
বার্তা সংস্থা ইকনা: ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে এবার হিন্দুদের কাছে নতুন চমক নিয়ে আসছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। জনগণের টাকা খরচ করে গুজরাতে বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তির পর এবার অযোধ্যায় রামমূর্তি গড়া নিয়ে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। উত্তেজনা নিরসনে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টকেও। এবার সেই অযোধ্যাতেই সরযু নদীর তীরে প্রায় ১০০ মিটার লম্বা রামের মূর্তি বানাতে প্রস্তুত যোগী আদিত্যনাথ সরকার।
যোগী সরকার যে ‘নয়া অযোধ্যা’ বানাতে চলেছেন, এই রামমূর্তি তার সবচেয়ে বড় অংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নায়েককে এই নিয়ে একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশেনও দেখিয়েছে রাজ্য পর্যটন দফতর। পর্যটন দফতরের পক্ষ থেকে এই মূর্তিকে ধর্মীয় পর্যটনের একটা অংশ বলেই দেখানো হয়েছে।
রাজ্যপাল রাম নায়েককে দেখান ভিডিও প্রেজেন্টেশনে রামমূর্তির উচ্চতা ১০০ মিটার দেখানো হয়েছে। তবে, সরকারি মতে এটা এখনো চুড়ান্ত নয়। ছোট-বড় হতেই পারে। উত্তরপ্রদেশ রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, এই ভিডিও প্রেজেন্টেশনটি রাজ্যপালকে দেখান রাজ্যের পর্যটন দফতরের মুখ্যসচিব অবনীশ কুমার।
ন্যাশান্যাল গ্রীণ ট্রাইবুন্যালের ছাড়পত্র পেলেই সরযু নদীর তীরে সরযুঘাটে গড়ে উঠবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রামমূর্তি। মুখ্যসচিব অবনীশ কুমার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতর থেকে পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। রাজ্যপালের সম্মতির পর তা ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নিতে পাঠানো হবে ন্যাশান্যাল গ্রীণ ট্রাইবুন্যালে।
ইতোমধ্যেই অযোধ্যায় সরযু নদীর তীরে ‘রামকথা গ্যালারি’ গড়ে তোলার একটা বড় পরিকল্পনা নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। যেখানে থাকবে একটি বড় অডিটরিয়াম এবং মানুষকে রাম-কথা জানানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম। রামকথা গ্যালারি গড়ে তোলার ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট বা ডিপিআর আগেই কেন্দ্রীয় পর্যটন দপ্তরে জমা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সেই প্রজেক্ট রিপোর্টে রামকথা গ্যালারি গড়ে তোলার জন্য বাজেট দেখানো হয়েছে প্রায় ১৯৫ কোটি ৮৯ লাখ রুপি। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ১৩৩ কোটি ৭০ লাখ রুপি উত্তরপ্রদেশ রাজ্য পর্যটন দপ্তরকে দিয়েছে। রামমূর্তি প্রকল্পও এই রাম-কথা গ্যালারির অংশ হিসাবেই গড়ে তোলা হবে বলে জানা গেছে।
আগামী ১৮ অক্টোবর বাবরি মসজিদের বিতর্কিত জমি থেকে ২ কিলোমিটারের মধ্যেই একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন রাজ্যপাল রাম নায়েক, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সহ অন্যান্যরা। রামের রাজ্যাভিষেকের জন্য অযোধ্যায় ফিরে আসার ঘটনাকে স্মরণ করেই এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওইদিনই রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী অযোধ্যার উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন শিলান্যাস করবেন। তার মধ্যে রামকথা গ্যালারির বিভিন্ন পরিকল্পনাও থাকছে। ওইদিন সরযু নদীর তীরে একটি নতুন ঘাটে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী সন্ধ্যারতিও করবেন বলে ঠিক করা আছে।
সম্ভবত: ওই দিনই জনগণের উদ্দেশ্যে রামমূর্তি তৈরির পরিকল্পনার কথা ঘোষণাও করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ইতোমধ্যেই বিজেপি ও হিন্দু সংস্থাগুলোতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রামমূর্তি তৈরির খবরে তুমুল উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে, রাজ্যের বিরোধী দলগুলো সমালোচনাও শুরু করে দিয়েছে। জনগণের করের অর্থ দিয়ে যোগী হিন্দুত্বের রাজনীতি করছেন বলেই বিরোধীদের অভিযোগ।
এর আগেও গুজরাতে ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র নামে নর্মদা নদীর তীরে সর্দার বল্লভভাই প্যাটালের ১৮২ মিটার উঁচু মূর্তি গড়াকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিল বিজেপি। এবারো রামমূর্তি গড়ার পরিকল্পনা শুনেই শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। একের পর এক মূর্তি গড়ে জনগণের করের অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ এনেছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলো।
তবে, বিরোধীদের অভিযোগ যাই থাকুক, গুজরাটের নর্মদা নদীর তীরে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তির মতই অযোধ্যায় সরযু নদীর তীরে রামমূর্তিও আগামীদিনে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে তা বলাই যায়। দুই মূর্তিকে কেন্দ্র করে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কতটা ফায়দা তুলতে পারে সেটাই এখন দেখার। আরটিএনএন