মিডল ইস্ট মনিটর সম্প্রতি একটি প্রবন্ধে লিখেছে: ইতিহাসে এমন অনেক লোক আছে যারা অংহকারের শিকার হয়ে ভাগ্যহারা হয়। তারা তাদের তৈরি ধ্বংসযজ্ঞের উপরে দাঁড়িয়ে আছে, এখনও মাথা উঁচু করে আছে, এখনও বিশ্বাস করে যে তারা আরেকটি নৃশংসতার মাধ্যমে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারবে। নেতানিয়াহু তার নামকে এমনই এক তালিকায় যুক্ত করেছেন।
কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের হত্যার ব্যর্থ প্রচেষ্টা কেবল একটি সাধারণ কৌশলগত ভুল ছিল না। এটি ছিল যুক্তি, মানবতার বিরুদ্ধে এবং এখনও অবশিষ্ট সামান্য কূটনীতির বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধের ডাক। কাতারে আক্রমণ করার অর্থ ছিল আরব বিশ্বের দিক থেকে ইসরায়েলের দিকে প্রসারিত একমাত্র হাতকেই কামড়ানো।
নেতানিয়াহু যা করেছেন তা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, এটি ছিল রাজনৈতিক আত্মহত্যা। এই আক্রমণের পরিণতি হবে ভয়াবহ এবং ইসরাইলকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে। নেতানিয়াহুর আর কোনও সতর্কবার্তা কোনও কাজে আসবে না। তিনি হতাশার জগতে আটকা পড়েছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী লেবানন, তুরস্ক বা কাতারে, যেখানেই হামাস নেতারা থাকবেন, সেখানেই আবারও হামলা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কিন্তু এটা অবশ্যই বলা উচিত যে নেতানিয়াহু যে অতল গহ্বর খুলে দিয়েছেন তা কেবল গাজাতেই নয় যেখানে তিনি পতিত হচ্ছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা সারা বিশ্বের মানুষের রাস্তায় ইহুদিবাদ-বিরোধী মিছিল দেখতে পাচ্ছেন। একসময় ইউরোপের রাজধানীগুলোতে পতাকার জন্য খ্যাত ইসরায়েল এখন সেখানে একজন বিতাড়িতের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইহুদিবাদী সৈন্যরা অভিশাপ পাচ্ছে। লন্ডন, বার্লিন, প্যারিস এবং নিউ ইয়র্কে প্রতি সপ্তাহে এই স্লোগান শোনা যায়। আমেরিকায়, যেখানে ইহুদিবাদীরা মনে করত এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ সেখানেও পরিস্থিতি বদলে গেছে। ছাত্ররা সমস্বরে তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। আমেরিকান ইহুদিরা কাঁদতে কাঁদতে বলে: "আমরা তোমাদের (ইসরায়েল) নামের সাথে একমত নই।"
নেতানিয়াহুর ক্লান্ত ও অকার্যকর লাঠি আর ভিন্নমতকে থামাতে পারবে না। জনগণ গাজার ধ্বংসাবশেষ যথেষ্ট দেখে ফেলেছে। ইহুদিবাদী রেজিমের মুখ থেকে মুখোশ খুলে গেছে। নেতানিয়াহুর দাবি যে তিনি পশ্চিম এশিয়াকে নতুন করে সাজিয়ে তুলবেন, তা কেবল একটি কল্পনা। আপনারা যে পরিকল্পনাগুলো করেছেন তা হল ধ্বংসের পরিকল্পনা; গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে, পশ্চিম তীরের আরও অনেক অংশ গ্রাস করা হয়েছে এবং সিরিয়া ও লেবাননের ভূমিতে বোমা হামলা করা হয়েছে। এই হঠকারি কল্পনাগুলো আশ্চর্যজনক।
নেতানিয়াহু পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের জন্য যা ডিজাইন করেছেন তা হল ইসরায়েলের সমাধিফলক। একসময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কৃত্রিম পোশাকে ঢাকা ইসরাইল এখন বর্ণবাদী শাসনব্যবস্থা, দুর্বৃত্ত শাসনব্যবস্থা এবং লজ্জাজনক দখলদার সেনাবাহিনী হিসেবে কু্খ্যাত। নেতানিয়াহু, তুমি রুবিকন পেরিয়ে গেছো, আর ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। সেতুগুলো পুড়ে গেছে। তুমি সদিচ্ছার শেষ চিহ্নও হারিয়ে ফেলেছো। ইতিহাস তোমাকে ক্ষমা করবে না।
নেতানিয়াহু, তুমি পশ্চিম এশিয়ার চিত্র নতুন করে আঁকতে পারবে না। তুমি শুধু ইসরায়েলের মৃত্যুর বাণী লিখছ। ইতিহাস তোমাকে মনে রাখবে না, একজন মহান রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, ইসরায়েলের রক্ষক হিসেবে নয়, বরং এমন একজন হিসেবে তোমার নাম লেখা থাকবে যে ইসরায়েলকে ধংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। #পার্স টুডে