তাঁর উপাধি যাকী , নাক্বী এবং আল আস্কারী। তাঁর কুনিয়া (ডাকনাম) আবু মুহাম্মদ। তিনি আহলুল বাইতের ১২ নিষ্পাপ ইমামের একাদশ ইমাম। তিনি আহলুল বাইতের ১২ নিষ্পাপ ইমামের সর্বশেষ ইমাম (অর্থাৎ দ্বাদশ ইমাম) হযরত ইমাম মুহাম্মাদ যিনি মুসলিম উম্মাহর বহুল প্রতীক্ষিত ও প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী (আ.) তাঁর পিতা।
প্রসিদ্ধ অভিমত অনুসারে একাদশ ইমাম হাসান আল - আস্কারী ( আ .) ২৬০ হিজরী সালের ১লা রবিউল আউয়াল যালিম লম্পট আব্বাসীয় খলিফা মু'তামিদের নির্দেশে গোপনে প্রদত্ত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হন এবং ঐ বছরের ৮ রবিউল আউয়াল রোজ শুক্রবার মাত্র ২৮ বছর বয়সে ইরাকের সামার্রা নগরীর আস্কার (সামরিক ক্যান্টনমেন্ট বা সেনানিবাস) এলাকায় নিজ বাসভবনে শাহাদত বরণ করেন । তবে শেখ ও কাফ'আমীর মতে তাঁর শাহাদাত দিবস ২৬০ হিজরীর পহেলা রবিউল আউয়াল। তিনি স্বীয় পিতা মহানবীর ( সা.) পবিত্র আহলুল বাইতের (আ.) দশম ইমাম আলী আল - হাদীর ( আ .) শাহাদাতের পর ২২ বছর বয়সে ইমাম হন । তাঁর ইমামত কাল ছিল ৬ বছর ।
ইমাম হাসান আল-আস্কারী ২৩২ হিজরীর ৮ অথবা ১০ রবীউস সানী মতান্তরে ৪ রবীউস সানী মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে তিনি ২৩১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলেন অত্যন্ত পূণ্যময়ী সতী-সাধ্বী নারী। তাঁর নাম ছিল হুদাইসা। তবে কোনো কোনো সীরাত রচয়িতার মতে তাঁর নাম ছিল সূসান। তিনি ছিলেন সৎকর্মশীল এবং সঠিক ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও আকিদা-বিশ্বাসের অধিকারী এক মহীয়সী নারী।
তাঁর সুমহান মর্যাদা ও ফযীলতের জন্য ব্যাস এতোটুকুই যথেষ্ট যে তিনি ছিলেন ইমাম হাসান আল-আস্কারীর ( আ .) শাহাদাতের পর আহ্লুলবাইতের - আলাইহিমুস সালাম - অনুসারীদের আশ্রয়স্থল । কারণ ঐ সময় বা যুগ ছিল আহলুল বাইত ( আ .) ও তাঁদের ভক্ত-অনুসারীদের চরম ক্রান্তিকাল ও শ্বাসরুদ্ধকর দুঃসময় ।
স্মর্তব্য যে ইমাম হাসান ইবনে আলী আল - আস্কারীকে ( আ.) যালিম আব্বাসীয় খিলাফত প্রশাসন বলপূর্বক মদীনা থেকে সামার্রার আস্কারে ( সামরিক এলাকা ) এনে গৃহবন্দী ও অন্তরীন করে রেখেছিল বলেই তাঁর উপাধি ( লকব ) আস্কারী হয়েছে । উল্লেখ্য যে তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা আহলুল বাইতের (আ.) দশম মাসূম ইমাম আলী আল - হাদীকেও ( আ. ) সামার্রার সামরিক এলাকায় ( আস্কার ) গৃহবন্দী করে রেখেছিল তদানীন্তন যালিম আব্বাসীয় খিলাফত প্রশাসন ।
একাদশ ইমাম হাসান আল - আস্কারীকে (আ.) শাহাদাতের পর তাঁর বাসভবনে পিতা দশম মাসূম ইমাম আলী আল - হাদীর (আ.) কবরের পাশে দাফন করা হয় । আর আস্কার বা সামরিক এলাকায় দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকার কারণেই এ দুই ( দশম ও একাদশ ) ইমামকে বলা হয় আল - ইমামান আল - আস্কারীয়ান ।
সূত্র সমূহ :
১ ও ২ . শেখ আব্বাস কোমী প্রণীত
নেগহী বে যেন্দেগনীয়ে চাহরদাহ মাসূম - আলাইহিমুস সালাম - পৃ : ৪৭২ - ৪৭৩ এবং ৫১৫ - ৫১৬ এবং মাফাতীহুল জিনান , পৃ : ৫৩৬
৩. আল্লামা আব্দুর রহমান জামী প্রণীত ( মাওলানা মুহিউদ্দীন খান অনূদিত ) শাওয়াহেদুন নবুওত , পৃ : ২৭৬ ;
৪. আয়াতুল্লাহ জাফার সুবহানী প্রণীত সীরেয়ে পীশভয়ন , পৃ : ৬১৭ - ৬১৮ ;
৫. শেখ হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আদ -দিয়ারবাকরী
প্রণীত তারীখুল খামীস ফী
আহওয়ালি আনফাসিন নাফীস , পৃ : ৩৮৭ - ৩৮৮
সংকলন ও অনুবাদ :
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
৮ রবীউল আওওয়াল , ১৪৪৩ হি.