
বার্তা সংস্থা ইকনা: কারবালা বিপ্লব মানব সভ্যতা ও ইতিহাসের এক অনন্য বিপ্লব। এ বিপ্লবে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে মানুষের শ্রেষ্ঠ কিছু গুণের সর্বোত্তম প্রকাশ এবং বীরত্ব ও ন্যায়নীতির পরিপূর্ণ সৌন্দর্য, তেমনি অন্যদিকে ফুটে উঠেছে শয়তান ও পশু-শক্তির দানবিকতা আর পাশবিকতার চরম প্রকাশ। একদিকে ফুটে উঠেছে খোদা-প্রেমের চরম প্রকাশ আর অন্য দিকে কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব তথা অধঃপতন আর বিবেকহীনতার সর্বগ্রাসী সয়লাবের নিদর্শন।
কারবালার কালজয়ী মহা-বিপ্লব নানা শিক্ষার এক বিশাল সূতিকাগার ও মানুষ হিসেবে তথা খোদার প্রতিনিধি বা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার শিক্ষা লাভের এক অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়।
খোদাপ্রেম, ইমামের আনুগত্য, আন্তরিকতা, মানবতা, নৈতিকতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব, সৎ-কাজের আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ, আত্মত্যাগ, মুক্তিকামীতা, দায়িত্বশীলতা, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা, সময়োচিত পদক্ষেপ বা সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহারের মত বিষয়গুলো কারবালার কালজয়ী বিপ্লবে প্রবাদতুল্য আদর্শ বা শিক্ষা হিসেবে ফুটে উঠেছে।
সুখে ও দুঃখে সব সময় মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা কারবালা বিপ্লবের মহানায়কদের রেখে যাওয়া একটি বড় শিক্ষা। ইমাম হুসাইন (আ) জীবনের শেষ রাত্রে স্মরণ করলেন সেই সময়ের কথা যখন মুসলিম বিশ্বে তিনি ও তাঁর ভাই হাসান (আ) ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সবার আদরের শিশু।
আমরা যদি পরিপূর্ণ ইসলামকে বাস্তবে দেখতে চাই তাহলে ইমাম হুসাইন (আ.) -এর এই মহান বিপ্লবের দিকেই তাকাতে হবে। তিনি কারবালার ময়দানে ইসলামের বাস্তব চিত্র একেছেন,সুদক্ষ শিল্পীর মতো তিনি ইসলামকে প্রতিমূর্ত করেছেন। এ জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। কোনো প্রাণহীন ও শুস্ক প্রতিমূর্তির মতো নয়। তাই এ ঘটনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সাথে সাথেই যে কোনো অনুভূতিসম্পন্ন মানুষই নিজের অজ্ঞাতে বলতে বাধ্য হবে যে,এটি কোন সহসা ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়, বরং সূক্ষ্মচিন্তা ও পরিকল্পনামাফিক এক আদর্শিক ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে কারবালায়। আর এ আদর্শের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্বয়ং নবীদৌহিত্র এই ইমাম হুসাইন (আ.)। তাই প্রতি বছর এই হোসাইনী আদর্শকে সঠিক মূল্যায়ন ও উপযুক্ত মর্যাদা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইসলামের এই জীবন্ত মুর্তিকে অক্ষয় রাখা প্রত্যেক মুসলমানেরই কর্তব্য।
কারবালার ঘটনায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, কালো-ধলো, আরব-অনারব, অভিজাত-গরীব সবারই ভূমিকা রয়েছে। যেন ইসলামের পরিপূর্ণ চেহারাটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্যে মহান আল্লাহর সুদক্ষ হাত দিয়ে নকশা আঁকা হয়েছিল! এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। এ ঘটনায় নারীর ভূমিকা বলতে কেবলমাত্র হযরত জয়নাবের ভূমিকা ছিল তা নয়। তিনি ছাড়াও একাধিক মহিলা এ ঘটনায় ভূমিকা রেখেছিলেন। এমন কি কারবালার শহীদদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। এছাড়া আরও দু’ জন মহিলা রীতিমত যুদ্ধের ময়দানে চলে আসেন। পরে অবশ্য ইমাম হোসাইন (আ.) তাদেরকে ফিরিয়ে আনেন। অনেক মহিলাই এ ঘটনায় সাহসী ভূমিকা রাখেন এবং কত মা তাদের নিজের সন্তানকে স্বহস্তে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করেন।
