পবিত্র কুরআনের ৫৯তম সূরার নাম ‘হাশর’। ২৪টি আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি ২৮তম পারায় অবস্থিত। এই সূরাটি মাদানী সূরা এবং নাযিলের ক্রমানুসারে এই সূরাটি ১০১তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
"হাশর" শব্দের অর্থ যুদ্ধে সমসমাবেশ এবং এই শব্দের অপর একটি অর্থ হচ্ছে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য একটি দলকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া বা তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা এবং এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতে বনী নাযির গোত্রের ইহুদিদের তাদের মদীনা ভূমি থেক বিতাড়নের নির্দেশ করা হয়েছে।
ইসলামের নবী (সা.)-এর মদিনা শহরে হিজরতের সময় মদিনায় বসবাসকারী ইহুদি গোত্রসমূহের একটি গোত্র ছিল ‘বনি নাজির’। সে সময় বনি নাজির মুসলমানদের সাথে একটি চুক্তি করেছিল যে মদিনায় শত্রুর আক্রমণ হলে তারা মুসলমানদের সাথে সাথে প্রতিরক্ষা করবে, কিন্তু বনি নাজির তাদের চুক্তি পূরণ করেনি এবং ইসলামের নবী (সা.) তাদের সাথে যুদ্ধে নামেন। অবশেষে বনি নাযির পরাজিত হন এবং মদীনা থেকে বিতাড়িত হন।
এই সূরার বিষয়গুলি সাধারণত ভাল নাম এবং গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয়, ইসলামে যুদ্ধের নিয়ম-কানুন, ইহুদি ও মুনাফিকদের বিপদ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের যোগসূত্র, আল্লাহকে ভুলে যাওয়া এবং এর পরিণতি, সাধারণ প্রশংসা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও মানুষের আত্মা এবং শরীর পবিত্রকরণের ক্ষেত্রে কুরআনের প্রভাবের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সূরা আল হাশর শুরু হয়েছে আল্লাহর তাসবীহ, প্রশংসা ও প্রার্থনা দিয়ে অর্থাৎ سَبَّحَ لله -এর মাধ্যমে শুরু হয়েছে। এই বিষয়টিকে এই সূরার বিভিন্ন বিষয়ের একটি ভূমিকা হিসাবে বিবেচনা করা হয়; এটা মহান এবং সর্বজ্ঞানী আল্লাহর সামনে প্রাণীদের সাধারণ প্রশংসা সম্পর্কে।
পরবর্তীতে মদিনার চুক্তি ভঙ্গকারী ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের সংঘাত এবং ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ এবং তাদের মদিনা থেকে বিতাড়নের কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূরার আয়াত অনুসারে, কেউ কল্পনাও করেনি যে মুসলমানরা চুক্তি ভঙ্গকারী ইহুদিদের পরাজিত করার এবং তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে, কিন্তু আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা নিজের হাতে তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেয়।
এই যুদ্ধ বিনা সংঘর্ষে শেষ হয়েছিল, সম্পত্তি এবং যুদ্ধের গনিমত ভাগ করার নিয়মগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং মুনাফিকদেরকে দোষসমূহ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মুসলমানদের প্রতি তাদের বিশ্বাসঘাতক আচরণ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত আকারে তিনি পবিত্র কোরান বর্ণনা এবং মানুষের আত্মা ও জীবনকে শুদ্ধ করার ক্ষেত্রে এর প্রভাব ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং পরিশেষে, আল্লাহর সৌন্দর্য ও মহিমা এবং তাঁর ভাল নামগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গণনা করা হয়েছে, যা মহান আল্লাহকে জানার জন্য মানুষকে সাহায্য করে।