ইসলামের শিক্ষা—দুর্যোগ, দুর্ভোগ, দুর্দিনে সর্বশক্তি ব্যয় করে বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো; সর্বপ্রকার অর্থ ও খাদ্য সহায়তা, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা এবং চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসা। এটা ঈমানের দাবি। এজাতীয় কাজে মহান আল্লাহও খুশি হন। কোরআন ও হাদিসে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেদিন আসার পূর্বেই যেদিন কোনো বেচাকেনা, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না। ’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৪)
অন্যত্র তিনি আরো বলেন, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার আছে। ’ (সূরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
মহানবী (সা.) বলেন, মুমিনরা পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো দেহ সে ব্যথা অনুভব করে। (বুখারি, হাদিস : ৬০১১)
অন্য এক হাদিসে তিনি বলেন, বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে নিরত থাকে, আল্লাহও তার সাহায্যে থাকেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
সাহাবায়ে কিরাম নিজেদের খাবার পরস্পরের মাঝে ভাগাভাগি করে খেতেন। নিজেদের আনন্দ-বেদনা একে অপরে ভাগাভাগি করে নিতেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আর তারা শুধু আল্লাহকে ভালোবেসে খাদ্য দান করে মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করেছি, তোমাদের কাছে আমরা এর জন্য কোনো বিনিময় চাই না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও না। ’ (সূরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)
অসহায়দের সেবাদানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা তার পথের মুজাহিদ, তাহাজ্জুদগুজার ও নিয়মিত নফল রোজা পালনকারী ব্যক্তির মতো মর্যাদা দিয়েছেন। হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শরীরের প্রতিটি জোড়ার ওপর প্রতিদিন একটি করে সদকা আছে। কোনো ব্যক্তিকে তার বাহনে উঠতে সাহায্য করা কিংবা বাহনে মালামাল উঠিয়ে দেওয়া সদকা। ভালো কথা বলা ও সালাতের উদ্দেশে গমনের প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা। পথ দেখিয়ে দেওয়া সদকা। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯১)
অন্যত্র মহানবী (সা.) বলেন, যে মুসলমান অন্য মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় পেয়ে বস্ত্র দান করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে জান্নাতে ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতে শরবত পান করাবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৫২)
বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে বানভাসি মানুষের আর্তচিৎকার ও অসহায়ত্বের সংবাদ ভেসে আসছে। এই দুর্যোগে কেউ হারিয়েছে আপনজন, আর্থিকভাবে কেউ হয়েছে রিক্ত ও নিঃস্ব, আবার কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এমন অবস্থায় তাদের সাহায্য-সহায়তার জন্য দেশের সম্পদশালী ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। আবু জার (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল উত্তম? তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তার পথে জিহাদ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম? তিনি বলেন, যে ক্রীতদাসের মূল্য বেশি এবং যে ক্রীতদাস তার মনিবের কাছে আকর্ষণীয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ যদি আমি করতে না পারি? তিনি বললেন, তাহলে কারিগরকে (তার কাজে) সাহায্য করবে কিংবা বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। আমি আরো বললাম, এও যদি না পারি? তিনি বলেন, মানুষকে তোমার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত রাখবে। বস্তুত এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ থেকে সদকা। (বুখারি, হাদিস : ২৫১৮)
অর্থ-বিত্ত, শক্তি-সামর্থ্য ও সহায়-সম্পত্তির সাময়িক সময়ের জন্য মালিকানা দেওয়া হয়েছে মানুষকে। আল্লাহ তাআলা এসবের মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। যারা তা যথাযথ পন্থায় কাজে লাগায় তারা সফল। অন্যথা কিয়ামতে এর জন্য তাদের ধরা খেতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেন, হে বনি আদম, আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসোনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে যাব? আপনি তো বিশ্বজগতের পালনকর্তা। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না—আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে আমাকে অবশ্যই তার কাছে পেতে? হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি আপনাকে কিভাবে খাবার দিতাম? আপনি তো বিশ্বজগতের পালনকর্তা।
আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না—আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল? তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি জানতে না—সে সময় তুমি যদি তাকে খাবার দিতে তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে? হে বনি আদম, আমি তোমার কাছে পিপাসা নিবারণের জন্য পানি চেয়েছিলাম, তুমি পানি দিয়ে তখন আমার পিপাসা নিবারণ করোনি। সে বলবে, হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনার পিপাসা নিবারণ করতাম? আপনি তো বিশ্বজগতের পালনকর্তা। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তখন তাকে পানি দাওনি। তুমি যদি সে সময় তাকে পানি দিতে, তাহলে তা এখন আমার কাছে পেতে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৯)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : ইমাম ও খতিব, শেখ হাসিনা পদ্মপুকুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদ, মহেশপুর, ঝিনাইদহ