
বার্তা সংস্থা ইকনা: বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ওলামা মাশায়েখ মহাসম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সৌদি রাজার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, "যারা শান্তিতে বিশ্বাস করে, তাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস দমনে তিনি ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।”
সৌদি রাজার উদ্যোগে বিশ্বে শান্তি ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, "প্রতিটি দেশের মুসলমানদের মধ্যে যেন ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয়। তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা যেন কার্যকর হয়।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে লাভবান হয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। তারা অস্ত্র তৈরি করে বিক্রি করে। সেই অস্ত্রে রঞ্জিত হয় মুসলমানের রক্ত। মুসলমানের রক্তের বিনিময়ে লাভবান হয় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।"
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যবসা হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ এদেশে ইসলাম ধর্মের উন্নতির জন্য অনেক কাজ করেছে।"
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র। এখানকার ৯০ ভাগ মানুষ মুসলামান। কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষও আছেন এই ভূখণ্ডে। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে। আমরা এটা পালন করতে পেরেছি। সব ধর্মের মানুষ বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করছে। আমাদের ধর্ম পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম। এ ধর্মে নিবেদিতরা যেন ঠিকভাবে সব পালন করতে পারেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, ধর্মকে কেউ যেন হেয় না করে।"
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ওলামা মাশায়েখদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "আজ যারা এখানে এসেছেন, আমরা চাই আপনারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের কাছে ইসলামের মূল বাণী পৌছে দেবেন। আপনারা অন্যদের শিক্ষা দেবেন যেন কেউই অহেতুক জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ধর্মের মূল বাণীর ক্ষতি না করে। কেননা পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কেউ হেয় করবে, এটা সহ্য করা হবে না। দেশের সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে।"
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "কিছু মানুষের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সারাবিশ্বে হেনস্তার শিকার হচ্ছে। মানুষ ইসলাম ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদ জুড়ে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ইসলাম শান্তিতে বিশ্বাস করে। ইসলাম ধর্ম কখনো নিরীহ মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, তারা পরস্পরকে রক্ষা করবে। তারা কেন নিরীহ মানুষকে হত্যা করবে? এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।"
মহাসম্মেলেনে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ভাইস প্রেসিডেন্ট শায়খ মুহাম্মদ বিন নাসের আল খুজাইম ও মসজিদে নববির ইমাম শায়খ আবদুল মুহসিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিমসহ ছয় সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সফরের জন্য অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোট গঠন করায় সৌদি বাদশাহকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
দুই খতিবের বক্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বক্তব্য আমাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করবে। আপনারা যারা এসেছেন তাদের কথা শুনে গেলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তারা মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন। মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষকরা পবিত্র ধর্ম ইসলাম যে শান্তির বাণী শোনায়, ইসলাম যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, সেটি তুলে ধরবেন।
মহাসম্মেলনকে ঘিরে এদিন সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় জড়ো হন ওলামা মাশায়েখরা। সম্মেলনস্থলের ভেতরে ও বাইরে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙখলা বাহিনীর কঠোর তল্লাশির পর আগতদের সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করানো হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয় নিরাপত্তা বলয়। পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে তিনটি অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে ছিল সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।