IQNA

বৃহত্তর ইসরায়েলের স্বপ্ন; ইহুদিবাদী সরকারের লক্ষ্যসিরিয়াকে বিভক্ত করার 

0:01 - July 26, 2025
সংবাদ: 3477767
ইকনা- একজন আরব বিশ্লেষক জানিয়েছেন, ইসরায়েল সিরিয়ার ভেতরে দুরুজ, কুর্দ এবং আলাওয়ি সম্প্রদায়ের জন্য ছোট ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চায় এবং এজন্য সিরিয়ার সেনাবাহিনীর অবকাঠামো ধ্বংস করছে।
ইকনা সূত্রে ওয়াতান-এর খবরে বলা হয়েছে, "ওয়াতান" মিডিয়া রিসার্চ ও ভবিষ্যত গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান মুয়াম্মার আরাবি আল-মায়াদিন টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন: “ইসরায়েলের জন্য সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক একটি কৌশলগত বিষয়, এবং এটি বিশ্বের যেকোনো আরব সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
 
আরাবি বলেন, ইসরায়েল ‘বৃহৎ ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়। এই লক্ষ্য অর্জনে তারা মুক্তির আদর্শ (রেজিস্ট্যান্স) ধ্বংস করতে এবং ইসরায়েলি আধিপত্য ও সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের নামে এক ‘পবিত্র মানচিত্র’ গঠনের চেষ্টা করছে, যা আরব বিশ্বে ‘অভিশপ্ত মানচিত্র’ হিসেবে পরিচিত।
 
তিনি বলেন, সুইদায় যে অস্থিরতা চলছে, তা ইহুদি বিশারদ বার্নার্ড লুইস ও আদিত বেন নুন-এর গবেষণার ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। তাদের পরিকল্পনায় তিনটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র থাকবে: দুরুজ রাষ্ট্র (সুইদাকে কেন্দ্র করে) ও কুর্দি রাষ্ট্র এবং আলাওয়ি রাষ্ট্র। এই তিনটি অঞ্চলকে মিলিয়ে একটি “দাউদের করিডোর” তৈরি করা হবে।
 
“দাউদের করিডোর” হবে একটি সংকীর্ণ ভূখণ্ড যা দখলকৃত গোলান মালভূমি থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ সিরিয়ার কুনেইত্রা ও দারআ অঞ্চল পেরিয়ে হোরান পাহাড়ে সুইদা পর্যন্ত যাবে এবং সেখান থেকে সিরিয়ার মরুভূমি হয়ে তানাফ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হবে—যেখানে সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানের সীমানা মিশেছে।
 
আরাবি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ইসরায়েল সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কাঠামো ধ্বংস করছে। তিনি বলেন: “এই অঞ্চল বিভাজনের মাধ্যমে শুধুমাত্র ইসরায়েলই লাভবান হচ্ছে।”
 
তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে—এই কথা একটি প্রতারণা। বাস্তবতা হলো: “আমেরিকানরা পরিকল্পনা করে, আর ইসরায়েল তা বাস্তবায়ন করে।”
 
আরাবি বলেন, সিরিয়ার কিছু অংশ বর্তমানে তুরস্ক, আমেরিকা ও ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং তারা ‘অভিশপ্ত মানচিত্র’কে একটি তথাকথিত ‘পবিত্র মানচিত্রে’ রূপ দিচ্ছে।
এছাড়া, একটি গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প আছে, যার মাধ্যমে কাতার থেকে গ্যাস সিরিয়া হয়ে ইউরোপে যাবে। এর পাশাপাশি একটি ইসরায়েলি ও একটি তুর্কি প্রকল্পও রয়েছে।
 
তিনি বলেন:“কোথায় আরব প্রকল্প? কোনো প্রকল্প নেই।”বর্তমানে কিছু আরব সরকার ইসরায়েলের চরম ডানপন্থীদের সাথে সহযোগিতা করছে এবং নিজেদের কৌশলগত স্বার্থে আমেরিকা ও ইসরায়েলকে বিনামূল্যে সাহায্য করছে।
 
আরাবি সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ-এর একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেন:
“যদি সিরিয়া হারিয়ে যায়, ফিলিস্তিনও হারিয়ে যাবে।”
কারণ, সিরিয়া বরাবরই এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
 
তিনি বলেন, গাজায় গণহত্যা, ইরানে আগ্রাসন, ইয়েমেন ও লেবাননে হামলা এবং সিরিয়ার দুর্বলকরণ—সবই এক ষড়যন্ত্রের অংশ যাতে এই দেশগুলো প্রতিরোধের কেন্দ্র না হতে পারে।
 
আরাবি সতর্ক করেন:“সিরিয়ার সামরিক ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলার পর, ইসরায়েলের সঙ্গে সিরিয়ার নতুন শাসকদের মধ্যে প্রকাশ্য আলোচনা শুরু হবে এবং বলা হবে—‘নিরাপত্তার জন্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করা জরুরি’। এইসব একটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, আবেগের নয়।”
 
তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানیاহু বলেছেন যে:“সুইদায় সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, কারণ এলাকাটি পুরোপুরি দখলকৃত।”
 
আরাবি বলেন, ইসরায়েল বিভিন্ন আরব সংগঠন ও মিলিশিয়া ব্যবহার করে নিজের লক্ষ্য পূরণ করছে এবং সিরিয়ার নতুন শাসকরাও বেশি দূর যেতে পারবে না।
তার মতে, ইসরায়েল একটি নতুন আরব বিশ্বের মানচিত্র তৈরি করতে চায়, যা হবে: ছোট ছোট সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে বিভক্ত এবং একটি অন্যটির বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ।
 
captcha