IQNA

ইসলামে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা ও অধিকার

12:48 - September 29, 2025
সংবাদ: 3478156
ইকনা - সামাজিক সমীকরণে নারী ও পুরুষের অবস্থান এবং সামাজিক পরিবর্তনে উভয়ের ভূমিকা মানব চিন্তার জন্য দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ।
ইতিহাস জুড়ে, পুরুষ ও নারীর মর্যাদার প্রতি ব্যক্তিগত ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, যা কখনও কখনও লিঙ্গের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের দিকে পরিচালিত করে। যে সমাজে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল, সেখানে নারীরা অনেক মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজে নারীর মর্যাদা খুবই খারাপ ছিল এবং নারীদের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হত।
 
একটি নিখুঁত মানব আত্মার অধিকারী
 
ইসলাম পুরুষদের মতো নারীদেরও একটি নিখুঁত মানব আত্মা, ইচ্ছাশক্তি এবং স্বাধীনতার অধিকারী বলে মনে করে এবং তাদেরকে বিবর্তনের পথে পরিপূর্ণতাকামী হিসেবে দেখে, যা সৃষ্টির লক্ষ্য। মহান আল্লাহ উভয়কেই একই সারিতে স্থাপন করেছেন ও "হে মানবজাতি" এবং "হে ঈমানদারগণ" সম্বোধন করে তাদের সম্বোধন করলেন এবং তাদের জন্য শিক্ষামূলক, নৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক কর্মসূচিকে অপরিহার্য করে তুললেন।
 
সুরা গাফিরের ৪০ তম আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তথায় তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে।
 
এ ছাড়াও সুরা নাহলের ৯৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।- এ থেকে বোঝা যায় ইসলাম নারী ও পুরুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখে। 
 
স্বাধীন ও মুক্ত সত্তা
 
নারী যে পুরুষের মতই স্বাধীন ও মুক্ত সত্তা তাও পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, প্রত্যেকেই তার কর্ম অনুযায়ী ফল পাবে। (সুরা মুদাসসির-৩৮) কিংবা যে কেউ সৎকর্ম করে, তা তার নিজের কল্যাণের জন্যই করে, আর যে কেউ মন্দ কাজ করে, তা তার নিজের বিরুদ্ধেই করে (সুরা ফুসিলাত-৪৬)। 
এটি সকল ব্যক্তির জন্য, পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই এই স্বাধীনতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে, যেহেতু স্বাধীনতা ইচ্ছা এবং পছন্দের পূর্বশর্ত, তাই ইসলাম সকল অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে এই স্বাধীনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সকল ধরণের আর্থিক সম্পর্ককে নারীর জন্য বাধামুক্ত বলে মনে করে এবং তাদেরকে তাদের নিজস্ব আয় এবং মূলধনের মালিক বলে মনে করে।
 
সুরা নিসার ৩২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর এ থেকেই বোঝা যায় ইসলামী নারী ও পুরুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে কোনো ভেদাভেদ বা বৈষম্য করেনি। 
 
শ্রমবিভাগ
 
ইসলাম মানবিকতার দিক থেকে পুরুষ ও নারীকে সমান মনে করে, কিন্তু অন্যান্য দিক যেমন সামাজিক কর্তব্যের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যার অর্থ কোনওভাবেই বৈষম্য বা আইনি বৈষম্য নয়। বরং, এই পার্থক্যগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামের লক্ষ্য হল শ্রমকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং বন্টন করা যাতে তাদের প্রত্যেকে তাদের কর্তব্য সর্বোত্তমভাবে পালন করতে পারে। এই পার্থক্যগুলো আসলে সমাজে এই দুটি লিঙ্গের প্রত্যেকের সামাজিক এবং প্রাকৃতিক কার্যকারিতাকে সর্বোত্তম করে তোলার জন্যই করা হয়েছে।
 
পরিশেষে, কুরআন নারীদের স্বাধীন অধিকার ও কর্তব্যসম্পন্ন মানুষ হিসেবে মর্যাদা স্বীকার করে এবং জোর দিয়ে বলে যে, মহান আল্লাহর দৃষ্টিকোণ থেকে, মানবিক মূল্যবোধে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। অতএব, মহান আল্লাহর দৃষ্টিতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণকারী বিষয় হল ধার্মিকতা এবং সঠিক আচরণ, লিঙ্গ নয়। পার্সটুডে
captcha