IQNA

ইমাম হুসাইন(আ.) প্রকৃত অর্থেই হেদায়াতের প্রদীপ এবং মুক্তির তরণী

19:31 - October 10, 2016
সংবাদ: 2601742
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যদি আমরা ইমাম হুসাইনের মর্যাদা বুঝতে না পারি তা হলে তাঁর আন্দোলনকেও ঝুঝতে পারব না। কেননা তাঁর মর্যাদা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পারার জন্যই তাঁর আন্দোলন নিয়ে অনেক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
ইমাম হুসাইন(আ.) প্রকৃত অর্থেই হেদায়াতের প্রদীপ এবং মুক্তির তরণী
মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম হুসাইন (আ.) মহান আল্লাহ্ কর্তৃক ঘোষিত নিষ্পাপ ব্যক্তি। পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ্ যাঁর নিষ্পাপ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে বর্নিত হয়েছে:

إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرَا

"হে নবীর আহলে বাইত! আল্লাহ্ চান তোমাদের থেকে পাপ-পঙ্কিলতা দূর করে তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”

মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ সব হাদীসের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ দু’টি হাদীস এখানে উল্লেখ করা হলো। মহানবী (সা.) বলেছেন : اَلْحَسَنُ وَ الْحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلَ الْجَنَّةِ

হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।

মহানবী (সা.) আরো বলেছেন :  إِنَّ الْحُسَيْنَ مِصْبَاحُ الْهُدَى وَ سَفِيْنَةُ النَّجَاةِ

নিশ্চয়ই হুসাইন হেদায়েতের প্রদীপ ও মুক্তির তরণী।

অনেক সময় আমরা ইমাম হুসাইনের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর এসব হাদীসকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হই। অনেকে মনে করেন, যেহেতু ইমাম হুসাইন মহানবীর দৌহিত্র ছিলেন সেজন্য তিনি ভালোবেসে তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন, এমনকি ‘বেহেশতের যুবকদের নেতা’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কে প্রশংসাসূচক উক্তি বা তাঁকে ‘বেহেশতের যুবকদের নেতা’ উপাধিতে ভূষিত করার পেছনে আত্মীয়তার সম্পর্কের কোনো ভূমিকা ছিল, নাকি ইমাম হুসাইন এর যোগ্য ছিলেন বলেই রাসূল তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করেছেন এর জবাবের জন্য ইমাম হুসাইনের জীবন ও কর্মের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।

আমরা যদি তাঁর জন্ম থেকে শাহাদাত পর্যন্ত জীবন পর্যালোচনা করি তা হলে আমাদের সামনে পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হবে যে, তিনি কীভাবে নিজের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আর ইসলামের জন্যই বা তিনি কতটুকু অবদান রেখেছেন!

ইমাম হুসাইন মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্যে তাঁর শৈশবের সাতটি বছর অতিবাহিত করেছেন। ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন। রাসূলের ওফাতের পর তিনি তাঁর পিতা রাসূলের ‘জ্ঞান নগরীর দ্বার’ হযরত আলী (আ.) ও ‘বেহেশতের নারীদের নেত্রী’ হযরত ফাতিমা (আ.)-এর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন গড়ে তুলেছেন। পিতা-মাতার সংগ্রামী জীবন থেকেও তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাফের-মুশরিকদের সাথে জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ তিনি পান নি; কিন্তু আলী (আ.)-এর খেলাফতকালে ইসলামের প্রকৃত রূপ বজায় রাখার জন্য তাঁর সংগ্রাম শুরু হয়। রাসূলের ওফাতের পর যখন আলী (আ.)-এর কোষবদ্ধ তরবারি আবার কোষমুক্ত হলো তখন তিনি পিতার পাশে তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। পিতার শাহাদাতের পর বড় ভাই ইমাম হাসান (আ.)-এর খেলাফতকালেও তিনি একই ভূমিকা পালন করলেন।

ইসলামের জন্য একে একে মা, বাবা ও বড় ভাইয়ের আত্মত্যাগ তিনি প্রত্যক্ষ করলেন। অবশেষে সময় হলো নিজেকে উৎসর্গ করার। কিন্তু তিনি কীভাবে এ উৎসর্গ করলেন? তিনি কি শুধু নিজেকেই উৎসর্গ করলেন? না; বরং নিজের কলিজার টুকরো সন্তানদের, ভাইয়ের সন্তানদের ও নিকটাত্মীয়দেরকেও নিজের সাথে উৎসর্গ করে পৃথিবীর বুকে আত্মোৎসর্গের অমর দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

মহান আল্লাহ্ ধর্ম ইসলামকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবার-পরিজনসহ নিজেকে চূড়ান্তভাবে উৎসর্গ করার মাধ্যমে যে ধারাবাহিক ভূমিকা তিনি রেখে গেছেন সেজন্যই তিনি বেহেশতের যুবকদের নেতা রাসূলের দৌহিত্র হিসাবে তাঁর এ মর্যাদা নয়।

আবার আমরা এ বিষয়টিও লক্ষ্য করি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সকল আত্মীয়ের মর্যাদাও সমান নয়। রাসূলের কোনো কোনো আত্মীয় অন্য সকল আত্মীয়ের চেয়ে অধিক সম্মানের অধিকারী। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁদের মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) হযরত হামযা (রা.)-কে ‘সাইয়্যেদুশ শুহাদা’ (শহীদদের নেতা), হযরত ফাতিমা (আ.)-কে ‘সাইয়্যেদাতু নিসায়িল আলামীন’ (জগতসমূহের নারীদের নেত্রী), হযরত হাসানকে ‘সাইয়্যেদু শাবাবি আহ্লিল জান্নাহ্’ (বেহেশতের যুবকদের নেতা), হযরত জাফর বিন আবি তালিব (রা.)-কে ‘তাইয়্যার(পাখি) উপাধিতে ভূষিত করেছেন। আর এসকল মহান ব্যক্তিত্বের খোদাভীরুতা এবং ইসলামের জন্য তাঁদের অতুলনীয় ভূমিকার কথা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে। তাই বলা যায়, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) রক্ত-সম্পর্ক থাকার কারণে কাউকে কোনো মর্যাদায় ভূষিত করেন নি; বরং মহান আল্লাহর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা এবং ইসলাম ধর্মের জন্য তাঁদের অবদান ও আত্মত্যাগের কারণেই তাঁদের মর্যাদার কথা ঘোষণা করেছেন। আর এ বিষয়টিই ইসলামে মর্যাদার ভিত্তি যা পবিত্র কোরআনেই বর্ণিত হয়েছে।

captcha