IQNA

হাজিদের প্রতি ইসলামি বিপ্লবের রাহবারের ঐতিহাসিক বাণী

23:29 - August 31, 2017
সংবাদ: 2603723
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এবং ইসলামি বিপ্লবের মহামান্য রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী আজ বৃহস্পতিবার ৯ই জিলহজ্ব আল্লাহর ঘরের মেহমান হাজিদের প্রতি ঐতিহাসিক বাণী প্রদান করেছেন।
হাজিদের প্রতি ইসলামি বিপ্লবের রাহবারের ঐতিহাসিক বাণী

বার্তা সংস্থা ইকনা: এবারের হজবাণীতে  মহান আল্লাহর মেহমানদের উদ্দেশে সর্বোচ্চ নেতা যা বলেছেন তা তুলে ধরা হলো-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহরই যিনি বিশ্বজগতের প্রভু। আর সালাম ও দরুদ পেশ করছি আমাদের নেতা, শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র ওপর এবং তাঁর নিষ্পাপ বংশধর বা আহলে বাইতের ওপর ও তাঁর নির্বাচিত বা পছন্দের সাহাবিদের ওপর।

মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এ কারণে যে তিনি অতীতের বছরগুলোর মত এ বছরেও হজব্রত পালনের সৌভাগ্য দান করেছেন বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মু'মিন বা বিশ্বাসী মুসলমানকে যাতে তারা এই মহাকল্যাণময় ও স্বচ্ছ-সুপেয় রহমতের ঝর্ণাধারা থেকে উপকৃত হতে পারেন এবং যাতে তারা এ সময়ের দিন আর রাতের মূল্যবান ও পবিত্র ঘণ্টাগুলোয় আল্লাহর মহিমান্বিত ঘরের চারপাশে ইবাদত, বিনম্র-বিহ্বলতা, জিকর ও নৈকট্য অর্জনের সাধনায় মশগুল হতে পারেন; আর এভাবে তারা যেন অলৌকিক ওষুধের মতই হৃদয়গুলোকে বদলে দিতে ও প্রাণগুলোকে পবিত্র এবং সুসজ্জিত-সুশোভিত করতে পারেন।

হজ রহস্যে ভরপুর এমন এক ইবাদত ও পবিত্র স্থানে বসবাস এবং এমন এক অবস্থান যা খোদায়ী বরকতে টইটুম্বর ও মহান আল্লাহর নানা নিদর্শন আর প্রতীকের প্রকাশ। হজ আল্লাহর বিশ্বাসী বা মু'মিন দাস, বিনম্র ও চিন্তাশীল-জ্ঞানী ব্যক্তিদের আধ্যাত্মিক মর্যাদা এনে দিতে পারে এবং তাকে করতে পারে আলোকিত হৃদয়ধারী ও উচ্চতর ব্যক্তি। হজ এ ধরনের ব্যক্তিকে অন্তর্দৃষ্টি ও সাহসিকতার মত নানা গুণ দান করতে পারে এবং তাদেরকে দান করতে পারে কাজের উদ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সংগ্রাম বা জিহাদ করার গুণ। হজের রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক দিকগুলো নজিরবিহীন, অত্যন্ত উচ্চমানের ও দৃশ্যমান। আজ মুসলিম সমাজের জন্য হজের এই আধ্যাত্মিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক উভয় দিকই খুবই জরুরি।

আজ একদিকে বস্তুবাদের সম্মোহন বা জাদু নানা ধরনের উন্নত হাতিয়ার নিয়ে মানুষকে করছে বিভ্রান্ত ও চালাচ্ছে নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা এবং অন্যদিকে আধিপত্যকামী শক্তিগুলোর নীতি আর কর্মসূচি মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা ও বিভেদের আগুন ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তারা এমন সব কাজ করছে যাতে মুসলিম দেশগুলোকে নিরাপত্তাহীনতা ও মতবিরোধের জাহান্নামের পরিণত করা যায়।      

