IQNA

ইসলামী শিক্ষায় বয়স বাধা নয়

20:53 - December 08, 2022
সংবাদ: 3472957
তেহরান (ইকনা): যদিও শৈশবই শিক্ষাগ্রহণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এবং ইসলামও শৈশবে শিশুর শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে বলে, তবে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণে বয়স কোনো প্রতিবন্ধক নয়। ইসলামী শিক্ষা সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্ত। মানুষ যখনই সুযোগ পাবে, তখন দ্বিনি শিক্ষা অর্জন করবে। বিশেষত বয়স যতই হোক না কেন মানুষ ফরজ জ্ঞানার্জনের দায় থেকে মুক্ত হতে পারে না।
বাস্তবতা স্বীকার : ইসলাম মানুষের জীবনের বাস্তবতা স্বীকার করে নেয়। কেননা প্রতিটি মানুষ শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশে জন্ম গ্রহণ করে না। তাদের অনেকেই এমন পরিবার ও পরিবেশে জন্ম গ্রহণ করে, যেখানে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকে না। এ জন্য ইসলাম মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষার সময় উন্মুক্ত রাখতে চায়। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলিম সমাজের সাধারণ অবস্থাও এমন ছিল। এ জন্য মুসলিম সমাজে ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন কোরো’ বাক্যটি হাদিসের মতোই প্রসিদ্ধি লাভ করে।
 
কেন বয়স বাধা নয়
 
ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি ও বিধানের কারণে ইসলামী জ্ঞানার্জনে বয়স কখনো প্রতিবন্ধক হতে পারে না। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো—
 
১. জ্ঞানার্জন ফরজ : ইসলামী শরিয়তে প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বয়সের কোনো পার্থক্য না করেই বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)
 
২. প্রয়োজনীয়তা শেষ হয় না : ফকিহ আলেমরা বলেন, শরিয়তের যে বিধান ফরজ তা পালনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করাও ফরজ এবং যেটা ওয়াজিব সেটার জ্ঞানার্জন করাও ওয়াজিব।   আর যেহেতু মানুষের হুঁশ-জ্ঞান স্বাভাবিক থাকা পর্যন্ত তার জন্য শরিয়তের বিধান পরিপালন করা আবশ্যক। তাই আমৃত্যু ইসলামী জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট থাকে।
 
৩. জীবন সুন্দর হওয়াই কাম্য : জ্ঞান মানুষের জীবন চলাকে সুন্দর করে। আর সুন্দর জীবন সবারই কাম্য। বিশেষত যাদের জীবনের দীর্ঘ সময় জ্ঞান-শূন্যতার কারণে অসুন্দর ছিল, তাদের উচিত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে জীবনকে সুন্দর করা। এক ব্যক্তি বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর জ্ঞানার্জনে লজ্জাবোধ করলে ইমাম আবু বকর দারানি (রহ.) বলেন, ‘হে ভাই, তুমি কি এ বিষয়ে লজ্জাবোধ করছ যে তোমার পূর্বের জীবনের তুলনায় বর্তমান জীবন সুন্দর হবে?’ (আল-ফকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, পৃষ্ঠা ৮০২)
 
৪. মর্যাদা সবার জন্য : রাসুলুল্লাহ (সা.) জ্ঞানান্বেষীদের যেসব মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন তাতে বয়সের কোনো তারতম্য নেই। যেমন তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য পথ চলে আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তাকে জান্নাতের পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতারা জ্ঞানান্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। অতঃপর আসমান-জমিনের সব প্রাণী (আল্লাহ তাআলার কাছে) আলেমদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানি জগতের মাছগুলো। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮২)
 
৫. লজ্জাই লজ্জাজনক : বয়স বেড়ে গেলে অনেকেই জ্ঞানার্জনে লজ্জাবোধ করে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে জ্ঞানার্জনে লজ্জা করাই লজ্জাজনক এবং লজ্জা না করাই প্রশংসনীয়। যেমন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আনসারি নারীরা কতই না উত্তম। দ্বিন সম্পর্কে মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে এবং দ্বিনি জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি অর্জনে তারা লজ্জাবোধ করে না। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩১৬)
 
সাহাবিদের দৃষ্টান্ত : বেশির ভাগ সাহাবি পরিণত বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ইসলাম গ্রহণের পর তারা দ্বিনি ইলম অর্জন করেন। এ জন্য ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ‘তোমরা জ্ঞানার্জন কোরো নেতা হওয়ার আগে ও পরে। কেননা আল্লাহর রাসুলের সাহাবিরা বৃদ্ধ বয়সেও জ্ঞানার্জন করেছেন। ’ (সহিহ বুখারি, কিতাবুল ইলম বা জ্ঞান অধ্যায়)
 
নবীজি (সা.)-এর দৃষ্টান্ত : শুধু বয়স নয়, বরং জ্ঞানও ব্যক্তিকে জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ করতে পারে না। যেমন আল্লাহর নবীকে আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, ‘বলুন, হে আল্লাহ, আপনি আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। ’ (সুরা তাহা, আয়াত : ১১৪)
 
ইবনে উয়াইনা (রহ.) ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জ্ঞানবৃদ্ধিতে সচেষ্ট ছিলেন এবং আল্লাহ তাকে সেই তাওফিক দিয়েও ছিলেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
 
আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন
captcha