IQNA

জার্মানিতে অভ্যুত্থানের আগেই গ্রেফতারের পেছনের রহস্য

20:04 - December 09, 2022
সংবাদ: 3472963
তেহরান (ইকনা): জার্মানি কেন সামরিক অভ্যুত্থানের যড়যন্ত্রকারীদের অভ্যুত্থান ঘটানোর আগেই গ্রেফতার করল? অপরাধ সংঘটনের আগে এদেরকে গ্রেফতার করার জন্য জার্মানির সমালোচনা করা হচ্ছে না! কারণ এরা জার্মানির স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

তাই এদের দমন ও গ্রেফতার করা জার্মানির বৈধ অধিকার। অথচ পশ্চিমা দেশের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও মদদে এবং সংবাদ মাধ্যম গুলোর উস্কানি , প্রচারণা ও প্ররোচনায়  ইরানের ভিতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা গণ্ডগোল , নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষী বাহিনী ও গণ বাহিনীর ৫০ জন সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ছুরি দিয়ে হত্যা , পাবলিক প্রোপার্টি ও জনগণের সম্পত্তি নষ্ট করলে এবং ইরান তাদের ধরপাকড় করলে পশ্চিমারা চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য প্রতিবাদ বিক্ষোভ  নিষ্ঠুর ভাবে দমনের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে নিন্দা করছে ইরান সরকার কে এবং এই সুযোগে তারা অন্যায়ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করছে । 
শত্রুদের প্ররোচনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারীদের ইরান কেন ছেড়ে দেবে ? ইরান তার স্বাধীনতা  জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য বিদেশীদের চর ও এজেন্ট স্বরূপ এ সব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারী অপরাধীদের ধরপাকড়, গ্রেফতার ও বিচার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারবে না ?! 
 
কিভাবে পশ্চিমারা ইরানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ বলে গণ্য করছে অথচ তারা কেন অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের যারা এখনো অভ্যুত্থানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি ৩০০০ পুলিশ পাঠিয়ে তাদের ২৫ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য জার্মান সরকারের নিন্দা করছে না এবং অভ্যুত্থান প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত দেরকে বৈধ রাজনৈতিক কর্মী ও অ্যক্টিভিস্ট বলে অভিহিত করছে না ? পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে যদি ইরানের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা যদি বৈধ প্রতিবাদ কারী বলে গণ্য ও বিবেচিত হয় তাহলে তাদের দৃষ্টিতে জার্মানির অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা কারীদেরকেও বৈধ রাজনৈতিক অধিকার সম্পন্ন বলে স্বীকৃতি  দিতে হবে এবং তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য জার্মান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে এবং অবরোধ আরোপ করতে হবে ।
 
পশ্চিমাদের উস্কানি ও প্রত্যক্ষ মদদে গত দুমাসে অত্যন্ত মুষ্ঠিমেয় বিপথগামী বিশ্বাস ঘাতক নারী-পুরুষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি , হত্যাকাণ্ড ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা এবং সর্বোপরি ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সরকার পতনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে , রাস্তা ঘাটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, মারামারি এবং জ্বালাও পোড়াও কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সম্পদ ও সম্পত্তিতে অগ্নি সংযোগ এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে তাদের ধরপাকড় ও গ্রেফতার করা ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রী সরকারের বৈধ অধিকার এমনকি এতে পশ্চিমাদের তীব্র অসন্তোষ থাকলেও। কিন্তু পশ্চিমারা নিজেদের জন্য কেবল এ অধিকার সংরক্ষিত আছে বলে জানে ও বিশ্বাস করে কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে যেমন: ইরান তা যে আছে  তা বিশ্বাস করে না । 
 
ইসরাইলী পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী গত কয়েক দিনে ১০ জন ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ কারীদের গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু পশ্চিমা , সৌদি ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সরকার ও সংবাদ মাধ্যম সমূহ এ সব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে নি । বরং পশ্চিমাদের বিশ্বাস হচ্ছে যে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং আত্মরক্ষার জন্যই নাকি ইসরাইলী পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ কারী দের হত্যা করেছে! পশ্চিমা বিশেষ করে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ , সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিন জবর দখল করে ফিলিস্তিনিদেরকে অন্যায় ভাবে তাদের বাস্তু ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার কারণে মজলুম ফিলিস্তিনি জনগণ অপরাধী দখলদার ইসরাইলী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করলেই ইসরাইলী পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের হত্যা ও গ্রেফতার করার অধিকার রাখে অথচ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী ইসরাইল ও পশ্চিমাদের এজেন্ট ও চর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের শায়েস্তা ও সাজা দেওয়ার অধিকার রাখে না ।
 
