ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ইসলামের ইতিহাসের চরম দুর্যোগপূর্ণ সময়ে এ মহান ধর্মের সাংস্কৃতিক ও চিন্তাগত বিপ্লবের ভিত্তি গড়ার জন্য তুলে ধরেছিলেন খাঁটি ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের নানা দিক। তাঁর প্রচারিত সেসব শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সংকলন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে "সহিফা-ই সাজ্জাদিয়া”। অনেকেই একে " আলে মুহাম্মাদের জাবুর” বলে থাকেন। দোয়া ও আল্লাহর প্রতি মনের গভীর আকুতি এবং আবেদন-নিবেদনের আঙ্গিকে তুলে ধরা এসব বক্তব্যে রয়েছে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আর সেগুলো সব যুগের মানুষ ও মুসলমানের জন্যই মহাকল্যাণের উৎস ও চিরস্থায়ী সৌভাগ্যের দিক-নির্দেশক।
এ ধরণের শিক্ষামূলক দোয়া হৃদয়ঙ্গম করা আত্মগঠন, নফসের বা প্রবৃত্তির পরিশুদ্ধি এবং ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক উচ্চতর লক্ষ্যগুলো উপলব্ধিসহ খোদাপ্রেমের অনুভূতি ও যুক্তি আয়ত্তের জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এইসব দোয়ার আলোকিত প্রভাবে প্রভাবিত হওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন মুমিন কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই সেসবের গভীর তাৎপর্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করবেন।
ইমাম সাজ্জাদ (আ.) তাঁর বিভিন্ন দোয়ায় মানুষকে এটা শেখাতে চেয়েছেন যে জীবনের সব পর্যায়েই আল্লাহর ওপর নির্ভরতা জরুরী। আল্লাহই যেন মানুষের সব ততপরতার মূল অক্ষে বা কেন্দ্রে থাকেন। আল্লাহর প্রতি হৃদয়ে গভীর প্রেম বা ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অবশ্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাঁকে চেনাও জরুরি। আল্লাহকে চেনা ও জানার মধ্য দিয়েই খোদা-প্রেমিকের যাত্রা শুরু হয়।
সহিফা-ই সাজ্জাদিয়ার প্রথম দোয়ায় আল্লাহর অনবদ্য ও অনুপম প্রশংসা করতে গিয়ে ইমাম বলেছেন, তুমি সেই আল্লাহ দর্শকদের দৃষ্টি যাকে দেখতে পায় না, বর্ণনাকারীদের চিন্তা বা কল্পনাশক্তি তোমার বর্ণনা দিতে অক্ষম। তুমি নিজ ক্ষমতা ও শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছ সৃষ্টি জগত ও সৃষ্টিকুল এবং তাদের সৃষ্টি করেছ নিজ ইচ্ছায়। অথচ এর আগে এসব সৃষ্টির কোনো মডেল বা নমুনার অস্তিত্ব ছিল না।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক দায়িত্বসহ মানুষের বিভিন্ন দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সহিফায়ে সাজ্জাদিয়ায় স্থান পাওয়া ইমাম সাজ্জাদ (আ.)’র দোয়াগুলো খুবই কার্যকর। বাবা-মা সম্পর্কে তাঁর দোয়ার একাংশে বলা হয়েছে: হে আল্লাহ! আমার কণ্ঠ যেন বাবা মায়ের সামনে নীচ বা অনুচ্চ থাকে। আমার বক্তব্য যেন তাদের জন্য হয় সন্তোষজনক। আমার আচরণ যেন তাঁদের সামনে বিনম্র থাকে; তাদের জন্য আমার অন্তরকে দয়ার্দ্র কর। আমি যেন তাঁদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেই এবং আমাকে তাঁদের প্রতি কোমল ও স্নেহশীল করুন।