হযরত লোকমান একজন পণ্ডিত যার ব্যক্তিত্ব বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। কিছু লোক বিশ্বাস করেন যে তিনি একজন অসামান্য এবং নৈতিক পণ্ডিত ও জ্ঞানী ছিলেন; কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে তিনি নবী ছিলেন। কিন্তু কিছু লোক তাকে এমন একজন ক্রীতদাসও মনে করে যে তার বিশেষ নৈতিক বৈশিষ্ট্য এবং ভালো গুণাবলীর কারণে উচ্চ আধ্যাত্মিক অবস্থানে পৌঁছেছিল এবং এই কারণে তাকে তার মালিক মুক্ত করেছিল।
তবে লোকমানকে ঐতিহাসিকগণ মেনে নিয়েছেন; যদিও পৌরাণিক "লোকমান বিন আদ", "আযুপ", "বালাম বাউরা", "আখিয়ার" এবং "লোকমান মেয়মার" সহ কিছু ঐতিহাসিক এবং কিংবদন্তি চরিত্রের সাথে তার গল্পের মিল থাকার কারণে হযরত লোকমানকে তাদের একজন বলে বিবেচনা করেন।
হযরত লোকমানের বংশ সম্পর্কেও মতভেদ রয়েছে; কেউ কেউ তাকে আদ গোত্রের বলে মনে করেন, আবার কেউ কেউ তাকে বনী ইসরাইলের একজন বলে মনে করেন। কিছু লোক এও বিশ্বাস করে যে তিনি আবিসিনিয়া তথা হাবাশের একজন ক্রীতদাস ছিলেন।
লোকমান এমন একজন ব্যক্তি যিনি দাউদ (আ.)-কে বিচারের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন। লোকমানের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ছিল আল্লাহর সাথে কাউকেই শরীক না করা, মানুষের সামনে নম্রতা, ধীর গতিতে চলা, জীবনে সংযম, গভীর চিন্তা, নীরবতা, বিশ্বস্ততা, সত্যবাদিতা এবং মানুষের মতভেদ সমাধান করা।
পবিত্র কুরআনে লোকমান নামে একটি সূরা রয়েছে, যেখানে তিনি তার ছেলেকে ১০টি নৈতিক উপদেশ দিয়েছেন। আল্লাহর সাথে কাউকেই শরীক না করা, নামায কায়েম করা, ভালো কাজের আদেশ করা, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা, কষ্টে ধৈর্য্য, মানুষের সামনে নম্রতা, চলাফেরা করার ক্ষেত্রে মর্যাদা এবং জীবনে সংযম করা এবং কণ্ঠস্বরকে নীচু করা তার ছেলের প্রতি তার কিছু উপদেশ, যা সূরা লোকমানে উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও, ধর্মীয় গ্রন্থে হযরত লোকমান তার ছেলের প্রতি যে উপদেশ করেছন, সেই কথা উল্লেখ রয়েছে; অন্যান্য জিনিসের মধ্যে, ভ্রমণের বিষয়ে পরামর্শ করা, হাসি, অন্যকে দান করার ক্ষেত্রে উদার হওয়া, সঙ্গীদের সাহায্য করা, আমন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং সঙ্গীদের পরামর্শ দেওয়া প্রমুখ।
হযরত লোকমান বিশ্বাস করতেন যে একজন ভাল সঙ্গী হলেন এমন একজন যিনি সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করেন, কারণ তার জ্ঞান মানুষের জন্য উপকারী এবং আল্লাহর রহমত তাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়াও, লোকমানের মতে, এক হাজার বন্ধু থাকা একজন ব্যক্তির জন্য খুব কম এবং একটি শত্রু থাকা তার জন্য অনেক বেশি।
তবে লোকমান একজন সাধারণ মানুষ হলেও তার মানসিক ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা ছিল অত্যন্ত উচ্চ। হাদিসে উল্লেখ আছে যে, তার এক বন্ধু তাকে বলল: যদিও আপনি আমাদের মতো একজন মেষপালক; কিন্তু এই জ্ঞান আপনি কোথায় পেলেন এবং কেন পেলেন?! হযরত লোকমান বলেন: প্রথমত, আমার মধ্যে আল্লাহর ইচ্ছা এবং অন্যান্য গুণাবলী ছিল যা আল্লাহর অনুগ্রহের ভিত্তি হয়ে উঠেছিল এবং সেগুলো হল: বিশ্বস্ত হওয়া, সত্যবাদী হওয়া এবং যা আমার উপকারে আসে না সে বিষয়ে নীরব থাকা।