মজলুম ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ও মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য সন্ত্রাসী  অপরাধী  দুষ্কৃতকারী জবরদখলকারী ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও সংগ্রাম করলে অসৎ অসাধু দুর্নীতিবাজ অপরাধী সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে হয়ে যায় দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী ; আর ইরানে পশ্চিমাদের বেতনভুক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারী এজেন্ট যারা সংখ্যায় খুবই নগণ্য তাদেরকে তাদের অপকর্মের জন্য ধরলে ব্যস অমনি পশ্চিমা দেশগুলো ও তাদের সংবাদ মাধ্যম গুলো বলতে থাকে যে ইরানী কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী নিষ্ঠুর ভাবে ইরানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমন করছে !!! অপরাধী সাম্রাজ্যবাদী  পশ্চিমাদের এ সব বেতনভুক এজেন্ট যারা চরম মুষ্টিমেয় এবং গত দু মাস ধরে ইরানের অল্প কিছু স্থানে না সমগ্র ইরান জুড়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, সাধারণ মানুষ হত্যা , পুলিশ , নিরাপত্তা ও গণবাহিনীর ৫০ জন সদস্যকে হত্যা এবং জনগণের সহায় - সম্পদ , মসজিদ ও হুসাইনীয়ায় অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়েছে ও  ক্ষতিসাধন সাধন করেছে তাদের ধরপাকড় করে সাজা দেবে না তো কাদের ধরবে ?!! 
 
পশ্চিমারা সব সময় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি গ্রহণ করে । কতিপয় চরম ডানপন্থী ( Far Right or extreme right groups and parties ) নিওনাৎসী নাকি ক্যুদেতা করে জার্মান সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের প্ল্যান আটছিল ( এখনও বাস্তবে পদক্ষেপ গ্রহণ  করে নি বিক্ষোভ মিছিল ও নাশকতামূলক কাজ করে নি  ) ১১০ শহরে ৩০০০ পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়ে তাদের মধ্য থেকে মাত্র ২৫ ব্যক্তিকে তাদের বাড়ী থেকে নিরস্ত্র অবস্থায় আটক করেছে !  আর পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে : " এ ক্ষেত্রে যেন জার্মান সরকার সঠিক পদক্ষেপই নিয়েছে। এদের দমন করার অধিকার জার্মানির আছে । কিন্তু এ অধিকার ইরানের নেই।  আসলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না ইরান পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে !!!! " পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে বিদ্রোহী ও গোলযোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার নেই ইরানের !!!! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ সকল পশ্চিমা দেশ  তথাকথিত অভ্যুত্থান পরিকল্পনা কারীদেরকে পুলিশী অভিযান চালিয়ে ধরপাকড় করা সমর্থন করেছে এবং এরাই আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইরানকে নিন্দা ও দোষারোপ করছে । একেই বলে জংলি আইন ও মগের মুল্লুক।
 
এটাই হচ্ছে এখন দুনিয়ার অবস্থা। জার্মানিতে অভ্যুত্থানের এ ঘটনা  খোসেফ বোরেলের গুলিস্তান ও বাগ - বাগিচা সদৃশ ইউরোপে বজ্রপাতের কারণে সৃষ্ট দাবানল সদৃশ নয় কি ?!!! স্মর্তব্য যে কিছু দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান খোসেফ বোরেল বলেছিলেন: ইউরোপ হচ্ছে বাগান সদৃশ এবং বাদবাকি দুনিয়া হচ্ছে জঙ্গল!!! ইউক্রেন সংকট ও যুদ্ধের মাধ্যমে বোরেলের বাগান ও গুল বাগিচায় দাবানলের শুরু এবং জার্মানির এ ঘটনায় সেই দাবানল যে গুল বাগিচা সদৃশ ইউরোপের কেন্দ্রস্থল পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে তার আলামত ও নিদর্শন রয়েছে। 
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
৮-১২- ২০২২
captcha