
এই খননকাজগুলো কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে না এবং বিদ্যমান ঐতিহাসিক অবস্থান লঙ্ঘন করছে, যা স্পষ্ট করে যে এসব কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য একান্তই রাজনৈতিক।
ইকনা নিউজের প্রতিবেদনে, আল-জাজিরার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, তথাকথিত “তীর্থযাত্রীদের পথ” (Path of Pilgrims) নামে একটি সুড়ঙ্গ সম্প্রতি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়েছে।
এটি কেবল একটির উদাহরণ—ইসরাইল এখন পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাস শহর ও আল-আকসা মসজিদের নিচে ডজনখানেক সুড়ঙ্গ খনন করেছে।
যখন পুরো বিশ্ব গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী জেরুজালেমে তাদের খনন অভিযান আরও তীব্র করেছে।
এছাড়া, ইসরাইলি সরকারের চরমপন্থী মন্ত্রীরা আল-আকসা ধ্বংস করে সেখানে কথিত “হাইক্যাল” (ইহুদি মন্দির) নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
সম্প্রতি, কট্টরপন্থী “ধর্মীয় জায়নবাদ দল”-এর সংসদ সদস্য জভি সোকট আল-আকসা মসজিদের ভেতরেই ইসরাইলের পতাকা উত্তোলন করেছেন।
অন্যদিকে, ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ মসজিদের স্থানে “মন্দির” নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং এর আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন।
এই কর্মকাণ্ডগুলো জেরুজালেমবাসীর উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ইসরাইল হয় সরাসরি আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করবে, নয়তো সুড়ঙ্গ খননের মাধ্যমে এর ভিত্তি দুর্বল করে ধসে পড়ার ব্যবস্থা করবে।
ফিলিস্তিনি গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ আবদুররজ্জাক মতানী বলেছেন, সম্প্রতি যে সুড়ঙ্গের কথা বলা হচ্ছে তা নতুন কিছু নয়; বরং এটি ইসরাইলের দীর্ঘদিন ধরে খনন করা সুড়ঙ্গগুলোরই একটি অংশ।
তিনি বলেন, এই সুড়ঙ্গের উদ্বোধন দোহায় অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক সম্মেলনের সময় করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই একটি রাজনৈতিক বার্তা, যেখানে নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্র বোঝাতে চেয়েছে যে সংঘাতের মূল কেন্দ্র হচ্ছে জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদ।
মতানী আরও বলেন, “ইসরাইলের এই খননকাজ দশকের পর দশক ধরে দিনরাত চলছে। এগুলো মোটেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান নয়; বরং জোর করে ইসরাইলি বর্ণনা চাপিয়ে দেওয়ার এক রাজনৈতিক প্রচেষ্টা।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন হয় উপর থেকে নিচে, ঐতিহাসিক স্তর অনুসারে। অথচ ইসরাইল বিদ্যমান স্থাপনা ধ্বংস করে তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী এলাকা পুনর্গঠন করছে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো এই নীতিগুলোকে প্রকাশ্যে সমর্থন করছে, যদিও বহু আন্তর্জাতিক গবেষক এমনকি কিছু ইসরাইলি প্রত্নতাত্ত্বিকও নিরপেক্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণার দাবি জানিয়েছেন।”
ফিলিস্তিনিরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে এখনও পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ১৯৬৭ সালের দখল বা ১৯৮০ সালের সংযুক্তিকরণ—দুটিরই বৈধতা স্বীকার করে না।
এর পাশাপাশি, গত দুই বছরে গাজায় চলমান ইসরাইলি গণহত্যা এবং পশ্চিম তীরে রক্তক্ষয়ী সামরিক আগ্রাসনের পাশাপাশি ইসরাইল ও তাদের বসতি স্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনমূলক কার্যক্রমও বৃদ্ধি করেছে। 4308656#