IQNA

ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে পশ্চিমারা কি ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ ঢাকছে?

8:23 - August 03, 2025
সংবাদ: 3477819
ইকনা- কাতারভিত্তিক স্যাটেলাইট চ্যানেল আল জাজিরা'র ইংরেজি সংস্করণে গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যসহ ১৪টি দেশ ইরানকে পশ্চিমা দেশগুলোতে হত্যা ও অপহরণের পরিকল্পনার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যদিও তেহরান দৃঢ়ভাবে তা অস্বীকার করেছে।

আল জাজিরা লিখেছে, যুক্তরাজ্য ও তার ১৩টি মিত্র দেশ প্রকাশ্যে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ এবং ভয়ভীতির অভিযান পরিচালনার অভিযোগ এনেছে।

পার্সটুডে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, আলবেনিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য এই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে এবং তারা ইরানকে এই কার্যকলাপ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তারা আরও দাবি করেছে যে, এসব কাজ আন্তর্জাতিক অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।

এই ১৪টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে ইরানের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত অপারেশনের অভিযোগ এনে বলেছে, “আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের হত্যা, অপহরণ ও হয়রানির প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছি, যেগুলো আমাদের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

তবে, ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর এই নতুন অভিযোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে অভিহিত করে বলেছেন, “এই অভিযোগগুলো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার মতো বর্তমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে জনগণের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।"

তিনি আরও বলেন, “এই প্রকাশ্য মিথ্যা অভিযোগগুলো ইরানের বিরুদ্ধে চলমান ভীতি-সৃষ্টির (ইরানফোবিয়া) অংশ, যার উদ্দেশ্য হলো ইরানকে চাপের মধ্যে রাখা।”

১৪টি পশ্চিমা দেশের এই অভিযোগ এমন সময়ে এসেছে, যখন এই দেশগুলো নিজেরাই—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র—ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইরানে চালানো সামরিক হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। ইউরোপীয় দেশগুলোও এই হামলার বিষয়ে নীরব থেকেছে, বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশ্য সমর্থনও দিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্টস পর্যন্ত বলেন, “ইসরায়েল আমাদের সবার হয়ে নোংরা কাজটি করছে।”

ইহুদিবাদী ইসরায়েল— যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশের সামরিক, গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক সমর্থনে ভর করে গত জুনে ইরানের বেসামরিক অঞ্চল, অবকাঠামো ও শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনার উপর সমন্বিত বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই বেআইনি হামলাগুলোতে ১০৬২ জন নিরীহ নাগরিক শহীদ হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৩২ জন নারী ও ৪৫ জন শিশু রয়েছে। এছাড়াও ৫৭৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েল ইরানের ৩৩ জন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, ১৪ জন বিজ্ঞানী, শিক্ষার্থী, ক্রীড়াবিদ ও ধর্মীয় নেতাদেরও হত্যা করেছে। মোট নিহতদের প্রায় ৫০%ই বেসামরিক নাগরিক ছিলেন, যাদের অনেককেই নিজেদের বাড়িতে পরিবারসহ হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েল এখানেই থেমে থাকেনি। ১২ দিনের এই যুদ্ধে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে হামলা চালিয়ে দেশের তিন প্রধান ক্ষমতার শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার চেষ্টাও করেছে। এটি নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে চালানো উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ।

ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী সন্ত্রাসী কার্যক্রম

ইসরায়েল শুধু এই সাম্প্রতিক যুদ্ধে নয়, অতীতেও একাধিকবার ইরানি বিজ্ঞানীদের সরাসরি টার্গেট করে হত্যা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ড. মোহসেন ফাখরিজাদে-কে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর তেহরানের উপকণ্ঠে হত্যা করা হয়। আরও সাম্প্রতিক ঘটনায়, ২১ জুলাই ২০২৪ সালে তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা করে। এছাড়া, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় সরাসরি গণহত্যা ও অনাহারে রাখার অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা ২১শ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।

পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে নিজেদের যুদ্ধাপরাধ ও অভ্যন্তরীণ সংকটগুলি ঢাকার চেষ্টা করছে। একদিকে তারা ইসরায়েলের সন্ত্রাসকে সমর্থন করছে, অন্যদিকে ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে জনমতকে বিভ্রান্ত করছে। এটি তাদের দ্বিচারিতা ও ভুয়া মানবাধিকার নীতিরই প্রতিফলন।#

পার্সটুডে

captcha