পবিত্র রজব মাসের ১০ম তারিখ হচ্ছে ইমামতিধারার ৯ম ইমাম; হযরত ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদের (আ.) মহিমান্বিত জন্ম দিবস। এ উপলক্ষে শাবিস্তান প্রতিবেদক বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক হযরত হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মিরদামাদীর সাথে আলোচনায় মিলিত হয়। উক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদের (আ.) মহিমান্বিত জীবনাদর্শ, গুণাবলী ও দিকনির্দেশনার কিছু অংশ আমরা পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি-
ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদের (আ.) জন্ম কবে এবং কোথায় হয়েছিল?ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদের (আ.) জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ হচ্ছে তিনি ১৯৫ হিজরির রজব মাসের ১০ তারিখ মদীনা মুনাওয়াতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা হলেন ৮ম ইমাম হযরত আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) এবং মাতা হযরত সাবিকাহ।
ইমামের (আ.) বিশেষ বৈশিষ্ট্য কি?ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদের (আ.) অপরিসীম ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যাবলী মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে ইমামতের গুরুদায়িত্বে সমাসীন হন। একই ভাবে তিনি খুবই অল্প বয়সে শাহাদত বরণ করেন। এক কথায় বলা যায় যে, ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদ (আ.) যুবকতম ইমাম ছিলেন। তিনি মামুনুর রাশিদের খিলাফতকালে জীবন যাপন করেন, মামুনুর রাশিদ একজন স্বৈরাচারী ও ধুরন্ধর শাসক ছিল। সে তার শাসনের বিরোধী যে কাউকে খুবই কৌশলে হত্যা করত।
মামুনুর রাশিদ ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদের (আ.) উপর কড়া নজরদারী বহাল রাখতে, ইমামকে জোরপূর্বক মদীনা থেকে বাগদাদ নিয়ে আসে। বাগদাদ আসার পর ইমামের (আ.) নজরদারী ও কড়াকড়ির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। ইমাম যাতে সহজেই মানুষের সাথে যোগাযোগ না রাখতে পারেন, সেজন্য এমন কড়াকড়ি করা হয়। এমনকি মামুনুর রাশিদ উম্মে ফাজল নামে ইমামের (আ.) এক স্ত্রীকে প্ররোচিত করে তার মাধ্যমে বিষপ্রয়োগে ইমামকে শহীদ করে। এটা থেকে বুঝা যায় যে, ইমাম (আ.) নিজ গৃহেও নিরাপত্তাহীন ছিলেন। ইমামের শাহাদতের পর তাকে ৭ম ইমাম ও তার দাদা হযরত ইমাম মুসা কাজীমের (আ.) কবর মোবারকের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদের (আ.) অনেক উপাধি ছিল, তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে 'তাকী'; ইমামকে কেন এ উপাধিতে ভূষিত করা হয়?তাকী শব্দের মূল হচ্ছে তাকায়া; আর এ শব্দের অর্থ হচ্ছে যাকে রক্ষা করা হয়েছে। ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদকে (আ.) 'তাকী' উপাধিতে ভূষিত করার প্রধান কারণ হচ্ছে আল্লাহ তাকে অনেক ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। এমনকি একবার জালিম শাসক মামুনুর রাশিদ তাকে সজোরে তরবারী দিয়ে আঘাত করা সত্ত্বেও তিনি অক্ষত থাকেন।
পরিশেষে ইমাম মুহাম্মাদ তাকী আল জাওয়াদের (আ.) একটি হাদীস বর্ণনা করুন!ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ (আ.) থেকে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হাদীস আমরা এখানে তুলে ধরছি- ইমাম(আ.) বলেছেন: আল্লাহর উপর ভরসা সবচেয়ে মূল্যবান নেয়ামত; এর চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। এর মাধ্যমে মানুষ এতই সুউচ্চ আসনে উন্নীত হয়; যে অন্য কোন সিড়িই তাকে পৌছাতে পারবে না।
এ হাদীসের শিক্ষা হচ্ছে মানুষ আল্লাহর উপর ভরসা করে সব সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম; যা অন্য কারও উপর ভরসার মাধ্যমে সম্ভব না।