মুসলিমরা এ দেশে আসার পর তাদের সব মানবিক অধিকার প্রদান করা হয় এবং দলিতরা ব্রাহ্মণদের সমপর্যায়ের সামাজিক মর্যাদা লাভ করে। ইসলামের ধারক-বাহক দলটি সর্বত্র ঘোষণা করছিল যে প্রতিটি মানুষের উচিত এক ও অদ্বিতীয় মহান আল্লাহর কাছে বিনীত হওয়া। পৃথিবীর সব মানুষ আল্লাহর কাছে সমান। আল্লাহর দরবারে কারো ওপর কারো শ্রেষ্ঠত্ব নেই—শুধু খোদাভীতি ছাড়া। আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন ধূলিকণার মতো। (ডাব্লিউ ডাব্লিউ হান্টার, দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমানস)
ভারতবর্ষের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ যাদুনাথ সরকার। ভারতের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বই পাঠ্যসূচিতে আছে। তিনি কলকাতার ‘আল-হিন্দুল ওয়ায়িইয়াহ’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর ‘আল-ইসলামু ফিল-হিন্দ’ প্রবন্ধে ভারতবর্ষে মুসলমানের ১০টি বিশেষ অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন। যার কয়েকটি আমাদের আলোচনায় গত হয়েছে। আর অতিরিক্ত যা বলেছেন তা হলো—
১. ভারতকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা।
২. রাজনৈতিক ঐক্য, পোশাক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে তোলা—বিশেষত, উচ্চ শ্রেণির ভেতর।
৩. একটি প্রাশাসনিক রাষ্ট্রীয় ভাষা এবং প্রমিত শাস্ত্রীয় লেখন পদ্ধতির উদ্ভব। অবশ্য এই ভাষার উন্নয়ন ও উৎকর্ষে মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ছিল।
৪. কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে আঞ্চলিক ভাষাগুলোর উন্নয়ন সাধন, যেন রাষ্ট্রের সুখ-শান্তি বজায় থাকে এবং সাহিত্যের উন্নতি ও তার প্রসার ঘটে।
৫. নতুন করে সমুদ্র বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত করা। যা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল বা হারিয়ে গিয়েছিল। এটি মূলত দক্ষিণ ভারতের অধীনে ছিল।
৬. ভারতের জন্য নৌ-বাহিনী ও বহর তৈরি করা ইত্যাদি।
সমকালের খ্যাতিমান লেখক এন সি মেহতার একটি মন্তব্য দিয়ে এই অধ্যায়ের আলোচনা শেষ করতে চাই। তিনি তাঁর...‘ইন্ডিয়ান সিভিলাইজেশন অ্যান্ড ইসলাম’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ইসলাম ভারতবর্ষের জন্য আলোর মশাল নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, যা ভারতীয়দের অন্ধকার জীবনকে আাালোকিত করেছে এমন সময়—যখন প্রাচীন সভ্যতা পতন ও ধ্বংসের মুখে ছিল। উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও চারিত্রিক উৎকর্ষ জটিল চিন্তা-দর্শনে পরিণত হয়েছিল। রাজনৈতিক অঙ্গনের চেয়ে চিন্তার জগতে ইসলামের বিজয় ছিল বিস্তৃত ও সুদূরপ্রসারী। যেমন—অন্য অঞ্চলেও হয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এ দেশে ইসলামের ইতিহাস রচনা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। ফলে প্রকৃত ইসলাম পর্দার অন্তরালে রয়ে গেছে এবং ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে তার দখলদারিত্ব ও ভীতি প্রদর্শনের কালো অক্ষর। ভারতবর্ষে মুসলমানদের অসামান্য অবদান দৃষ্টির আড়ালেই রয়ে গেছে।’
‘আল মুসলিমুনা ফিল-হিন্দ’ থেকে
আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর