IQNA

ইমাম হুসাইনের(আ.) আন্দোলন চিরন্তন হওয়ার দর্শন

16:09 - October 02, 2017
সংবাদ: 2603964
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সপরিবারে শাহাদাত বরণের জন্য শোক ও মাতম করার মূল প্রোথিত রয়েছে ইতিহাসের গভীরে। মহান আম্বিয়ায়ে কেরাম, এমনকি আসমানের ফেরেশতাকুলও নিজ নিজ পন্থায় এ শহীদ ইমামের জন্যে আযাদারী করেছেন। রেওয়ায়েত অনুযায়ী আশুরার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরে চারদিকে আঁধার নেমে আসে এবং কারবালার আকাশ কালো ধুলোয় ভরে যায়। আর সেখানকার নুড়ি পাথরগুলো, এমনকি জলের মাছগুলো চল্লিশ দিন ধরে ইমামের শোকে ক্রন্দন করতে থাকে।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মুসিবতে আকাশ চল্লিশ দিন ধরে ক্রন্দন করে। ﹰانّ السماء بکی علی مصاب الحسین اربعین صباحا

ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য আযাদারী পালন একটি প্রাচীন রীতি এবং আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে প্রবর্তিত বিষয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হুসাইনের ঠোঁটে এবং গলায় চুম্বন দিতেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলতেন: انّی اقبل مواضع السّیوف

আমি তলোয়ারের জায়গাগুলোতে চুম্বন করছি।

হযরত ফাতিমা যাহরাকে হুসাইনের জন্য আযাদারী পালনের গুরুত্বের ব্যাপারে তিনি বলতেন: یا فاطمة کلّ عین باکیه یوم القیامة الاعین بکت عن مصاب الحسین فإنّها ضاحکه مستبشره بنعیم الجنّة

হে ফাতিমা! কিয়ামতের দিন প্রত্যেক চক্ষুই কাঁদতে থাকবে,কেবল সে চোখ ব্যতীত,যে হুসাইনের মুসিবতে ক্রন্দন করেছে। জান্নাতের নেয়ামতে পূর্ণ হয়ে সে আনন্দিত ও হাসিমুখে থাকবে।

হযরত আলী ইবনে আবি তালিবও আযাদারী ও ক্রন্দন করেছেন। এর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দৃষ্টান্ত হল সিফফিনে যাওয়ার পথে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) যখন নাইনাওয়া (কারবালা) ভূমিতে পৌঁছেন,তখন ক্ষণিক যাত্রা বিরতি করে বিশ্রাম গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। তিনিও অবতরণ করলেন। এরপর দু’হাত কারবালার উত্তপ্ত বালির ওপর রাখলেন এবং ক্রন্দন করলেন। সঙ্গীরা যখন ইমামের কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন তখন তিনি বললেন:  ههنا مناخ رکابهم و مسفک دمائهم و محط رحالهم

এ স্থানই তাদের বহনকারী জন্তুগুলোর থামার জায়গা এবং এখানেই তাদের রক্ত মাটিতে মিশবার জায়গা এবং তাদের মালামাল নামানোর জায়গা।

এছাড়া ফাতিমা যাহরা (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে শিক্ষা নিয়ে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর দোলনা দোলানোর সময় থেকে নিজের শাহাদাতের মুহূর্ত পর্যন্ত সবসময় হুসাইনের মজলুম হওয়া ও নির্মমভাবে শহীদ হবার কথা স্মরণ করে ক্রন্দন করতেন। আর কন্যা যায়নাবকে উপদেশ দিতেন যেন এ দুঃসময়ে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গী হন।

ইমাম হুসাইনের(আ.) বোন যায়নাব ও প্রাণপ্রিয় পুত্র যায়নুল আবেদীন (আ.)-কে নির্দেশ দেন তাঁর শাহাদাতের পর যেন বন্দী অবস্থায় চলার পথে যেখানেই যাত্রাবিরতি করা হবে, সেখানে তাঁর মজলুম হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয় এবং জনগণের বিশেষ করে শামের জনগণের কানে তা পৌঁছানো হয়। এছাড়াও তিনি তাঁর অনুসারীদের আশুরার শোক পালন ও আযাদারী অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে তা ভবিষ্যতের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দেন। শোকাশ্রু বিসর্জন করা এবং আশুরার দিনে তাঁর মুসিবতের কথা স্মরণ করে আযাদারী পালন করার মধ্যে যে বার্তা নিহিত রয়েছে, সেটা বুঝাতে তিনি বলেছেন: انا قتیل العبره قتلت مکروبا فلا یذکرنی مؤمن الاّ بکی

আমি অশ্রুর শহীদ, আমি নিহত হয়েছি চরম কষ্ট স্বীকার করে, তাই কোন মুমিন আমাকে স্মরণ করলে ক্রন্দন না করে পারে না।

নোমান ইবনে বাশির একটি কাসিদার মাধ্যমে আহলে বাইতের মুসিবতের কথা মদীনার জনগণের কাছে বর্ণনা করে। কাসিদাটির অংশবিশেষ নিম্নরূপ:

یا اهل یثرب لا مقام لکم                        قتل الحسین فارمعی مدرار
 
الجسم منه بکربلا مضرّج                       و الرأس منه علی الدار یدارا

হে মদীনাবাসী! তোমাদের জন্য আর কোন থাকার জায়গা রইল না। কারণ, হুসাইন কতল হয়েছেন। গায়ের জামাগুলো ছিঁড়ে ফেল,কেননা,তাঁর পবিত্র দেহ কারবালার ময়দানে টুকরো টুকরো হয়েছে। আর তাঁর কাটা মস্তক এখন বর্শার মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে। শাবিস্তান
captcha