১৩ রজব হযরত আমীরুল মু'মিনীন ইমাম আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) শুভ জন্মদিনকে পিতা দিবসও বলা হয়। কারণ মহানবী (সা) নিজেকে এবং হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর পিতা বলে অভিহিত করেছেন। আমরা নীচে এতদসংক্রান্ত কয়েকটি রিওয়ায়ত ( হাদীস) উল্লেখ করছি :
১. হযরত ফাতিমা যাহরা ( আ ) বলেছেন: হযরত রাসূলুল্লাহ সা) ও হযরত আলী মুসলিম উম্মাহর পিতা ; যদি জনগণ ( উম্মত ) তাদেরকে অনুসরণ করে তাহলে তাঁরা ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী) তাদের ( উম্মত ) বক্রতা ও বিচ্যুতি সংশোধন করে তাদেরকে চিরস্থায়ী আযাব ( শাস্তি ) থেকে নাজাত ( মুক্তি) দেবেন এবং উম্মৎ যদি তাঁদের ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী) সহগামী ও সাহায্যকারী হয় তাহলে তারা ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী ) তাদেরকে ( উম্মত ) মহান আল্লাহর চিরস্থায়ী নেয়ামত প্রদান করবেন ( অর্থাৎ তাঁরা মহান আল্লাহর অনুমতি নিয়ে উম্মতের জন্য মহান আল্লাহর নেয়ামত সমূহের সুবন্দোবস্ত ও ব্যবস্থা করে দেবেন ) । " *
* কারণ মহানবী (সা) এবং তাঁর মাসূম পবিত্র আহলুল বাইত (আ) হচ্ছেন সৃষ্টি জগতের কাছে মহান আল্লাহর রহমত , বরকত ও নেয়ামত পৌঁছানোর তোরণ ও দ্বারদেশ অর্থাৎ বাব স্বরূপ । )
২. অপর এক রেওয়ায়তে বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ( আ ) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছি : আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা এবং তাদের ওপর আমাদের ( রাসূলুল্লাহ ও হযরত আলী) হক ( অধিকার) তাদের নাসাবী ( রক্তের সম্পর্কের অর্থাৎ জন্মদাতা পিতাদের হকের ( অধিকার ) চেয়েও বড় ও মহান ( বেশি ) । কারণ , তারা ( উম্মত ) যদি আমাদের আনুগত্য করে তাহলে আমরা তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে চিরস্থায়ী শান্তির ধাম ও আবাসস্থলের ( বেহেশত ) দিকে নিয়ে যাব এবং মহান আল্লাহর প্রতি খাঁটি দাসত্ব করার মাধ্যমে ( গায়রুল্লাহর দাসত্ব বন্ধন থেকে মুক্ত করে) মুক্ত ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম তাদের কাতারে তাদেরকে ( উম্মত ) শামিল ও অন্তর্ভূক্ত করব ।
( সূত্র: আল্লামা মাজলিসী সংকলিত বিহারুল আনোয়ার ,খ : ২৩ , পৃ : ২৫৯ , বৈরূত , আল - ওয়াফা , ১৪০২ হি )
سمعتُ رسول الله (ص) بقول : أنا و علي أبوا هذه الأمّة و لَحَقُّنَا علیهم أعظم من حقّ أبوي وِلادتهم فَإنّها نُنْقِذُهُم إن أطاعونا من النار إلی دار القرار و نلحقهم من العبودیة بخیار الأحرار .
৩. মহানবী (সা) বলেছেন: আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা।
أَنَا وَ عَلِيٌّ أَبَوَا هٰذِهِ الأُمَّةِ .
