমাসীন হলেন। "
মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) যখন ‘প্রাচ্যও নয় ও পাশ্চাত্যও নয় ইসলামই শ্রেষ্ঠ'- এ ঘোষণাকে নবগঠিত ইসলামী ইরানের নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, তখন অনেকেই বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছিল এবং এ রাষ্ট্র টিকবে কিনা তা নিয়েও অনেকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দই দশকেরও বেশি সময় পর আজো ইসলামী ইরান আগের চেয়েও অনেক শক্তিশালী হয়ে সাম্রাজ্যবাদের প্রধান দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে আছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ইমাম খোমেনী (র.)'র সবচেয়ে বড় অবদান হলো তিনি ইসলাম ধর্ম ও রাজনীতিকে বিচ্ছিনড়ব করে রাখার সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং মুসলিম উম্মাহকে তাদের প্রধান শত্রু কে তা চিনিয়ে দিয়েছিলেন। মরহুম ইমাম বলেছিলেনঃ আমরা বিশ্বে ইহুদিবাদ, পুঁজিবাদ ও কমিউনিজমের পঁচা বিষমূলগুলোকে জ্বালিয়ে দিতে চাই। আমরা এসব ব্যবস্থাকে নাস্তানাবুদ করবো এবং রাসূল (সা.)'র নেজামে ইসলামকে দাম্ভিক কুফুরি বিশ্বে ছড়িয়ে দিব। যখন বিশ্বের অনেক তথাকথিত ইসলামী দলও আমেরিকাকে মুসলমানদের বন্ধু মনে করতো , তখন ইমাম খোমেনী (র.) বলেছিলেনঃ আমেরিকা ও রাশিয়া উভয়েই ইসলামের শত্রুতায় একে অপরের চেয়ে বড়। ইসরাইল মুসলমানদের আরো নিকৃষ্ট শত্রু। তিনি আরো বলেছিলেনঃ আমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা আমেরিকা ও ইসরাইলেরই সৃষ্টি। আর ইসরাইল এসেছে আমেরিকার ঔরস থেকে। তিনি আমেরিকাকে বৃহৎ দূর্বৃত্ত বলে অভিহিত করতেন। ইমাম খোমেনী (র.) মুসলমানদেরকে শিয়া-সূন্নী বিভেদ ও জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন: যারা এসব নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় তারা আসলে সাম্রাজ্যবাদের দালাল এবং তারা মুসলমানদেরকে বিভক্ত করতে চায়। এভাবে তিনি ইসলামী ঐক্য গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সত্যিকার ইসলামকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার জন্যে ইমাম খোমেনী (র.)'র সূচিত ইসলামী বিপ্লব বাংলাদেশসহ বিশ্বের ইসলামী জাগরণগুলোকে তা কতোটা আন্দোলিত ও অনুপ্রাণিত করেছে সে বিষয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও আইনজীবী এডভোকেট সাদ আহমদ বলেছেনঃ তিনি অর্থাৎ ইমাম খোমেনী (র.) দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে মুসলমানরা নিজেরাই শক্তিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে পারে, মুসলমানদেরকে পূবের দিকেও তাকানোর দরকার নেই, পশ্চিমের দিকেও তাকানোর দরকার নেই। মুসলমানরা যদি শুধু ইসলামকে আঁকড়ে থাকে, তাহলে তারা এসব বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে এবং ইসলামের পতাকা উড়াতে পারে। এই যে মনোভাব তিনি সৃষ্টি করেছিলেন, তার ফলে আজকে গোটা বিশ্বের বিভিনড়ব জায়গায় আমরা দেখছি, মুসলমানরা তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবার জন্যে চেষ্টা করছে। এটা সম্পূর্ণ তাঁরই অবদান এবং আজকের বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যে আন্দোলনের সূর ধ্বনিত হচ্ছে এবং ইসলামী জীবন প্রতিষ্ঠার জন্যে যে চেষ্টা চলছে, এটাও একই কারণে সম্ভবপর হচ্ছে। মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন তা হলো প্রকৃত ইসলাম ও মোহাম্মদী ইসলাম, আমেরিকা ও সাম্রাজ্যবাদীদের পছন্দের ইসলাম নয়। যে ইসলাম সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেনা, অন্যায়-অবিচার , জুলুম ও শোষনের বিরুদ্ধে বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেনা, আমেরিকার কাছে সে ইসলামই পছন্দনীয়।
