 
                          
ইসলামের সূচনালগ্নে নবী করিম (সা.) মক্কার সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে আহ্বান জানালেন, হে বনু ফিহর, হে বনু আদি, এভাবে কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রকে। এতে সব নেতৃস্থানীয় লোক একত্র হয়। কুরাইশদের সঙ্গে আবু লাহাবও ছিল। অতঃপর নবী করিম (সা.) বলেন, যদি আমি বলি যে পাহাড়ের অন্য প্রান্তে শত্রুসৈন্য অবস্থান করছে। ওরা যেকোনো সময় তোমাদের ওপর হামলা করতে প্রস্তুত। তোমরা কি সে কথা বিশ্বাস করবে? সবাই বলল, হ্যাঁ, বিশ্বাস করব। কারণ আপনাকে আমরা কখনো মিথ্যা বলতে শুনিনি। তখন তিনি বলেন, আমি তোমাদের কঠিন আজাবের ভয় প্রদর্শন করছি। আবু লাহাব বলল, তুমি ধ্বংস হও। এ কথা বলার জন্য তুমি আমাদের এখানে ডেকেছ? তখন আল্লাহ তাআলা সুরা লাহাব নাজিল করেন। সেখানে বলা হয়, ‘আবু লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৭০)
রাসুল (সা.)-এর পুত্র আবদুল্লাহ (উপনাম ত্বাইয়েব বা তাহের) মারা গেলে আবু লাহাব খুশিতে বাগবাগ হয়ে সবার কাছে গিয়ে বলে, মুহাম্মদ এখন ‘লেজকাটা নির্বংশ’ হয়ে গেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে মা ফাতিমা (স. আ.)এর শানে সূরা কাউসার নাজিল হয়।
হজের মৌসুমে আবু লাহাব রাসুল (সা.)-এর পিছে লেগে থাকত। যেখানেই রাসুল (সা.) দাওয়াত দিতেন, সেখানেই সে তাঁকে গালি দিয়ে লোকদের ভাগিয়ে দিত এবং বলত, ‘এ লোকটি বিধর্মী, মিথ্যাবাদী। তোমরা এর কথা বিশ্বাস কোরো না।’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা, হাদিস : ১৫৯)
এভাবে রাসুল (সা.)-এর ওপর সে একের পর এক নির্যাতন অব্যাহত রাখে। অবশেষে আবু লাহাবের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়াবি গজব নেমে আসে। আবু লাহাবের মৃত্যু অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও জঘন্যভাবে হয়। বদর যুদ্ধের সাত দিন পর তার গলায় প্লেগের ফোঁড়া দেখা দেয়। সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের লোকেরা তাকে নির্জন জায়গায় ফেলে আসে। সেখানে ধুঁকে ধুঁকে তার মৃত্যু হয়। তার লাশ পর্যন্ত কেউ স্পর্শ করেনি। শেষ পর্যন্ত দেহ পচতে শুরু করলে গর্ত খুঁড়ে চাকর দ্বারা পায়ে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে সে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেওয়া হয়। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ২৫২-২৫৩)
আবু লাহাবের স্ত্রী ছিল আবু সুফিয়ানের বোন আরওয়া অথবা আওরা ওরফে উম্মে জামিল অর্থাৎ সুন্দরের উৎস। সেও স্বামীর একান্ত সহযোগী ছিল এবং সর্বদা রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে গিবত ও নিন্দাবাদে মুখর থাকত। চোগলখুরি ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে সংসারে বা সমাজে অশান্তির আগুন ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিকে আরবদের পরিভাষায় ‘খড়িবাহক’ বলা হতো। কোরআনে মহান আল্লাহ তার এই কুকর্ম প্রকাশ করে দেন।
একদিন আবু লাহাবের পুত্র উতায়বা বিন আবু লাহাব এসে রাসুল (সা.)-এর নিকটবর্তী হয়ে বলল, আমি সুরা আন-নাজমের প্রথম দুই আয়াত অস্বীকার করি। আয়াত দুটি হলো—‘নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ১-২)
এ কথা বলে একটা হেঁচকা টানে রাসুল (সা.)-এর গায়ের জামা ছিঁড়ে দিল এবং থুথু নিক্ষেপ করল। রাসুল (সা.) তখন তাকে বদদোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহ, তুমি এর ওপর তোমার কোনো একটি কুকুরকে বিজয়ী করে দাও।’ কিছুদিন পর উতায়বা সিরিয়ায় ব্যাবসায়িক সফরে গেলে সেখানে ‘জারকা’ নামক স্থানে রাত্রি যাপন করে। এমন সময় হঠাৎ একটা বাঘকে সে তাদের চারপাশে ঘুরতে দেখে ভয়ে বলে উঠল, ‘আল্লাহর কসম! এ আমাকে খেয়ে ফেলবে। এভাবেই মুহাম্মদ আমার বিরুদ্ধে দোয়া করেছিল।’ পরদিন সকালে বাঘ এসে সবার মধ্য থেকে তাকে ধরে নিয়ে ঘাড় মটকে হত্যা করে। (মুখতাসার সিরাতে রাসুল : ১/১৩৫)
এভাবে আবু লাহাব, তার স্ত্রী আরওয়া ওরফে উম্মে জামিল ও তাদের পুত্র উতায়বার নির্যাতনের প্রতিকার মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কার্যকর হয়।