IQNA

হযরত মাহদী ও হযরত ঈসার (আ) আবির্ভাবের ফলে কি জুলুমের অবসান হবে?

22:52 - August 31, 2025
সংবাদ: 3477983
ইকনা- আব্রাহামিক ধর্মগুলো একজন ত্রাণকর্তার আগমন ও নিপীড়নের অবসানে বিশ্বাস করে; ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইহুদি ধর্ম -্এ তিন ধর্মই প্রতিশ্রুতি দেয় যে শেষ জামানায় আল্লাহর সাহায্যে একজন ঐশি ব্যক্তি পৃথিবী থেকে নিপীড়ন দূর করবেন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

শেষ যুগে হযরত মাহদী (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর আবির্ভাব মুসলমানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, যা পবিত্র কুরআন এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইতের হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের পবিত্র গ্রন্থগুলোতে, এমন একজন ব্যক্তির আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে যিনি ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করবেন। পার্স-টুডের এই প্রবন্ধে, আমরা এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি যে: হযরত মাহদী এবং হযরত ঈসার আবির্ভাব কি জুলুম ও নিপীড়নের অবসান ঘটাবে?

১. পবিত্র কুরআন এবং হযরত মাহদীর আবির্ভাব

পবিত্র কুরআনে যদিও হযরত মাহদীর কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি, তবুও এমন কিছু আয়াত রয়েছে যা বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নিপীড়ন ও দুর্নীতির অবসান ঘটানোর খোদায়ি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে। সুরা নুরের ৫৫ নম্বর আয়াত এসবের অন্যতম। এ আয়াতে বলা হয়েছে: 

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে খিলাফাত দান করবেন যেমন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে তিনি খিলাফাত দান করেছিলেন এবং তিনি তাদের দ্বীনকে অবশ্যই কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করবেন যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তিনি তাদের ভয়-ভীতিপূর্ণ অবস্থাকে পরিবর্তিত করে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ‘ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে আমার শরীক করবে না। এরপরও যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করবে তারাই বিদ্রোহী, অন্যায়কারী।

২. হযরত মাহদী সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আহলে বাইতের বর্ণনা

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্ভরযোগ্য তথা মুতাওয়াতির (বহু সূত্রে বর্ণিত) হাদিসে বলা হয়েছে যে, হযরত মাহদী শেষ যুগে হযরত ঈসার সাথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং জুলুম ও দুর্নীতি দূর করার জন্য আগমন করবেন। এই হাদিসগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হাদিস হল ইসলামের নবী (সাঃ) থেকে, যিনি বলেছেন: “যদি পৃথিবীর মাত্র একদিনও অবশিষ্ট থাকে তাহলে আল্লাহ আমার বংশধর থেকে একজন ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন, যেমনটি তা জুলুম ও অবিচারে পূর্ণ ছিল।” (সুনান আবু দাউদ: ৪/১০৬/৪২৮২) 

৩. হযরত ঈসার আবির্ভাব সম্পর্কে ইসলামী গ্রন্থের বর্ণনা

ঈসার প্রত্যাবর্তন হল ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের সময়ের একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা যা মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। কুরআনের সূরা আন-নিসার ১৫৭ এবং ১৫৮ আয়াতে যীশুকে তথা হযরত ঈসাকে হত্যা করা হয়েছিল এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে: আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়ামকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। কিন্তু তারা না তাকে হত্যা করেছে, না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, কেবলমাত্র তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল, আর যারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছিল তারাও এ সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছিল। শুধু অমূলক ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত সত্য যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।

এ ছাড়াও সুরা নিসার ১৫৯ আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: কিতাবওয়ালাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তার মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতি অবশ্যই ঈমান আনবে না, আর ক্বিয়ামাতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ইসলামের নবীর বর্ণনা - ভিত্তিক কুরআনের ভাষ্যকারদের মতে বিচার-দিবস বা কিয়ামতের আগেই ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, তাই এমন কোন জাতি অবশিষ্ট থাকবে না যারা তাঁকে বিশ্বাস করবে না। এছাড়াও তাঁর প্রত্যাবর্তনের পর, ঈসা (আঃ) হযরত মাহদীর নেতৃত্বে জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।

৪. তৌরাত ও ইঞ্জিল

ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থেও একজন সর্বজনীন ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের উল্লেখ রয়েছে যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। বাইবেলে, বিশেষ করে ইউহানার ইঞ্জিল তথা বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে যে যীশু খ্রিস্ট খোদায়ি শাসন প্রতিষ্ঠা এবং নিপীড়ন ও দুর্নীতি দূর করার জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। তৌরাতেও শেষ জামানায় একজন ত্রাণকর্তার আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, যার আগমন পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। #পার্স টুডে
 

 

captcha