মুসলিম উম্মাহর এই দুই বিশাল ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভের ঔষধ হতে পারে হজ। মনগুলোকেও পবিত্রতায় উজ্জীবিত করে তোলা এবং তাকওয়া ও আধ্যাত্মিকতার আলোয় আলোকিত করে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয় এই হজের মাধ্যমে। একইভাবে মুসলিম বিশ্বের তিক্ত ঘটনাবলির ওপর দৃষ্টি মেলে ধরারও পরিবেশ তৈরি হয়। ওই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পে আবদ্ধ হওয়ার চেতনায় উজ্জীবিত হবার পাশাপাশি বাস্তবে কাজে লাগানোরও স্পৃহা সৃষ্টি হয়।

মুসলিম বিশ্ব আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এই নিরাপত্তাহীনতা একদিকে নৈতিক অপরদিকে আধ্যাত্মিক। রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাও মুসলিম বিশ্বকে গ্রাস করে আছে। এইসব নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ হলো আমাদের উদাসীনতা এবং শত্রুদের নির্দয় আক্রমণ। আমরা দুর্নীতিবাজ শত্রুদের আক্রমণ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করি নি এবং বিচার-বুদ্ধিগুলোকেও সঠিকভাবে কাজে লাগাই নি। আমরা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন  হবার নীতিও ভুলে গেছি  আবার নিজেদের মধ্যে পরস্পরে দয়া পরবশ হবার শিক্ষাও ভুলে গেছি। এর পরিণতিতে ইহুদিবাদী শত্রুরা মুসলিম বিশ্ব-ভূগোলের একেবারে হৃদয়ের মাঝে ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টি করেই যাচ্ছে। আর আমরাও ফিলিস্তিনীদের মুক্তির ব্যাপারে আমাদের অবশ্য করণীয় দায়িত্ব পালনে উদাসীন রয়েছি। আমরা সিরিয়ায়, ইরাকে, ইয়েমেনে, লিবিয়ায়, বাহরাইনে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছি, আবার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে মুসলিম দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিম বিশ্বের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক দায়দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, ধর্মীয় ও গোত্রীয় সামগ্রিক নির্যাতন পরিহার করা, সকল মুসলিম দেশ ও জাতিকে শত্রুতার ধরন ও কৌশলগুলোর ব্যাপারে এবং ইহুদিবাদ ও বলদর্পিদের বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে সচেতন করা। সর্বোপরি নরম ও সশস্ত্র যুদ্ধের ময়দানে শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য অস্ত্রেশস্ত্রে সুসজ্জিত হওয়া, দ্রুততার সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোতে চলমান বিপর্যকর ঘটনাগুলো বন্ধ করা: এসব তিক্ত ঘটনার মধ্যে ইয়েমেন পরিস্থিতি আজ গোটা বিশ্বের দুঃখ-কষ্ট ও প্রতিবাদের উৎস হয়ে আছে; মিয়ানমার ও অন্যান্য স্থানের মজলুমদের মতো নির্যাতিত সব মুসলিম সংখ্যালঘুর প্রতি দৃঢ় সমর্থন ঘোষণা করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দেয়া। এটি এমন এক জাতির প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা, যে জাতি তাদের দখল হয়ে যাওয়া মাতৃভূমির জন্য প্রায় ৭০ বছর ধরে সংগ্রাম করছে।

এসবই হলো আমাদের ওপর অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বিশ্বের জাতিগুলোর উচিত তাদের সরকারগুলোর কাছে এসব দাবি তুলে ধরা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের উচিত দৃঢ় মনোবল ও অকৃত্রিম ইচ্ছার আলোকে এসব দাবি বাস্তবায়নে চেষ্টা করা। এসব কাজের অর্থ হচ্ছে নিশ্চিতভাবে ঐশী ধর্মকে সাহায্য করা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এসব কাজে সাহায্য করবেন।

এগুলো হলো হজের শিক্ষার অংশ এবং আমি আশাকরি আমরা এসব শিক্ষা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারব। আমি দোয়া করি আপনাদের হজ কবুল হোক। আমি মিনা ও মসজিদুল হারামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি দোয়া করছি মহানুভব ও দয়ালু আল্লাহ যেন তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন।

ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।

সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী

৭ জিলহজ ১৪৩৮
iqna

captcha