পবিত্র কুরআনের ৬৭তম সূরা’র নাম "মুলক"। ৩০টি আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি পবিত্র কুরআনের ২৯তম পারায় অবস্থিত। এই সূরাটি মক্কী সূরা এবং নাযিলের ক্রমানুসারে এই সূরাটি ৭৭তম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
"মুলক" শব্দের অর্থ শাসন এবং এই সূরাতে সমস্ত অস্তিত্বের উপর আল্লাহর শাসনকে বুঝানো হয়েছে। সূরাটির নামকরণের পিছে কারণ হল সূরাটির প্রথম আয়াতে "মুলক" শব্দের উপস্থিতি।
সূরা মুলকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমগ্র বিশ্বে আল্লাহর আধিপত্য তুলে ধরা এবং বিচার দিবস সম্পর্কে সতর্ক করা। এ কারণেই, সূরাটিতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি ও সেগুলোর পরিচালনা সংক্রান্ত অনেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। এসব নেয়ামত উল্লেখ করার মাধ্যমে তিনি তাঁর সর্বশক্তিমান হবার বিষয়ে দলিল উপস্থাপন করেছেন।
মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর আধিপত্য ও ক্ষমতার বিষয়টি এই সূরাতে বিশেষভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এই আয়াতের বর্ণনার ধরণ থেকে বুঝা যায় যে, সমগ্র অস্তিত্বের উপর আল্লাহ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখেন যে তিনি চাইলেই এতে যে কোন ধরনের পরিবর্তন করতে পারেন।
সূরাটি আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতার সৌন্দর্য বর্ণনার মাধ্যমে শুরু হয়। অতঃপর জন্ম, মৃত্যু এবং জীবনকে মানুষের জন্য ঐশী পরীক্ষা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।
এই সূরাতে মানুষের জন্ম ও মৃত্যুকে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও শাসনের দলিল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর এই দুটি পরীক্ষা, মানুষের পাক ও পরিশুদ্ধতা প্রাপ্তির একজাতীয় শিক্ষা যা একজন মানুষকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
অতএব, মহাবিশ্ব মানুষের পরীক্ষার জন্য একটি বড় স্থান আর এই পরীক্ষার মাধ্যম হল জীবন ও মৃত্যু এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী করা। অর্থাৎ জ্ঞানের পরিপূর্ণতা লাভ করা, নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা এবং নেক আমল আঞ্জাম দেয়া।
এই সূরার বিষয়গুলোকে তিনটি ভাগে বিবেচনা করা যেতে পারে: প্রথমত, আল্লাহর গুণাবলী এবং সৃষ্টির বিস্ময়কর ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ করে নভোমণ্ডল ও নক্ষত্রের সৃষ্টি, পৃথিবী ও পার্থিব নিয়ামতের সৃষ্টি, পাখি ও প্রবাহিত পানির সৃষ্টি এবং কান, চোখ ও ইন্দ্রিয় সৃষ্টির মত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এরপর তিনি শেষ দিবস, কিয়ামত, জাহান্নামের আযাব এবং জাহান্নামীদের সাথে আযাবের দানকারীদের কথোপকথন নিয়ে আলোচনা করেন। তৃতীয় অংশে তিনি কাফের ও অত্যাচারীদের সতর্ক করেছেন এবং তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের সব ধরনের শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
কি-ওয়ার্ড: কুরআনের সূরাসমূহ, ১১৪, সূরা মুলক, আল্লাহর কুদরত, আল্লাহর শাসন, আল্লাহর সতর্কতা।