এ অধ্যায়ে আমরা কারবালা ঘটনার এক সার্বিক ও সামষ্টিক চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করবো। এ ঘটনার তৌহিদী,আধ্যাত্মিক ও পবিত্রতার দিকগুলো তুলে ধরতে মক্কায় উচ্চারিত ইমাম হোসাইনের (আ.) বক্তৃতার এ দুটো লাইনই যথেষ্ট বলে মনে করি। তিনি বলেনঃ ‘‘আমরা নিজেরা কিছু পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাদের জন্যে যেটা পছন্দ করেছেন সেটিই আমাদের পছন্দ অর্থাৎ আল্লাহর পছন্দই পছন্দ। আল্লাহ আমাদের জন্যে যে পথ নির্বাচিত করেছেন আমরা সে পথকেই পছন্দ করি।’’
ইমাম হোসাইনের (আ.) জীবনের শেষ মুহূর্তের কথাগুলোতেও এই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। একটির পর একটি তীরের আঘাতে ইমাম হোসাইন (আ.) যখন ক্ষত-বিক্ষত হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়েন এবং ঘোড়ার পিঠ থেকে মাটিতে পড়ে যান সে সময়ে বলেনঃ ‘‘ (হে আল্লাহ) আপনার বিচারে আমি সন্তুষ্ট এবং আপনার আদেশর প্রতি আমি আত্মসমর্পিত। আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, হে অসহায়দের সহায়।’’
ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেনঃ তোমরা ফরয ও নফল নামাযে সূরা আল-ফাজর পড়ো। এ সূরাটি আমার পূর্ব পুরুষ হযরত ইমাম হোসাইনের (আ.) সূরা। জিজ্ঞেস করা হলোঃ কী উপলক্ষে এটি আপনার পূর্ব পুরুষ ইমাম হোসাইনের (আ.) সূরা? ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বললেন, এ সূরার শেষ আয়াতটির বাস্তব রূপ ইমাম হোসাইন (আ.)। আয়াত হলোঃ
‘‘হে প্রশান্ত চিত্ত ! তুমি সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে তোমার প্রভূর কাছে ফিরে এসো। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’’ ( আল -ফাজরঃ ২৭ - ৩০ )
আশুরার পবিত্র রাতটুকু কী অবস্থায় কাটালেন ইমাম হোসাইন (আ.)! তিনি কেবল নামায, দোয়া, কালাম, কোরআন মজীদ তেলাওয়াত, আল্লাহর সাথে শেষবারের মতো অনুনয়-বিনয় করার জন্যেই এই রাতটি অবসর চেয়ে নিয়েছিলেন। এমন কি আশুরার দিনেও ইমাম হোসাইনের (আ.) পরম ভক্তি ও স্বস্তিতে নামায পড়ার মধ্যে এ ঘটনার তৌহিদী ও ইবাদতী দিকটি ও চরমভাবে প্রকাশ পায়। আগেও উল্লিখিত হয়েছে, ইমাম হোসাইন (আ.) তার নিকটাত্মীয় স্বীয় ও বেশ কিছু সঙ্গী-সাথী আশুরার দিনে দুপুরের পর থেকে শহীদ হন। পরে যখন নামাযের সময় হলো তখন আবু আস-সায়দাবী নামক একজন সঙ্গী এসে ইমাম হোসাইনকে (আ.) বললেনঃ হে রাসূলুল্লাহর (আ.) সন্তান! আমাদের জীবনের শেষ আরজ হলো শেষবারের মতো আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে একবার জামাআতে নামায পড়বো। চারদিক থেকে যখন বৃষ্টির মতো তীর আসছে তখন ইমাম হোসাইন (আ.) মরুভূমির মাঝখানে অবশিষ্ট গুটিকতেক সঙ্গী-সাথী নিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। যেন আল্লাহর ধ্যানে ডুবে গেলেন! পৃথিবীতে কী হচ্ছে তা তাদের জানা নেই। একবার চিন্তা করলেই বোঝা যাবে এ নামায কি নামায ছিল! একজন ইউরোপীয়ান ঐতিহাসিকও বলেনঃ ঐ মুহূর্তেও ইমাম হোসাইন (আ.) এমন নামায পড়লেন দুনিয়াতে যার কোনো নজীর নেই।
এ দৃষ্টিকোণ থেকে তাকালে দেখা যাবে যে, ইমাম হোসাইনের (আ.) আন্দোলন একটি পুরোপুরি আধ্যাত্মিক এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের আন্দোলন। এখানে একমাত্র লিল্লাহিয়াত এবং নিষ্ঠা ছাড়া অন্য কিছুই নেই। একদিকে কেবল ইমাম হোসাইন (আ.) এবং অপর দিকে আল্লাহ। এর মধ্যে অন্য কারো আনাগোনা নেই।
