IQNA

মোসাদ ও ‘ইনোন পরিকল্পনা’: সিরিয়ায় ইসরাইলি প্রকল্প নিয়ে কী জানা যায়?

12:36 - September 15, 2025
সংবাদ: 3478068
ইসরাইলের কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী সিরিয়াকে ভেঙে ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত করার ধারণা ১৯৫০-এর দশক থেকেই চালু। তবে এটি সুস্পষ্ট রূপ পায় ১৯৮২ সালে ইসরাইলি কূটনীতিক উদেদ ইনোন প্রণীত তথাকথিত ‘ইনোন পরিকল্পনা’-তে। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল, সিরিয়াকে বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এলাকায় বিভক্ত করে কয়েকটি ছোট রাষ্ট্র গঠন করা, যাতে এই রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের প্রভাবাধীন মিত্রে পরিণত হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়াকে বিভক্ত করার ঘোষিত ও স্পষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইসরাইল দক্ষিণে সাম্প্রদায়িক সংঘাত উস্কে দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কিত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঐকমত্যকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট।

তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ইসরাইলের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশে আঘাত হেনেছে এবং তাদের ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনাকে পশ্চাদপসরণে বাধ্য করছে। কারণ, প্রয়োজনীয় সহায়ক উপাদান সবসময় অনুকূলে নেই এবং সিরিয়া সেগুলো অতিক্রম করতে সক্ষম হতে পারে।

দ্রুজ প্রাচীর’: ধারণা থেকে বাস্তবায়ন

সিরিয়ার বহু ধর্মীয় ও জাতিগত গঠন এবং এর ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে দেশটি বিভক্ত করার লক্ষ্য ইসরাইলের বহু পুরনো স্বপ্ন। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, পরিকল্পনার অংশ ছিল দ্রুজ প্রাচীর তৈরি করাঅর্থাৎ সিরিয়ার দক্ষিণে দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে ইসরাইলি স্বার্থে একটি নিরাপত্তা বলয় গঠন।

পরিকল্পনায় ছিল: জাবল আল-শেইখ অঞ্চলের দ্রুজ গ্রামগুলো থেকে সশস্ত্র দল গঠন, আধুনিক অস্ত্রে তাদের সজ্জিত করা, নেতৃত্ব দেওয়া ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত দ্রুজ সদস্যদের হাতে, দখলকৃত ভূখণ্ডে অপারেশন রুম স্থাপন করে সমন্বয় সাধন।

موساد و «طرح ینون»؛ درباره پروژه اسرائیل در سوریه چه می‌دانیم؟

পরে এ দলগুলো সুইদা প্রদেশ ও গোলান মালভূমির দ্রুজদেরও অন্তর্ভুক্ত করে শক্তিশালী হবে এবং দক্ষিণ সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় (কুনেইত্রা থেকে ইয়র্মুক উপত্যকা পর্যন্ত) ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে অংশ নেবে।

সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জনগণকে উচ্ছেদ ও বাস্তুচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যদিও আপাতত সীমিত আকারে। সিরিয়ার বেদুইন সম্প্রদায় ইতোমধ্যেই এ ধরনের উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। লেবাননের দ্রুজ নেতা ওয়ালিদ জুম্বলাতও সিরিয়ায় সফরের সময় ইসরাইলের এই পরিকল্পনা নিয়ে সতর্ক করেছেন।

অবকাঠামো প্রস্তুতির ধাপ

১. বিভিন্ন অঞ্চলে স্বশাসনের দাবি উসকে দেওয়া, যাতে দামেস্ক সরকারের সামান্য ভুলও বৈধতা পায়।
২. গোলান মালভূমিতে দ্রুজদের জন্য ইসরাইলি কৃষি প্রকল্পে চাকরি তৈরি করে আবেগিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৩. সীমান্ত এলাকার কৃষিজমি ও পশুচারণ সীমিত করে জনগণকে স্থানান্তরে বাধ্য করা।
4. দক্ষিণ সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি ও নজরদারি অবকাঠামো তৈরি করা।

সব মিলিয়ে, ইসরাইল একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়ন করছে যা সিরিয়ার ভূ-রাজনীতিকে নতুনভাবে সাজাবে। ইদিয়োথ আহারোনোথ পত্রিকা জানিয়েছে, ইসরাইলি সামরিক নীতিতে এখন তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার প্রথম ধাপ হলো সীমান্তে বড় ঘাঁটি ও কৃত্রিম উপত্যকা তৈরি করে বিভাজন বাড়ানো।

موساد و «طرح ینون»؛ درباره پروژه اسرائیل در سوریه چه می‌دانیم؟

এই পরিস্থিতিতে দামেস্ক সরকারের প্রয়োজন কেবল সামরিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারভিত্তিক প্রতিরোধ কৌশল। বাস্তবসম্মত সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় সংলাপের সম্প্রসারণ, সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাএসবই সিরিয়ার ঐক্য রক্ষার জন্য জরুরি, যাতে ইসরাইলের বিভক্তির পরিকল্পনা সফল না হয়। 4302598#

 

captcha