শত্রু ও মিত্র সবাই ইমাম আলীর (আ.) শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি স্বীকার করে গেছেন। মহানবীর পর আর কারো জীবনী নিয়ে এতো বেশি বই লেখা বা গবেষণা হয়নি যতটা হয়েছে হযরত আলীর (আ.) জীবনী নিয়ে।
ইমাম আলীই (আ.) ছিলেন ইসলামী যুক্তি-ভিত্তিক দর্শনের প্রথম প্রচলনকারী এবং সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব। কুরআনের এমন কোনো আয়াত নেই যার বিশদ ব্যাখ্যা, শানে-নজুল ইত্যাদি নিয়ে তিনি রাসূলের সঙ্গে আলোচনা করেননি।
মহানবী বলেছিলেন, আমি জ্ঞানের নগর আর আলী তার দরজা। কুরআনের বাহ্যিক শব্দগুলোকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনিই প্রথম আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্র রচনা করেন। বীরত্ব ও সাহসিকতার জন তাঁকে বলা হত আসাদুল্লাহ বা খোদার সিংহ। কঠিন যুদ্ধ ও সংকটেও তিনি কখনও ভীত, অস্থির বা বিচলিত হননি। আলীর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে নেমে কোনো খ্যাতিমান যোদ্ধাও কখনও প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেনি।
কিন্তু মহাবীর হওয়া সত্ত্বেও আলী (আ.) কখনও কোনো দুর্বল লোককে হত্যা করেননি এবং প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে ধাওয়া করেননি। তিনি কখনও রাতের আঁধারে শত্রুর ওপর অতর্কিত হামলা চালাননি। শত্রুপক্ষের জন্য কখনও পানি সরবরাহও তিনি বন্ধ করেননি। হযরত আলীর (আ.) মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে ঐতিহাসিক ওসবোর্ন তাঁকে 'সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মার অধিকারী মানুষ' বলে অভিহিত করেছেন।
নিজের শাহাদতের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা শুনে সব কিছুর আগে হযরত আলী (আ.)'র মনে যে চিন্তাটির উদয় হয়েছিল তা এই বস্তু-জগত সম্পর্কিত ছিল না, বরং তা ছিল নিজের ঈমান সম্পর্কিত। তাই তিনি প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল ,সে সময় আমি কী ঈমানের ওপর অবিচল থাকব? রাসূল (সা.) বললেন: হ্যাঁ, সে সময় তোমার ঈমান নিরাপদ থাকবে।
বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেন: হে আলী! যে তোমাকে হত্যা করবে সে (বাস্তবে) আমাকে হত্যা করবে , যে তোমাকে বিরক্ত করবে সে আমাকে বিরক্ত করবে এবং যে তোমার অবমাননা করবে সে আমার অবমাননা করবে, কারণ তুমি আমার আত্মা বা প্রাণের সমতুল্য। তোমার ও আমার মানসিকতা এবং স্বভাব অভিন্ন। নিঃসন্দেহে প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত আল্লাহ প্রথমে আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং এরপর সৃষ্টি করেছেন তোমাকে,তিনি প্রথমে বেছে নিয়েছেন আমাকে এবং এরপর বেছে নিয়েছেন তোমাকে। আল্লাহ আমাকে নবুওতের জন্য মনোনীত করেছেন,আর তোমাকে মনোনীত করেছেন ইমামতের জন্য। আর যে তোমার ইমামতকে অস্বীকার করবে সে (কার্যত) আমার নবুওতকে প্রত্যাখ্যান করল।
হে আলী! তুমি আমার উত্তরাধিকারী, আমার সন্তানদের তথা নাতী-নাতনীর পিতা এবং আমার কন্যার স্বামী আর আমার উম্মতের জন্য আমার জীবদ্দশায় ও আমার মৃত্যুর পর আমার প্রতিনিধি বা খলিফা। তোমার নির্দেশ হল আমারই নির্দেশ, তোমার নিষেধাজ্ঞা হল আমারই নিষেধাজ্ঞা। সেই শক্তির শপথ করে বলছি যেই শক্তি আমাকে নবুওত দান করেছেন এবং আমাকে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে তৈরি করেছেন,তুমি হচ্ছ সৃষ্টিকুলের জন্য হুজ্জাতুল্লাহ বা আল্লাহর নিদর্শন এবং তাঁর রহস্যগুলোর আমানতদার বা ট্রাস্টি ও সৃষ্টিকুলের ওপর আল্লাহর খলিফা।