যদি আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, ইমাম হোসাইন (আ.) এমন একজন অটল ও দৃঢ়সংকল্প বিদ্রোহী যিনি অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী অবৈধ শাসক মহলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন যাকে কোনো উপায়েই অবদমিত করা সম্ভব নয়। তার মুখ থেকে যেন অগ্নিবাণী বের হচ্ছে, একাধারে যিনি মান, সম্মান, মুক্তি, স্বাধীনতারও দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহর শপথ করে বলছি যে, কখনোই আমি তোমাদের কাছে নতি স্বীকার করবো না কিংবা দাস-দাসীদের মতো পালিয়েও যাব না। এ কাজ আমার পক্ষে অসম্ভব।-
তিনি আরো বলেনঃ ‘‘আমি মৃত্যূর মধ্যে কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই দেখি না এবং অত্যাচারীদের সাথে বেঁচে থাকার মধ্যে অপমান ছাড়া আর কিছুই দেখি না।’’
এসব বজ্র বাণী একই স্থানে বলেছেন। এগুলোর দিকে তাকালে শুধু সাহস, বীরত্ব, দৃঢ়তা এবং আরবদের ভাষায় অসম্মতি ও অস্বীকৃতি ছাড়া অন্য কিছুই চোখে পড়ে না। ইবনে আবীল হাদীদ একজন প্রসিদ্ধ পণ্ডিত। তিনি বলছেন, ইমাম হোসাইন তাদের নেতা যারা জোর-জুলুমের কাছে নতি স্বীকার করে না তাদের সরদার। এখানে কেবলই প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, হুমকি আর অস্বীকৃতি।
কিন্তু অন্য আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে তাকালে দেখা যাবে যে,ইমাম হোসাইন (আ.) প্রকৃতই একজন শান্তিকামী,মঙ্গলকামী। এ দৃষ্টিতে তিনি এমন একজন ব্যক্তি যে তার শত্রুদের দুর্ভাগ্য ও অধঃপতন দেখে কষ্ট অনুভব করেন। তাদের জাহান্নামে যেতে দেখে তিনি নিজেই উদ্বিগ্ন হন। এখানে এসে বীরত্বের দুর্দমতা একজন শান্ত উপদেশদাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এমন কি আশুরার দিনেও ইমাম হোসাইন (আ.) ও তার সঙ্গীরা শত্রুদের কি পরিমাণ উপদেশ দিয়েছেন! তাদের দুর্গতি দেখে ইমাম হোসাইনের (আ.) পবিত্র অস্তিত্ব কষ্ট অনুভব করে। তিনি চান এখনই যেন তাদের টনক নড়ে এবং সমূহ ধ্বংসের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ করে। এমন কি একটি লোকও এই দুর্গতির আগুনে পুরে মরুক এটি ইমাম হোসাইন (আ.) দেখতে চান না। ইমাম হোসাইন (আ.) তার নানার উদাহরণ ছিলেন।
সূরা তাওবার ১২৮ নং আয়াতে বলা হচ্ছেঃ ‘ তোমাদের বিপদগামিতা তার তথা রাসূলের জন্যে খুবই কষ্টদায়ক। সব সময় তোমাদের মঙ্গল চান।’’
অথচ ইয়াযিদী বাহিনী বুঝতে পারে না যে, তাদের এ দুর্গতি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর জন্যে কত কষ্টদায়ক! কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) কিভাবে এ কষ্ট দুর করবেন? তিনি ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হলেন। পুনরায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সেই পাগড়িটা মাথায় পরে নিলেন। এবার তিনি ঘোড়ায় চড়ে শত্রুদের কাছে আসলেন। যদি একজনকেও এই আগুনের অভিযাত্রী বাহিনী থেকে মুক্তি দেয়া যায় এই আশায় তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও চেষ্টা ছাড়েননি। এ দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (আ.) কত দরদী বন্ধু ! তার মধ্যে কতই ভালবাসা-মহববত। এমন কি,যে শত্রুরা একটু পরেই তাকে হত্যা করবে তাদেরকেও তিনি সত্যিই ভালবাসেন।
এবার ইসলামের নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করা যাক।এ দৃষ্টিতে দেখেল মনে হবে যে, কারবালার ঘটনায় ইসলামের চরিত্র অংকিত হয়েছে। সংক্ষেপে আমরা কারবালার ঘটনার তিনটি নৈতিক গুনের দিকে দৃষ্টিপাত করবঃ পৌরুষত্ব,ত্যাগ ও বিস্বস্ততা।