( সূত্র : আল - বুরহান ফী তাফসীরিল কুরআন, খ : ২ , পৃ : ৭৭ , সূরা -ই নিসা : ৩০- ৩৯ আয়াতের ব্যাখ্যায় )
আর এ হাদীসটি আল - ফায়েকের রচয়িতাও রিওয়ায়ত করেছেন।
আহলুল বাইতের ( আ ) হাদীসী সূত্র সমূহে এ হাদীস নি: সন্দেহে নির্ভর যোগ্য ( মু'তাবার ) হাদীস। কারণ তা অনেক হাদীস গ্রন্থ যেমন: বিহারুল আনোয়ার, ইলালুশ শারায়ে' , উয়ূনু আখবারির রিযা, আল - মানাকিব ইত্যাদিতে বর্ণিত হয়েছে । হাদীসে বর্ণিত ' পিতা ' নাসাবী ( রক্ত সম্পর্কীয় অর্থাৎ জনক বা জন্মদাতা ) পিতার অর্থে নয় বরং এ পিতা ও পিতৃত্ব হচ্ছে আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক - রূহানী পিতা ও পিতৃত্ব অর্থাৎ মহানবী ( সা ) ও ইমাম আলী ( আ ) মুসলিম উম্মাহকে সরল সঠিক পথে শিক্ষা - প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং হিদায়ত করেছেন । এই দুই পিতা না হলে শিশু মুসলিম উম্মাহ পূর্ণতা , প্রগতি এবং উপযুক্ত ও যথার্থ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভ করা থেকে বঞ্চিত হত ও বঞ্চিত থেকেই যেত । এখানে স্মর্তব্য যে মহানবী ( সা ) ও হযরত আলীর ( আ ) এ পিতৃত্ব বেলায়েতের মাকাম থেকে উৎসারিত পিতৃত্ব ( বেলাই পিতা ও পিতৃত্ব الأبوة الولاییة) । গাদীর - ই খুমের হাদীসে (( আমি যার মওলা এ আলী তার মওলা [ من کنتُ مولاه فهذا عليٌّ مولاه ] )) মওলা ও ওয়ালী এখানে অভিভাবক, তত্ত্বাবধায়ক , কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ, পরিচালক, নেতা , পথপ্রদর্শক , প্রশাসক অর্থে ; তবে তা বন্ধু অর্থে নয় । আর এ অর্থে মওলা ও ওয়ালী এবং বেলায়েত আসলে পিতা ও পিতৃত্বের মতো । কারণ পিতা ( জনক ) সন্তানের ভরণপোষণ এবং তার সার্বিক বিষয়ের তত্ত্বাবধান করেন বলেই সন্তানের অভিভাবক এবং পিতৃ স্নেহ লাভ করে ও পিতার ছায়াতলে সন্তান প্রতিপালিত , প্রশিক্ষিত ও বিকশিত ও পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় । কিন্তু উম্মতের অভিভাবক, তত্ত্বাবধায়ক ও পথপ্রদর্শক ( হাদী ) হিসেবে মওলা ও ওয়ালীর দায়িত্ব ঔরসজাত সন্তানের প্রতি স্নেহশীল জনক পিতার দায়িত্বের চেয়েও অনেক অনেক মহান , বড় ও অধিক । আসলে এ ক্ষেত্রে তুলনাই চলে না । তাই রাসূলুল্লাহ (সা) ও হযরত আলী ( আ ) মওলা ও ওয়ালী হিসেবে স্নেহশীল নাসাবী ( রক্ত সম্পর্কীয় জন্মদাতা) পিতার চেয়েও অনেক অনেক বেশি স্নেহশীল, দয়ালু ও শুভাকাঙ্ক্ষী উম্মতের জন্য । আর এ কারণেই মহানবী ( সা ) ও হযরত আলী ( আ ) আধ্যাত্মিক ও রূহানী পিতা হিসেবে সন্তানের কাছে রক্ত সম্পর্কীয় স্নেহশীল জন্মদাতা পিতার নৈকট্যের চাইতেও মুমিনদের কাছে মুমিনদের নিজেদের চাইতেও অধিক নিকটবর্তী ( আওলা أَوْلیٰ ) ।
তাই পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে : নবী ( সা ) মুমি নদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও সর্বাধিক নিকটবর্তী ( আর এভাবে যে সর্বাধিক নিকটবর্তী সেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অর্থাৎ আওলা أَوْلَیٰ ) ...( সূরা -ই আহযাব : ৬ )।
النَّبِيُّ أَوْلَیٰ بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
আর গাদীর - ই খুমের দিবসে হযরত আলীকে (আ) উম্মতের মওলা বলে ঘোষণা দান কালে মহানবী ( সা ) আওলা ( অধিকতর নিকটবর্তী ও সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ) শব্দটিও তাঁর গাদীর - ই খুমের খুতবায় ( ভাষণ ) ব্যবহার করেছেন। আমরা নীচে সুনান - ই ইবনে মাজাহ থেকে গাদীর -ই খুমের হাদীসের উদ্ধৃতি দিচ্ছি :
( সাহাবী) বার্রা ইবনে আযিব বলেন : মহানবী (সা) যে বিদায় হজ্জ সম্পন্ন করেন সেই হজ্জে আমরা রাসূলুল্লাহর ( সা ) সাথে ফিরছিলাম (মদীনায়) ; তখন তিনি পথিমধ্যে যাত্রাবিরতি করলেন ( গাদীর-ই খুম নামক স্থানে ) । অত:পর তিনি জামাতে নামায আদায়ের আদেশ দিলেন। এরপর তিনি আলীর হাত ধরলেন এবং বললেন : " আমি মু'মিনদের নিজেদের কাছে তাদের নিজেদের ( সত্ত্বা ও প্রাণের) চেয়েও অধিক নিকটবর্তী ( সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অর্থাৎ আওলা ) নই কি ? " (তখন) সবাই বলল : " হ্যাঁ । " তিনি ( সা ) বললেন : " আমি প্রত্যেক মু'মিনের কাছে তার নিজের চাইতে অধিক নিকটবর্তী ( সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত)
