বার্তা সংস্থা ইকনা: মিয়ানমারের সত্যানুসন্ধানী কমিটি বুধবারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান কফি আনানের নিকটে আরাকান প্রদেশে সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিবেদনটি পেশ করে। তবে এই প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের আরাকান প্রদেশের মুসলমানদের উপর কোন প্রকার জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্য, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং অত্যাচার করা হয়নি।
মিয়ানমারের এই কমিটি তাদের পেশকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, কথিত ধর্ষণের, অবৈধ আটক রাখা, নির্যাতন এবং সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাসগৃহে অগ্নিসংযোগের ব্যাপারে কোন দলিল ও প্রমাণ নেই এবং এর কারণে কেউ এই দাবীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না।
সত্যানুসন্ধানী কমিটি দাবী করেছে, গ্রামবাসী এবং মুসলিম নারীদের সাথে সাক্ষাতকারে দেখা গিয়েছে উক্ত এলাকায় যেসকল মুসলমান মসজিদে যেত তাদের সংখ্যা হ্রাস পায়নি; বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি 'মং ডও' এলাকায়ও মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ পরিচালক ফিল রবার্টসন 'ফিল রবার্টসন' আনাতোলিয়া সংবাদ সংস্থা সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন: মিয়ানমারের সত্যানুসন্ধানী কমিটি আরাকান প্রদেশের মুসলমানদের সকল প্রকার অধিকার লঙ্ঘনের বিষয় অস্বীকার করেছে। তাদের এই প্রতিবেদনটি অপ্রত্যাশিত এবং ত্রুটিপূর্ণ ও প্রাক পরিকল্পিত।
রবার্টসন বলেন: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সহিংসতা বন্ধের জন্য ধারাবাহিকভাবে দাবি করেছে। সত্যানুসন্ধানী কমিটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখ বন্ধ করার জন্য সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক এবং জাল প্রতিবেদন পেশ করেছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আরাকান প্রদেশে মুসলমানদের নিধন করার জন্য অপারেশন চালিয়ে অনেককে গ্রেফতার করেছে। সেনাবাহিনীর এই হামলায় অনেকে নিহত ও আহত হয়েছে।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলার শুরু থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০০ জন মুসলমান নিহত হয়েছে। অথচ মিয়ানমার সরকার শুধুমাত্র ৮৬ জান মুসলমান নিহত হয়েছে বলে দাবী করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জরিপ অনুযায়ী, জীবন বাঁচানোর জন্য প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা সংকট পরিসমাপ্তির জন্য প্রায় ১৩ জন নোবেলজয়ী জাতিসংঘের নিকট আবেদন করেছে।
মিয়ানমার সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশের অবৈধ মুসলিম অভিবাসী হিসেবে গণ্য করে। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা মুসলমানদের "বিশ্বের নিপীড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘু" হিসেবে অভিহিত করেছে।
২০১২ সালের জুন মাস থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার শুরু হয়। এপর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান নিজেদের জীবন রক্ষার্থে প্রতিবেশী দেশসমূহে আশ্রয় নিয়েছে।
১৯৮২ সাল থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান নাগরিক অধিকার ছাড়াই আরাকান প্রদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।