IQNA

বঙ্গদেশের উদ্দেশ্যে মহাকবির রচিত “ক্বান্দে পর্সী”

19:03 - May 12, 2022
সংবাদ: 3471842
তেহরান (ইকনা): এটা মহাকবি হাফেযের বিখ্যাত কবিতা যা তিনি রচনা করে বাঙ্গালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বাধীন নৃপতি সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের কাছে প্রেরণ করেছিলেন।

এটা মহাকবি হাফেযের বিখ্যাত কবিতা যা তিনি রচনা করে বাঙ্গালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বাধীন নৃপতি সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। সুলতান তাঁকে বাংলায় আসার দাওয়াত দিলে তিনি ( হাফেয ) এ দেশে আসার অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সুলতান ও বঙ্গবাসীর উদ্দেশ্যে প্রায় ৭২৩ বছর আগে এ গযল রচনা করেন। গযলটি দিওয়ানে হাফেযের ( হাফেযের রচনা সমগ্র ) ২২৫ নং গযল । সম্পূর্ণ গযলটির অনুবাদ নীচে পেশ করা হল। হাফেযের এ গযল থেকে পারস্য ( ইরান ) ও বাঙ্গালার ( বাংলাদেশ ও সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল ) মধ্যকার  নয় শতাব্দীর সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক বন্ধন স্পষ্ট হয়ে যায় এবং এ বন্ধন চির অটুট থাকুক।

 

ক্বান্দে পর্সী ( মিষ্টি ফার্সী ভাষা)

মূল : শামসুদ্দীন মুহাম্মদ হাফেয শীরাযী ( মৃ : ৭২০ হিজরী )

অনুবাদ : মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

সক্বী হাদীসে সার্ভো গোলো ললেহ্ মীরাভাদ্

সাকী! সার্ভ, ফুল ও লালার ( টিউলিপ) চলছে চর্চা ( আলোচনা )

 

ভীন্ বাহ্স্ ব সা-ল-সেয়ে ঘাস্ - সলেহ্ মীরাভাদ্

(পানপিয়ালা ) ধৌত করিনীত্রয় সহ চলছে এ চর্চা

 

মেই দেহ্ কে নৌআরুসে চামান্ হাদ্দে হোস্ন্ ইয়ফ্ত্

মদ দাও ( মেই দেহ্ = মদ ঢালো ) ,  তৃণ দুর্বার চত্বরের নববধুসম ঐ রক্তিম গোলাপ যে এখন প্রস্ফুটিত হয়ে সৌন্দর্যের চূড়ায় গেছে পৌঁছে

 ( এমন অনিন্দ্য সুন্দর মুহূর্ত ও ক্ষণ হচ্ছে খোদা প্রেম ও মারেফাতের শরাব পানের উপযুক্ত সময় )

 

করে ঈন্ যামন্ যে সান'আতে দাল্ললেহ্ মীরাভাদ্

যুগের সব কাজ কারবার (কূটনী নারী বৎ ) মদিরার চাতুর্য্য ও কূটকৌশলেই ( সম্পন্ন ) হচ্ছে।

(( স্রষ্টা পরিচিতি ও মারেফাতের নির্জলা নির্ভেজাল শরাব ও সূরা করিৎকর্মা পরিবেশনকারীর নিপুণ হস্তে যুগের সকল কর্ম ও বিষয় সুসম্পন্ন  হয়ে যাবে । ))

 

শেক্কার শেকান্ শাভান্দ্ হামেয়ে তূতিয়নে হেন্দ্

মিষ্টিমুখ (ও মিষ্টি ভাষী ) হবে ভারতের তোতারা ( কবিগণ )

 

যীন্ ক্বান্দে পর্সী কে বে বাঙ্গলেহ্ মীরাভাদ্

ফার্সীর এ মিছরি খণ্ড নিয়ে যা যাচ্ছে বাঙ্গালায়

 

থেইয়ে মাকন্ বেবিনো যামন্ দার সোলুকে শে'র্

দেখো স্থান কালের গণ্ডি ও পরিসরে কাব্য ও কবিতার পরিক্রমা

( প্রত্যক্ষ কর যে কিভাবে কাব্য ও কবিতা স্থান - কাল ভেদে উৎকর্ষ ও উন্নতির ধাপগুলো অতিক্রম করছে )

 

কেঈন্ থেফ্ল্ য়েক্ শাবেহ্ রাহে য়েক্ সলেহ্ মীরাভাদ্

অথচ নবজাতক এ শিশু ( হাফেযের কবিতা যা এখনও শৈশবেই রয়েছে তা ) যে এক বছরের পথ করবে এক রাতে  অতিক্রম !

 

অন্ চাশ্মনে জদোভনেয়ে অবেদ্ ফেরীব্ বীন্

ছলনাময়ী যাদুকরী ঐ নয়নযুগল দেখ যা তাপসরেও দেয় ধোঁকা

 

কেশ করেভনে সেহর যে দোম্বলেহ্ মীরাভাদ্

আর যার পশ্চাদ্ধাবনে যায় ইন্দ্রজাল ও যাদুর কাফেলা

 

আয্ রাহ্ মা রও বে এশভেয়ে দোন্ - য় কে ঈন্ আজূয্

সুপথ থেকে ( বিচ্যুত হয়ে ) যেও না

ছিনাল পৃথিবীর অভিসারে কারণ এই বৃদ্ধা ( পৃথিবী/ দুনিয়া )

 

মাক্করেহ্ মীনেশিনাদো মোহ্থলেহ্ মীরাভাদ্

বসতেও করে প্রতারণা আর তার চলার মধ্যেও আছে হিলা ( ফন্দি )

 

বদে বাহর্ মী ভাযাদ্ আয্ গোল্ সেথনে শহ্

শাহী বাগিচা হতে বসন্ত সমীরণ বইছে

 

ভাযে ঝলেহ্ বদেহ্ দার্ ক্বাদাহে ললেহ্ মীরাভাদ্

আর ভোরের শিশির মদিরার মতো লালার ( টিউলিপ ) পানপাত্রে ( পাপড়ি ) ঝরছে

( ভোরে প্রস্ফুটিত টিউলিপ ফুলের পাপড়ি গুলো যেন পান পাত্রের আকার ধারণ করেছে এবং তাতে মদিরার মতো ভোরের শিশির বিন্দু গুলো যেন টপ টপ করে ঝরছে !)

 

হফেয্ যে শৌক্বে মাজলেসে সোলথন্ ঘিয়সে দীন্

হাফেয ! সুলতান গিয়াসউদ্দিনের শাহী জলসার শোর উদ্দীপনা থেকে

 

ঘফেল্ মা শও কে করে থো আয্ নলেহ্ মীরাভাদ্

উদাসীন থেকো না ; কারণ কান্নার মধ্য দিয়েই যে তোমার কার্য উদ্ধার

( কবিতা ও কাব্য চর্চা ) হবে ।

(স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের শাহী দরবার ও মজলিসে উপস্থিত হতে না পারার দুঃখে কেবল ক্রন্দনের মধ্য দিয়েই হাফেযকে কাব্য চর্চা ও জীবন অতিবাহিত করতে হবে । )

 

শব্দার্থ :

সার্ভ : বিরাটাকার চির সবুজ বৃক্ষ বিশেষ , বৃহদাকার সেদার বৃক্ষ 

হিলা : চালাকি , কূট - কৌশল , প্রতারণা

লালা : টিউলিপ ( ফুল বিশেষ )

captcha