IQNA

অর্থডক্স খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে হযরত ঈসা মসীহ ইবনে মারিয়ামের ( আ ) শুভ জন্মদিন

21:28 - January 07, 2025
সংবাদ: 3476662
ইকনা- আজ ৭ জানুয়ারি অর্থডক্স খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে হযরত ঈসা মসীহ ইবনে মারিয়ামের ( আ ) শুভ জন্মদিন। বিশ্বের ২০০ মিলিয়ন অর্থডক্স খ্রীষ্টান সম্প্রদায় ৬ বা ৭ জানুয়ারি হযরত ঈসার ( আ ) জন্মদিন হিসেবে পালন করে। তবে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে ২৫ ডিসেম্বর হচ্ছে হযরত ঈসার ( আ ) জন্মদিবস । 

হযরত ঈসার ( আ ) জন্ম যা ছিল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুজিযা স্বরূপ তা পবিত্র কুরআনে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। হযরত ঈসা মসীহ ( আ ) , হযরত মূসা ( আ ) , হযরত ইয়াহইয়া ( আ ) এবং স্বয়ং হযরত ঈসার ( আ ) মা হযরত মারিয়াম বিনতে ইমরানের ( আ ) জন্ম বৃত্তান্ত ও ইতিহাস পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যা থেকে বোঝা যায় জন্মবার্ষিকী পালনের বৈধতা। 
এ সব মনীষী ও মহাপুরুষ এবং ধর্মীয় দ্বীনী ব্যক্তিত্বদের জন্মদিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে তাঁদের ওপর সালাম ও যিয়ারত ( বিশেষ দুআ পাঠ ) পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত , হামদ ও না'ত পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি , তাদের জীবনী , সীরত , জীবন - ইতিহাস ও জীবন বৃত্তান্ত সংক্রান্ত জ্ঞানগর্ভ মূলক  ইলমী ( বৈজ্ঞানিক ও  জ্ঞানগত ) আলোচনা করা হয় যা উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের ঐ সব মনীষীর জীবন ও কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জ্ঞান ও তথ্য বৃদ্ধি করে এবং একারণে তাঁদের সুমহান জীবন থেকে তারা শিক্ষা নিতে পারে। আর এ ছাড়া এ সব অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে ঐ সব মনীষী ও বুযুর্গের প্রতি তাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা বোধ বৃদ্ধি পায় এবং তা তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ( তাযীম ও তাকরীম ) করতে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যা তাদের অন্তরের তাকওয়া সঞ্জাত । 
আসলে , জন্মদিবসের মতো অনুষ্ঠান পালনের কারণে ঐ সব মনীষীদের সাথে উদযাপন কারী ও অংশ গ্রহণকারীদের আত্মিক আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপিত , সুসংরক্ষিত ও সুদৃঢ় হয় যা তাদের অন্তরের তাকওয়ার পরিচায়ক এবং এ সব মনীষী যারা মহান আল্লাহর ( দ্বীনের ) শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ( শা'আয়েরুল্লাহ ) স্বরূপ তাদের প্রতি ভক্তি , শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন ( তাযীম ও তাকরীম ) ভক্ত ও সম্মান প্রদর্শনকারীদের অন্তর সমূহের তাকওয়া সঞ্জাত। অর্থাৎ যারা মুত্তাকী পরহেযগার ( খোদাভীরু এবং মহান আল্লাহর ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধানী ) কেবল তারাই এ সব মনীষী যারা দ্বীনের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন  তাদের প্রতি যথার্থ ভক্তি , শ্রদ্ধা ও সম্মান ( তাযীম ও তাকরীম) প্রদর্শন করতে পারে । আর বেআদব অহংকারী ব্যক্তিরা এ সব মনীষীর প্রতি চরম অবহেলা, অবজ্ঞা, অভক্তি, অশ্রদ্ধা ও অসম্মান ( তওহীন ও ইহানত ) প্রদর্শন করে  , তাদের মাযার ও সমাধি সৌধ ধ্বংস, তাদের স্মরণে অনুষ্ঠানমালা যা আসলে তাদের প্রতি তাযীম স্বরূপ সেগুলো পালন ও উদযাপনকে হারাম , শিরক ও বিদআত বলে নিষিদ্ধ ও বাঁধা দান করে !!! এ সব অনুষ্ঠানের কোথায় ও কিভাবে শিরক ও বিদআত  সংঘটিত হয় ?  
এ সব বেআদব বেতমিজ অসভ্য অভদ্র তাকওয়াহীন কেবল গায়ের জোরে মহামানব ও মহান মনীষীদের জন্মোৎসব পালন ও উদযাপন এবং তাদের ওফাৎ ও শাহাদাত দিবস উপলক্ষে শোকানুষ্ঠান পালনকে বিদ'আত , হারাম ও শিরক বলে থাকে যে ব্যাপারে নেই তাদের কোনো শরয়ী দলীল এবং মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এতদসংক্রান্ত কোনো আয়াত ও প্রমাণ ( বুরহান ) নাযিল করেন নি এবং মহানবী ( সা ) ও তাঁর পবিত্র আহলুল বাইতের ( আ ) সুন্নায় কোনো নিষেধাজ্ঞাও বর্ণিত হয় নি ও বিদ্যমান নেই। জন্মদিন এবং শাহাদাত ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন সংক্রান্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা না পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে আর না সুন্নাহ্য়। 
    এ ছাড়া কয়েক জন নবীর জন্ম দিবসে তাদের ওপর সালাম দেওয়ার কথাও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। 
যেমন : হযরত ঈসা ( আ ) নিজেই মাতৃক্রোড়ে নিজের ওপর সালাম দিয়েছেন যে দিন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন , যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুজ্জীবিত হবেন সে দিবসগুলোতে : 

وَ السَّلَام ُ عَلَيَّ یَوْمَ وُلٌدتُّ وَ یَوْمَ أَمُوْتُ وَ یَوْمَ أُبْعَثُ حَیَّاً 

আর আমার ওপর সালাম যেদিন আমি জন্ম গ্রহণ করেছি সেদিন , যেদিন আমি মৃত্যু বরণ করব সেদিন এবং যেদিন আমি পুনরুজ্জীবিত হব সেদিন ( কিয়ামত দিবসে রোয হাশরে ) । ( সূরা -ই মারিয়াম ১৯ : ৩৩ ) 
মহান আল্লাহ হযরত যাকারিয়ার ( আ ) পুত্র সন্তান হযরত ইয়াহইয়াকেও ( আ ) সালাম দিয়েছেন তাঁর জন্মদিনে , তার মৃত্যু দিবসে এবং যেদিন তিনি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হবেন সেই হাশরের দিবসে। এরশাদ হচ্ছে : 

وَ سَلاَمٌ عَلَیْهِ یَوْمَ وُلِدَ وَ يَوْمَ يَمُوْتُ وَ يَوْمَ يُبْعَثُ حَيَّاً 

আর তাঁর ওপর সালাম যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন সেদিন , যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করবেন সেদিন এবং যেদিন তিনি পুনরুজ্জীবিত হবেন সেদিন। ( সুরা - ই মারিয়াম ১৯ : ১৫ ) ।
আবার সেই যাহিদ ( তাপস দুনিয়া ত্যাগী ) মহান নবী এবং হযরত সাহিবুয যামান ( যুগের অধিপতি) হযরত ইমাম মাহদী মওঊদের ( প্রতিশ্রুত মাহদী - আ -) সাহায্য কারী ও অনুসারী ও মুক্তাদী মারিয়াম তনয় হযরত ঈসা মসীহর ( আ ) শুভ জন্মদিন উপলক্ষে সকল মুমিন - মুসলমান এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা , অভিনন্দন ও তাবরীক । 
ইমাম মাহদী ( আ ) আবির্ভূত হবেন তখন তাঁকে সাহায্য করার জন্য তাঁর অনুসারী হয়ে হযরত ঈসা মসীহ ( আ ) এ পৃথিবীতে আগমন করবেন এবং বিশ্ব লুটেরা পশ্চিমা যালিম পরাশক্তি সমূহের বিরুদ্ধে বিশ্বের দেশে দেশে এমনকি খ্রীষ্টান দেশগুলোতেও মুক্তি কামী প্রতিরোধ সংগ্রাম তুঙ্গে পৌঁছুবে যার নেতৃত্ব দিবেন হযরত ঈসা মসীহ ইবনে মারিয়াম ( আ ) এবং বিশ্বের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে তিনি ইমাম মাহদীর ( আ ) নেতৃত্ব ও ইসলাম ধর্ম মেনে নেওয়ার আহ্বান জানালে খ্রীষ্টান দেশগুলোর অধিবাসীরা দলে দলে ইসলামে দীক্ষিত হবে এবং ইমাম মাহদীর ( আ ) নেতৃত্বে বিশ্ব ইসলামী বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে তাঁরা নিজ নিজ দেশের তাগুতী সাম্রাজ্যবাদী শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর পতন ঘটাবে ।
 হযরত ঈসা মসীহ ( আ ) মুঞ্জী ( ত্রাণকর্তা ) মহানবী ( সা ) হযরত মুহাম্মদের আগমনের বেশারত (সুসংবাদ) দিয়ে ছিলেন যা ইঞ্জীল ও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে । এরশাদ হচ্ছে :

 وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ فَلَمَّا جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَذَا سِحْرٌ مُبِينٌ ﴿۶﴾

ঐ সময়ের কথা স্মরণ করুন যখন ঈসা ইবনে মারিয়াম বললেন : হে বনী ইসরাইল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে মহান আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল ( রাসূলুল্লাহ ) এমতাবস্থায় যে আমি আমার কাছে বিদ্যমান তৌরাতের সত্যায়নকারী এবং আমার পরে যে রাসূল আসবেন তাঁর মুবাশশির (সুসংবাদ দাতা) যার নাম আহমাদ ; অত:পর যখন তিনি ( আহমাদ ) তাদের ( পবিত্র মদীনায় ইহুদী বনী ইসরাইল ) কাছে আসলেন বাইয়েনাত (সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণাদি ) সহ তখন তারা বলল : এটা তো স্পষ্ট যাদু ! ( সূরা -ই সাফফ ৬১  : ৬ )
এই বেশারত ( সুসংবাদ ) যেমন আগে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক তদ্রুপ তাহরীফ বা বিকৃতির পরেও বর্তমান ইঞ্জীলে বিদ্যমান আছে । খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যকার সুপথ সত্যপথ সন্ধানীরা ঠিকই সত্যের সন্ধান পাবেন যদি তারা তাদের বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে ও নিষ্ঠা সহকারে সত্য সন্ধানে ব্রত হন । আর তখন ইঞ্জীলে বিদ্যমান হযরত ঈসা মসীহর ( আ ) এই বেশারত ( সুসংবাদ ) তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
৭-১- ২০২৫

 

captcha