যুগে যুগে নবী-রাসূল ও ইমামগণ যেভাবে রাজা-বাদশাহদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, যেমনিভাবে ইমাম হোসইন (আ.) এজিদের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তেমনি ইমাম খোমেনী (র.)ও হোসাইনী চেতনা নিয়ে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জনগণকে উদ্ব্দ্ধু করেছিলেন। আর এ জন্যেই তাঁর বিপ্লব সফল হয়েছিল। মহানবী (সা.)'র আহলে বাইতের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শাহাদতের পবিত্র ধারা ও পরবর্তী শাহাদত কাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইরানী জাতির অন্তরে ছাই চাপা আগুনের মতো সুপ্ত ছিল। ইমাম খোমেনী (র.)'র আহবানে তাদের অন্তরের সে আগুন অনির্বাণ বিপ্লব শিখা হয়ে জ্বলে ওঠে এবং তার সামনে কায়েমী স্বার্থ, মানুষের প্রভুত্ব, সামন্তবাদী মানসিকতা, রাজকীয় বিলাস ও শোষণ প্রক্রিয়ার একটি রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) বলতেন, মুসলিম দেশগুলোতে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়নক বা শিখন্ডি শাসকদের উৎখাত না করা পর্যন্ত মুসলিম জাতিগুলোর মুক্তি আসবে না।
আসলে একটি জাতির মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনা এবং জাতির সাংস্কৃতিক মানস থেকে শুরু করে তার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য সবক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রতিষ্ঠার জন্যে যে ধরনের যোগ্যতা ও জ্ঞান দরকার তার সবটুকুই ইমাম খোমেনী (র.)'র মধ্যে দেখা যায়। বিপ্লবের পরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিই এর প্রমাণ। ইসলাম থেকে উৎসারিত ইমামের দিক নির্দেশনার ফলে ইরান থেকে সুদ, জুয়া, মদ, নগ্নতা-অশ্লীলতা, নাইট ক্লাব, বেশ্যাবৃত্তি, সন্ত্রাস প্রভৃতি নির্মূল হয়ে যায়। অবশ্য ইরানের মহিলারা হিজাব বা পর্দাবৃত হলেও তাদেরকে শুধু ঘরের মধ্যেই থাকতে বাধ্য করা হয়নি। বরং ইরানের মহিলারা হিজাব পরে অফিস আদালত ও শিক্ষাক্ষেত্রে উপস্থিত হতে পারছেন। ইরানে বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রীদের সংখ্যাই বেশী।রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গণভোটের মাধ্যমে গৃহীত সংবিধান অনুযায়ী ইসলাম বিরোধী ও ধর্মনিরপেক্ষ দল নিষিদ্ধ করা হয়। সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়। ইরানে ইসলামী বিপ্লব হবার পর অবহেলিত গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্যান্য অনেক উন্নতি হয়েছে এবং প্রথমে কৃষিখাতে ও পরে শিল্প খাতে দেশকে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
শোষক পুঁজিপতিদের কল-কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং তেল সম্পদসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সম্পদ ভাণ্ডারকে বঞ্চিত ও মজলুম জনগণের কল্যাণের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ইসলামী ইরান ফিলিস্তিনী জাতিসহ বিশ্বের নির্যাতিত জাতিগুলোকে সমর্থনের নীতি গ্রহণ করায় বিশ্বব্যাপী ইরানের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে । আর এ সব কিছুর জন্যেই ইসলামী ইরান মরহুম ইমাম খোমেনী (র.)'র দূরদর্শী ও বিচক্ষণ দিক নির্দেশনার কাছে ঋণী। তাই বিশ্বের মুক্তিকামী জাতি ও সচেতন মানুষ মনে করেন, প্রত্যেক জাতির মধ্যেই যদি মরহুম ইমাম খোমেনী (র.)'র মতো অথবা অন্ততঃ তাঁর কাছাকাছি পর্যায়ের যোগ্য নেতা আবির্ভূত হতেন, তাহলে এ পৃথিবী আজ বেহেশতে পরিণত হতো। আজ হোক কাল হোক বিশ্বের সব মুক্তিকামী জাতির নেতৃবৃন্দ ইমাম খোমেনী (র.)'র পথ অনুসরণ করে তাদের নিজ নিজ জাতিকে মুক্তি ও সৌভাগ্যের পথে এগিয়ে নিবেন, এটাই আজ মজলুম মানবতার প্রত্যাশা। সূত্র: রেডিও তেহরান