IQNA

সৃষ্টিকর্তার বিস্ময়কর সৃষ্টি কাঠঠোকরা

14:53 - September 17, 2025
সংবাদ: 3478083
ইকনা- প্রকৃতির প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি শাখায়, প্রতিটি অণুজীবের গঠনে লুকিয়ে আছে মহান স্রষ্টার কুদরতের অম্লান দৃষ্টান্ত। মানুষ যখন গভীরভাবে চোখ মেলে তাকায়, তখন অবাক বিস্ময়ে তার হৃদয় কেঁপে ওঠে। এমনই এক বিস্ময়কর নিদর্শন হলো কাঠঠোকরার জিহ্বা। উল্লেখ্য, কারো কারো মতে এই কাঠঠোকরা পাখিগুলোই হলো সোলাইমান (আ.)-এর হুদহুদ পাখির প্রজাতির একটি শাখা।
ক্ষুদ্র এক পাখির দেহের সঙ্গে মিলিয়ে এর গঠন, দৈর্ঘ্য ও কার্যকারিতা বিজ্ঞানীদেরও অবাক করে দেয়। এটি একেবারেই সাধারণ কোনো অঙ্গ নয়, বরং আল্লাহর সৃষ্টিশৈলীর এক অনন্য দলিল।
জিহ্বার দৈর্ঘ্য ও অনন্য গঠন
 
কাঠঠোকরার জিহ্বা তার ঠোঁটের দৈর্ঘ্যের প্রায় তিন গুণ পর্যন্ত লম্বা হয়। শুধু দৈর্ঘ্য নয়, জিহ্বার গঠনও অত্যন্ত চমকপ্রদ।
 
 
এটি গলার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার খুলির চারপাশ দিয়ে পাক খেয়ে আবার ঠোঁটের কাছে ফিরে আসে। যেন মাথার ভেতরে আল্লাহ তাআলা বিশেষ কুণ্ডলী বসিয়ে দিয়েছেন। এই কুণ্ডলাকার গঠন জিহ্বাকে শুধু লম্বা করার জন্য নয়, বরং গাছে ঠোকর দেওয়ার সময় মাথা ও মস্তিষ্ককে আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্যও প্রয়োজন।
এই বিশেষ কুণ্ডলীর কারণে কাঠঠোকরা যখন গাছে গর্ত খোঁড়ে বা কীটপতঙ্গ শিকার করে, তখন জিহ্বা গভীর ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে।
 
ফলে পাখিটি তার খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘এটা আল্লাহরই সৃষ্টি-নৈপুণ্য, যিনি সব কিছুকেই করেছেন সুষম।’
(সুরা : আন-নামল, আয়াত : ৮৮) 
 
কাঠঠোকরার জিহ্বা এ আয়াতের জীবন্ত উদাহরণ, যা আমাদের দেখায় যে প্রতিটি সৃষ্টি নিখুঁত এবং তাতে লুকিয়ে আছে সৃষ্টিকর্তার অশেষ প্রজ্ঞা।
 
শিকার ধরার অসাধারণ পদ্ধতি
 
জিহ্বার শেষ প্রান্তে থাকে ক্ষুদ্র কাঁটার মতো আঁশ। আর কিছু প্রজাতির কাঠঠোকরার জিহ্বায় এমন আঠালো পদার্থ থাকে, যা শিকারের প্রতি দারুণ কার্যকর।
 
 
গাছের ভেতরে লুকিয়ে থাকা পোকামাকড় বা কীট এই আঠালো পদার্থের কাছে বাধ্য হয়ে আটকে পড়ে, আর কাঠঠোকরা সহজেই তা তুলে আনে। এ কৌশল ছাড়া দীর্ঘ জিহ্বা থাকা তেমন কার্যকর হতো না।
এখানে লক্ষণীয় যে জিহ্বার দৈর্ঘ্য, কুণ্ডলী পাকানো কাঠামো, আঠালো পদার্থ ও আঁশ—সব কিছু একে অপরের সঙ্গে নিখুঁতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোনোটিই অনুপযুক্ত হলে কাঠঠোকরার খাদ্য সংগ্রহে সমস্যা হতো। এটি নিখুঁত সৃষ্টির এক দৃষ্টান্ত।
 
আঘাত সহ্য করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা
 
কাঠঠোকরা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০ বার গাছে ঠোকর দেয়। প্রতিটি আঘাত মানুষের মাথায় জোরে হাতুড়ি মারার সমান। তবু পাখিটি মাথা ব্যথা বা মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতিতে ভোগে না। কারণ খুলির ভেতর রয়েছে নরম টিস্যু ও কুশনজাতীয় স্তর, যা প্রতিটি আঘাত শোষণ করে। এ ছাড়া জিহ্বা মাথার চারপাশে পাক খেয়ে থাকায় অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়।
 
বিজ্ঞানীরা বলেন, কাঠঠোকরার জিহ্বা শুধু খাবার সংগ্রহের কাজে নয়, বরং মাথার ভারসাম্য বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ। একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনা ছাড়া এটি সম্ভব নয়। প্রতিটি উপাদান একে অপরের সঙ্গে সমন্বিত, এমন নিখুঁত সমন্বয় প্রকৃতির ক্ষুদ্রতম প্রাণীতেও আমাদের ঈমানকে জাগ্রত করে।
 
সৃষ্টির প্রতি ঈমান ও কোরআনের দিকনির্দেশ মানবজাতি যখন প্রকৃতির নিখুঁত নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করে, তখন কোরআনের আয়াত তাদের মনে প্রমাণ হয়ে আসে, ‘তোমাদের নিজেদের মধ্যেই (আমার নিদর্শন আছে), তবু কি তোমরা অনুধাবন করবে না?’
 
(সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২১)
 
কাঠঠোকরার জিহ্বা শুধু একটি অঙ্গ নয়, এটি আল্লাহর নিখুঁত পরিকল্পনার এক জীবন্ত প্রতীক। ক্ষুদ্রতম প্রাণী থেকেও আমরা শিখতে পারি, প্রত্যেকটি সৃষ্টির পেছনে প্রজ্ঞা ও উদ্দেশ্য আছে। কাঠঠোকরা প্রতিদিন যখন গাছে ঠোকর দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে, তখন তা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সৃষ্টি শুধু দৈব নয়, বরং এটি আল্লাহর পরিকল্পনা ও কুদরত।
 
আল্লাহ বলেন, ‘এটাই আল্লাহর সৃষ্টি। এর বাইরে যারা আছে তারা কী সৃষ্টি করেছে, আমাকে দেখাও।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১১)
 
কাজেই কাঠঠোকরার জিহ্বা শুধু এক জীবন্ত বিস্ময় নয়, এটি মানুষের জন্য এক অবিস্মরণীয় শিক্ষা, ঈমানের আহবান এবং সৃষ্টিকর্তার অমিত নৈপুণ্যের প্রমাণ।
 
লেখক :  শাব্বির আহমদ, শিক্ষার্থী, তাকমিল ফিল হাদিস, জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা
captcha