এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনের লেখক শায়না বুচনার বলেছেন, মিয়ানমার সরকার গত আট বছর ধরে ১ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে অমানবিক পরিস্থিতিতে আটকে রেখেছে। তাদের বাড়িঘর, জমি, জীবিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে, সেই আশাও সামান্য।
২০১৭ সালের আগে রাখাইনে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা ছিল। তারা কয়েক প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করছিল। কিন্তু, মিয়ানমার সরকার তাদের অভিবাসী উল্লেখ করে নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বছর তিনেক আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগে বর্তমানে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
দেশটিতে থেকে যাওয়া আড়াই লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অন্তত এক লাখ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। ২০১২ সালের সহিংসতায় ঘরছাড়া হয়েছিল এসব পরিবার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ১৬৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির বা এ ধরনের স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের অনেকেই চরম জীবিকা সংকটে ভুগছে। এক রোহিঙ্গার উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই শিবির বাসযোগ্য কোনও জায়গা নয়।’
এইচআরডব্লিউ বলেছে, মিয়ানমারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের জীবন ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা ক্রমবর্ধমান হুমকিতে রয়েছে। সেখানে অপুষ্টি ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা বাড়ছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া ও অসংখ্য চেকপয়েন্ট বসিয়ে স্বাধীনভাবে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে ব্যাপক চাঁদাবাজির সমস্যাও রয়েছে। কাউকে শিবিরের বাইরে পাওয়া গেলে তাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা চরম নির্যাতন চালান বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
মিয়ানমার সরকার ২০১২ সালের সহিংসতাকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বাকি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করেছে এইচআরডব্লিউ।
২০১৭ সালের এপ্রিলে দেশটির সরকার বলেছিল, তারা রোহিঙ্গা শিবিরগুলো বন্ধ করে দেবে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের আলাদা রাখার প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী করেছে মাত্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সাক্ষাৎকার নেয়া ব্যক্তিদের একজনও বিশ্বাস করে না যে, তাদের এই বন্দিদশা কখনও শেষ হবে।
এক রোহিঙ্গা বলেন, আমার মনে হয় এটাই চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। কিছুই বদলাবে না। এগুলো শুধুই মুখের কথা।
শায়না বুচনার বলেন, মিয়ানমার সরকারের দাবি, তারা জঘন্য কোনও আন্তর্জাতিক অপরাধ করছে না। এটি শুধু ফাঁকা বুলি থাকবে যতক্ষণ না তারা কাঁটাতার কেটে রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে পূর্ণ নিরাপত্তাসহ ফিরে যেতে দেবে।
রোহিঙ্গাদের এমন অবর্ণনীয় দুর্দর্শা থেকে উদ্ধার এবং দোষীদের বিচারে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। iqna