প্রথমত‘ পৌরুষত্ব’ -শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। এ অর্থ সাহসিকতার চেয়েও উর্ধ্বে। আশুরার দিন ভোরবেলায় সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি ইমাম পরিবারের তাবুর দিকে আসে সে ছিল শিমার। শিমার তার পিছন দিক থেকে এসে দেখলো যে,তাবুগুলো সব মুখোমুখি করে গাড়া হয়েছে এবং এর পিছন দিকে পরিখা খনন করে তার মধ্যে কাটাযুক্ত কাঠ জমা করে আগুন জ্বালানো হয়েছে। এ অবস্থা দেখে শিমারের পিছন দিক থেকে অতর্কিতে হামলা করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং সে তখন অশালীন ভাষায় গালি-গালাজ শুরু করে। শিমারের ব্যাবহারে ক্ষিপ্ত হয়ে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর একজন সঙ্গী এসে বললেনঃ হে ইমাম ! আপনি অনুমতি দিন, আমি একটি তীরের আঘাতে ওকে পরপারে পাঠিয়ে দিই। ইমাম (আ.) বললেনঃ ‘‘ না। সঙ্গী বললেনঃ আমি ওকে চিনি। ও কি জঘন্য জাতের লোক, কত বড় ফাসেক ও লম্পট তা আমি জানি। ইমাম (আ.) বললেনঃ ‘‘তা হোক। কিন্তু আমরা কখনও আগে শুরু করবো না। এমন কি তাতে আমাদের লাভ হলেও।’’ এ ছিল ইসলামের বিধান। এ সম্পর্কিত একাধিক ঘটনা রয়েছে।
ইমাম হোসাইন (আ.) এই আশুরার রাতে গভীর ইবাদেত নিমগ্ন হন। এক আধ্যাত্মিক, জ্যোতির্ময় এবং ঐশী পরিবেশে তিনি আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত হন। যারা এই রাতকে ইমাম হোসাইনের (আ.) মে’ রাজের রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন তারা সত্যিই যথার্থ কথাই বলেছেন। আশুরার রাতে ইমাম সব সঙ্গী-সাথীদেরকে ডেকে বললেনঃ হে আমার সহযোগীরা, হে আমার পরিজনরা! আমি আমার সহযোগী এবং আমার পরিজনদের চেয়ে উত্তম কোনো সহযোগী এবং পরিজন খুঁজে পাইনি। তোমাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোমাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তবে সবাই শোনো, ওরা কিন্তু কেবল আমাকেই চায়। আমাকে ছাড়া আর কারো সাথে ওদের কোনো কাজ নেই। তোমরা যদি আমার হাতে বাইয়াত করে থাকো তাহলে আমি সে বাইয়াত তুলে নিলাম,তোমরা সবাই এখন স্বাধীন। তোমাদের মধ্যে যে চলে যেতে চায় সে এখন অনায়াসেই চলে যেতে পারে। আর পারলে আমার পরিজনদের একজনকে হাত ধরে নিয়ে যাও! ইমামের মুখের দিকে চেয়ে অনেকে বিগিলত হতে পারে এ কারণে ইমাম এবার আলো নিভিয়ে দিয়ে বললেনঃ তোমরা এই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে যেতে পার। কেউ তোমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।
ইমামের একথা শুনে সবাই এক সাথে বলে উঠলোঃ হে ইমাম, একি কথা আপনি আমাদেরকে বলছেন? আমরা আপনাকে একা রেখে চলে যাব? আমাদের সামা একটা প্রাণের চেয়ে বেশী কিছু নেই যা দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারি! আল্লাহ যদি আমাদেরকে পর পর এক হাজারটা জীবন দান করতেন এবং এক হাজার বার আমরা আপনার রাস্তায় কোরবানী হতে পারতাম এবং জীবিত হয়ে পুনঃ পুনঃ আপনার জন্যে কোরবানী হতে পারতাম! এই সামান্য একটা প্রাণ তো আপনার রাস্তায় খুবই নগণ্য । আমাদের এই নগণ্য জীবন আপনার রাস্তায় কোরবানী হবার যোগ্য নয়।
বলা হয়েছেঃ ‘‘সর্ব প্রথম যিনি ইমামের জন্য বার বার জীবন দেয়ার ইচ্ছার কথা বলেছিলেন তিনি হলেন ইমামের বীর ভাই হযরত আবুল ফযল আল-আব্বাস।’’ ইমাম তাদেরকে এই চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখে আরো কিছু নতুন সত্যের পর্দা খুলে দিলেন। তিনি বললেনঃ এখন আমি হাকিকতকে তোমাদের সামনে বলতে চাই। সবাই জেনে রাখ যে,আগামীকাল আমরা সবাই শহীদ হবো।
আমাদের মধ্যে কেউই বেঁচে থাকবে না। সবাই বলে উঠল: আল্লাহকে লাখো শোকর যে, এ ধরনের একটা শাহাদাতের মর্যাদা আমাদেরকে দান করেছেন। পার্সটুডে