নই কি ? " সবাই ( তখন ) বলল : " হ্যাঁ । " তিনি ( সা ) বললেন : " সুতরাং এ ( আলী ) তার ওয়ালী ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ , তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক ) যার আমি মওলা ( কর্তৃত্বশীল কর্তৃপক্ষ , তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক ) । হে আল্লাহ ! তাকে সমর্থন ও সাহায্য করুন যে তাকে সমর্থন ও সাহায্য করে এবং তার সাথে যে শত্রুতা করে তার সাথে শত্রুতা করুন । "
عن البراء بن عازب ، قال : أقبلنَا مع رسول الله - ص- في حِجّته الّتي حجّ . فنزل في بعض الطریق . فأمر الصلاة جامعةً . فأخذ بید عليّ ، فقال : « ألستُ أولیٰ بالمومنین من أنفسهم ؟ » قالوا : بلیٰ . قال : « ألستُ أولیٰ بِکُلّ مؤمن من نفسه ؟ » قالوا : بلیٰ . قال : « فهذا وليّ من أنا مولاه . اللهم والِ من والاه . اللهم عادِ من عاداه. »
সুনান ইবনে মাজাহ্ , হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের ( রা : ) ফযীলতের অধ্যায় , হাদীস নং ১১৬ , পৃ : ৩০ , ১ম সংস্করণ , ১৪২১ হি : মুদ্রিত , বৈরূত , লেবানন ।
আল্লামা আলবানী এ হাদীস বর্ণনা করার পরে বলেছেন : " ( এ হাদীস) সহীহ । " ( দ্র: মুহাম্মদ নাসির আলবানী প্রণীত সহীহু ইবনে মাজাহ্ , খ : ১ , পৃ : ২৬ , হাদীস নং ১১৩ আল - মাকতাবাতুশ শামিলার প্রোগ্র্যাম অনুযায়ী )।
এই সহীহ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সকল মু'মিনের কাছে তাদের নিজেদের ( সত্ত্বা ও জীবনের ) চেয়ে অধিক নিকটবর্তী ও সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হওয়ার কারণেই মহানবী ( সা ) তাদের সবার মওলা ও ওয়ালী এবং মহানবী (সা) এ অর্থে যার মওলা ও ওয়ালী হবেন হযরত আলীও (আ) হবেন তার মওলা ও ওয়ালী । বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে মওলা ও ওয়ালীর অর্থ একই এবং এই একই অর্থে মওলা ও ওয়ালী উপরিউক্ত হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে। অতএব মহানবী (সা) ও ইমাম আলী (আ) আওলা ( সবচেয়ে নিকটবর্তী ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ) অর্থে এ উম্মতের মওলা ও ওয়ালী হওয়ার জন্যই তাদের ( এ উম্মত ) পিতা । তাই এ পিতৃত্ব বেলায়েত ও হিদায়তের মাকাম থেকে উৎসারিত পিতৃত্ব ।
সুতরাং স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে হযরত আলী ( আ ) মহানবীর (সা) মুসলিম উম্মাহর আধ্যাত্মিক ও রূহানী পিতা জাতির পিতা । আর তাই হযরত আলীর ( আ ) জন্ম দিবস ( ১৩ রজব ) ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ' পিতা দিবস ' বলে ঘোষিত হয়েছে । আমরা ১৩ রজব ইমামুল আয়িম্মাহ্ ( ইমামদের ইমাম ) আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ ) শুভ জন্মদিন এবং পিতা দিবস উপলক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ও পিতাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও মুবারক বাদ ।
পরিশিষ্ট :
সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে :
মহানবী (সা) হযরত আলীকে বললেন : তুমি আমার থেকে এবং আমি তোমার থেকে।
وَ قَالَ النَّبِيُّ - ص- لِعَلِيٍّ : « أَنْتَ مِنِّيْ وَ أَنَا مِنْکَ . »
আর হযরত উমর বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সা) এমন অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন যে তিনি ( সা ) তাঁর ( আলী ) প্রতি রাযী ( সন্তুষ্ট ) ছিলেন।
وَ قَالَ عُمَرُ : تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللّٰهُ - ص- وَ هُوَ عَنْهُ رَاضٍ .
দ্র : সহীহুল বুখারী , কিতাবু ফাযায়েলিস সাহাবা , বাব মানাকিবি আলী ইবনে আবী তালিব আল - কুরাশী আল - হাশিমী আবিল্ হাসান ( রা : ) , পৃ : ৯০৭ , দারুল ফিকর, বৈরূত , লেবানন , ১ম সংস্করণ , ২০০৮ খ্রি : প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারীতে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত হয়েছে : তিনি ( সা'দ ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা) তাবূকের দিকে বের হলেন এবং আলীকে ( মদীনায় ) প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত করলেন । অত:পর তিনি (আলী) বললেন : " আপনি কি আমাকে শিশু ও নারীদের মাঝে প্রতিনিধি ( খলীফা ) করে রেখে যাচ্ছেন ? " তিনি (সা) বললেন : " মূসার কাছে হারূনের শা'ন , মাকাম ,স্থান ও মর্য্যাদার ( মানযিলাত ) মতো আমার কাছে তোমার শা'ন , মাকাম , স্থান ও মর্য্যাদা যে হোক তাতে তুমি সন্তুষ্ট নও । তবে আমার পরে কোনো নবী নেই। " ( এ হাদীস হাদীস - ই মানযিলাত বলে খ্যাতি লাভ করেছে । )
عن مصعب بن سعد عن أبیه أَنّ رَسُوْلَ اللّٰهِ - ص - خَرَجَ إِلَیٰ تَبُوْکَ وَ اسْتَخْلَفَ عَلِیَّاً فَقَالَ : أَ تُخَلِّفُنِيْ فِي الصِّبْیَانِ وَ النِّسَاءِ ؟ قَالَ : « أَلَا تَرْضَیٰ أَنْ تَکُوْنَ مِنِّيْ بِمَنْزِلَةِ هَارُوْنَ مِنْ مُوْسَیٰ ، إِلَّا أَنَّهُ لَیْسَ نَبِيٌّ بَعْدِيْ .
প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারী, কিতাবুল মাঘাযী , বাব গাযওয়াতি তাবূক , হাদীস নং ৪৪১৬ , পৃ : ১০৭৬
পূর্বোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে আলী ( আ ) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এবং রাসূলুল্লাহ (সা) আলী ( আ ) থেকে। আর পূর্বোক্ত হাদীস এবং হাদীস - ই মানযিলাত থেকেও স্পষ্ট হয় যে খতমে নুবুওয়ত হয়ে যাওয়ার কারণে একমাত্র নুবুওয়তের মাকাম ব্যতীত যে সব ধর্মীয় , আধ্যাত্মিক , রূহানী, সামাজিক , রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মাকাম , বেলায়েত , নেতৃত্ব ( ইমামত ) ও হিদায়তের পদ রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য নির্ধারিত আছে ঠিক সেগুলোই হযরত আলীর ( আ ) জন্যও নির্ধারিত আছে । মহানবী ( সা ) যদি উম্মতের মওলা , ওয়ালী এবং আদর্শিক ও রূহানী পিতা হন তাহলে হযরত আলীও অবশ্যই ( আ ) এ উম্মতের মওলা , ওয়ালী এবং আদর্শিক ও রূহানী পিতা হবেন এই দুই হাদীস অনুযায়ী। আর হাদীস - ই গাদীরে মহানবী (সা) হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী বলে ঘোষণা দেন। কারণ তিনি এ দিন ঘোষণা করেছিলেন যে আলী ( আ ) তাদের ওয়ালী যাদের মওলা তিনি ( সা )। রাসূলুল্লাহ (সা) কাদের মওলা ও ওয়ালী ? তিনি মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী। সুতরাং আলীও মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী । আর এ আলোচনার শুরুতে রাসূলুল্লাহর হাদীস : তিনি (সা) বলেছেন : আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা। আর এ বিষয়টি আলীকে রাসূলুল্লাহর বাণী : " তুমি আমার থেকে এবং আমি তোমার থেকে। " , হাদীস - ই মানযিলাত এবং গাদীর -ই খুমের হাদীস দ্বারাও সমর্থিত হয় । অর্থাৎ যেহেতু আলী রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে এবং রাসূলুল্লাহও (সা) তার ( আলী ) থেকে , যেহেতু মূসার কাছে হারূনের যে মাকাম রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে আলীরও সেই মাকাম তবে মহানবীর পরে কোনো নবী নেই , এবং যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা) ও হযরত আলী (আ) মুসলিম উম্মাহর মওলা ও ওয়ালী এবং যেহেতু হযরত আরো অগণিত ফাযায়েলের অধিকারী ছিলেন সেহেতু মহানবী (সা) বলেছেন : " আমি ও আলী এ উম্মতের পিতা। " আর এ সব থেকে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয় যে হযরত আলী হচ্ছেন এ উম্মাহর আদর্শিক, আধ্যাত্মিক - রূহানী পিতা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি বলেই রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে নিজের সাথে উম্মাহর আদর্শিক আধ্যাত্মিক রূহানী পিতা বলে ঘোষণা দিয়েছেন।