IQNA

নিরপেক্ষ থাকায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত

10:56 - March 25, 2022
সংবাদ: 3471608
তেহরান (ইকনা): ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত নিন্দা প্রস্তাবে বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ছিল। এ জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মান্টিটাস্কি। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব জানিয়ে তিনি বলেছেন, ইউক্রেন সঙ্কটের পর সুইফট সিস্টেম এড়িয়ে রাশিয়া ও বাংলাদেশ অর্থ লেনদেন ও বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিকল্প পদ্ধতি খুঁজছে। কারণ, সুইফট ব্যবহারের ওপর রাশিয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই জাতীয় মুদ্রা হাতবদল ও তৃতীয় কোনো দেশের ব্যাংকের ব্যবহার সহ বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে রাশিয়া।
রাশিয়ান ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও এর উন্নয়ন নিয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত। ‘ওয়ান মান্থ অব দ্য রাশিয়াস স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন ইন ইউক্রেন: কজেস রেজাল্টস, দ্য ওয়ার্ল্ড অব পোস্ট-ট্রুথ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোর দেন তিনি। এগুলো হলো- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমি, যুদ্ধ এড়ানোর জন্য রাশিয়ার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অপারেশনের ফল, ইউক্রেনে পশ্চিমাদের সামরিকীকরণ ও নাৎসীকরণ, যুদ্ধের অর্থনৈতিক পরিণতি এবং নতুন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক।
 
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গত ২রা মার্চ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়, তাতে বাংলাদেশের দেয়া ভোট প্রসঙ্গে রাশিয়ার দূত প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশের ‘দায়িত্বশীল এবং ভারসাম্যপূর্ণ’ অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
 
তিনি বলেন, কথিত ভোটের সময় বাইরের প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিস্ক্রিয় অবস্থান নেয়। এ জন্য বাংলাদেশের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত ছিল। এ সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন খুব সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং, এ বিষয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই।
 
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মান্টিটাস্কি বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সে জন্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বাংলাদেশ। এসব বিষয় আমরা বুঝতে পারি। এখন পর্যন্ত যেসব কাজ হচ্ছে তা নির্ধারিত সময় ধরেই এগুচ্ছে। আগে এ প্রকল্প শেষ করার জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
 
এরই মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ তাদের পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুইফট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়া অর্থ স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি সুইফট ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশে তাদের যেসব প্রকল্প চলমান তাতে অর্থায়ন নিয়ে এক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, গত সপ্তাহে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাস বার্টার বাণিজ্যের (পণ্যের বিনিময়ে পণ্য, যা বার্টার বা কাউন্টার ট্রেড নামে পরিচিত) বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যায় কি না, তা নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। আমি এটুকু বলতে পারি, দুই দেশ ব্যবসা ও লেনদেন অব্যাহত রাখার স্বার্থে বার্টার, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের মুদ্রা বিনিময় (রুবল ও টাকার মধ্যে) এবং তৃতীয় দেশের ব্যাংক ব্যবহারের মতো বিকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করছে।
 
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য কমানো নয়, বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়া। এ মুহূর্তে পশ্চিমা অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সরকারের চাপে রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের অংশীদারদের জন্য অবিশ্বস্ত অংশীদারেরা দূরে সরে গিয়ে এক দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে।’
 
রাশিয়া থেকে কেনা গম ও জ্বালানির দাম বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলছি, সরবরাহের বিষয়ে রাশিয়ার যে বাধ্যবাধকতা, সেটা পূরণ করা হবে। বাড়তি চাহিদা নিয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ও কিছু গণমাধ্যম জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়ায় এখানে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। রাশিয়া ও বেলারুশের ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে সারের মূল্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। সারা বিশ্বে পটাশ সারের প্রধান জোগানদাতা রাশিয়া ও বেলারুশ, যা কৃষির অন্যতম প্রধান উপাদান।
 
পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে দমিয়ে রাখতে পারবে না উল্লেখ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মান্টিটাস্কি বলেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামবে না। ইতিহাসের নানা পর্বে সংকট মোকাবিলা করেই রাশিয়া এগিয়েছে। এখনকার পরিস্থিতি ভালোভাবে মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াবে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনারা আবাসিক এলাকায় কামান, ট্যাংকসহ নানা সামরিক সরঞ্জাম জড়ো করেছে। আমাদের সেনারা তখন সেখানে হামলা করলে অভিযোগ করা হচ্ছে, আমরা আবাসিক এলাকায় হামলা করেছি।
 
বাংলাদেশকে কোয়াড জোটে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটা বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা এ ধরনের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করি না। রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

 

captcha