IQNA

ইসলামে হারাম বলতে কী বোঝায়?

13:08 - September 15, 2025
সংবাদ: 3478070
ইকনা  - হারাম ইসলামী আইনশাস্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলোর অন্যতম এবং এটি এমন কর্মকে বোঝায় যা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ও পরকালে শাস্তির যোগ্য।

হারাম হল ইসলামী আইনশাস্ত্রের পাঁচটি ব্যবহারিক বিধানের অন্যতম। ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বা বিধান, মুস্তাহাব তথা আবশ্য-পালনীয় না হলেও যা পছন্দনীয় বা সুপারিশকৃত কর্ম বা দায়িত্ব, জায়েজ তথা বৈধ কর্ম ও দায়িত্ব, অপছন্দনীয় বা মাকরুহ বিষয়াদি এবং নিষিদ্ধ বা অবৈধ কর্ম হল ইসলামের ৫টি ব্যবহারিক বিধান।  হারাম বলতে সব ধরনের নিষিদ্ধ ও বেআইনি কর্ম বা আচরণকে বোঝায়। এই বিধান কুরআন ও বিভিন্ন হাদিসে পাওয়া যায়। আর এতে ব্যক্তিগত, নৈতিক, ইবাদতমূলক এবং সামাজিক আচরণের বিস্তৃত পরিসর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

হারাম সংক্রান্ত বিধানের উৎস

ইসলামী আইনবিদরা কুরআন ও মহানবী মুহাম্মাদ (সা)'র কথা, কাজ ও অনুমোদিত বিষয়াদি তথা হাদিসের বর্ণনা থেকে হারাম বিষয়াদির বিধান ও নির্দেশনা গ্রহণ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, মৃতদেহ, শুয়োরের মাংস এবং রক্ত ​​খাওয়া (সূরা আল-মায়িদা), সুদ (সূরা আল-বাকারা), জুয়া খেলা, মদ ও মদপান, উপহাস এবং গীবত করা (সূরা আল-হুজুরাত) স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিষয়গুলোর অন্যতম।

হারাম হওয়ার কারণ বা দর্শন

পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে ইসলামী বিধানগুলি প্রকৃত উপকার এবং ক্ষতির দর্শন-ভিত্তিক। যে কোনও কাজ যার পরিণতি হল উল্লেখযোগ্য ক্ষতি বা দুষ্কৃতির চলক ইসলামী বিধান অনুযায়ী তা নিষিদ্ধ, এমনকি যদি তা কিছু লোকের জন্য উপকারীও হয়।এই দুস্কৃতি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অথবা আধ্যাত্মিকও হতে পারে। শহীদ অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ মোতাহ্হা‌রীও মনে করেন যে পবিত্রতার মানদণ্ড কেবল শারীরিক ক্ষতির সঙ্গেই সম্পর্কিত নয়; বরং আধ্যাত্মিক ও নৈতিক প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়।

বিভিন্ন ধরনের হারাম 

হারাম বিষয় বা কাজগুলোকে নানা শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যেমন: 

-নিষিদ্ধ বিশ্বাস: যেমন শিরক, কুফর, কপটতা, ধর্মে অতিরঞ্জন এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া।

-ইবাদাত: যেমন নামাজ ত্যাগ করা, লোক-দেখানো ইবাদাত, ধর্মত্যাগ, মূর্তির কাছে কুরবানী করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা।

- নীতি-নৈতিক: যেমন মিথ্যা কথা বলা,  কারো অনুপস্থিতিতে তার নেতিবাচক দিক তুলে ধরা তথা গীবত করা, সন্দেহ করা, বিশ্বাসঘাতকতা করা, বিশ্বাসীদের উপর নির্যাতন, গুপ্তচরবৃত্তি, অপবাদ দেয়া।

-সামাজিক: যেমন দুর্নীতি, নিপীড়ন, মসজিদ ধ্বংস, সত্য গোপন করা।

-অর্থনৈতিক: যেমন ঘুষ, সুদ, জুয়া, সম্পত্তি দখল, মাপ বা ওজনে কম দেয়া ।

-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা: যেমন গুপ্তচরবৃত্তি, গোপনীয় তথ্য প্রকাশ, বিরোধের বীজ বপন।

যৌন: যেমন ব্যভিচার, সমকামী যৌনকর্ম, অজাচার তথা নিষিদ্ধ সম্পর্কের কারো সঙ্গে বিয়ে করা।

ভোজ্য: যেমন শুয়োরের মাংস, মৃতদেহ, রক্ত, মদ, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাই করা প্রাণী।

হারাম সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের নানা লক্ষ্য

মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, সমাজকে সুরক্ষা দেয়া ও সুসংগঠিত করা, মানুষকে পরীক্ষা করা এবং পাপীদের শাস্তি দেয়ার মতো নানা লক্ষ্য নিয়ে হারাম সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র ও উপকারী সবকিছুকেই হালাল করেছেন এবং মন্দ ও ক্ষতিকর সবকিছুকেই হারাম করেছেন। এসবের অনেক কিছুই স্পষ্ট ও অনেক কিছুর ক্ষতি এখনও স্পষ্ট নয়, কিন্তু সেসব এড়িয়ে চলতে হবে খোদায়ি বিধান হিসেবে। 

ইসলামে হারাম কেবল একটি নিষেধাজ্ঞাই নয় একইসঙ্গে এই বিধান মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশের জন্য একটি শিক্ষামূলক হাতিয়ার, যা তাদেরকে সুস্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার এবং আল্লাহর নৈকট্যের দিকে পরিচালিত করে। #
 

পার্স টুডে/

captcha