IQNA

যুদ্ধবিরতি — প্রতিরোধের বিজয়, ইসরায়েলের পরাজয়

19:11 - October 16, 2025
সংবাদ: 3478262
ইকনা- আমেরিকা এখন কেবল একটি “যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা” ত্বরান্বিত করতে ব্যস্ত, এমন একটি যুদ্ধের ইতি টানার জন্য যা দুই বছর ধরে চলছে এবং যাতে ইসরায়েল নিরপরাধ মানুষ হত্যা, ভবন ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া কোনো বাস্তব সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
বাগদাদের ইত্তেহাদ স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক মাহমুদ আল-হাশেমি ইকনাকে পাঠানো এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় বলেন — যুদ্ধের শিক্ষায় বিজয়ী সেই, যে শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে, সাধারণ মানুষকে নয়। যে সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজিতই হয়।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, "তুফানুল আকসা" অভিযানের ১০০ দিন পর এক বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে সফরের সময় এক কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনার মতে এই যুদ্ধ কখন শেষ হবে?” তিনি জবাব দেন, “প্রথম ৪৫ দিনের মধ্যেই যুদ্ধ বাস্তবে শেষ হয়ে গেছে; পরবর্তী সময়ে কেবল নিরপরাধ মানুষ ও ভবনগুলো ধ্বংস হচ্ছে।”
আল-হাশেমি বলেন, গাজার প্রতিরোধযোদ্ধারা ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ছয়টি যুদ্ধে লড়েছে, যার প্রতিটিই কয়েক দিন থেকে এক মাসের মধ্যে শেষ হয়েছে। প্রতিবারই প্রতিরোধ বাহিনী তাদের অস্ত্রব্যবস্থা, সুড়ঙ্গ প্রযুক্তি ও গোপন ঘাঁটি উন্নত করেছে, যা এখন গাজার নিচে এক বিশাল প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের অভিযানের পর ইসরায়েল নিজেকে “অস্তিত্বের যুদ্ধ”-এ জড়িয়ে ফেলে। ফলে, অনেক ইহুদি নাগরিক পুরনো বিশ্বাসে ফিরে যায় যে, “ইহুদি রাষ্ট্র আশি বছরের বেশি টিকবে না।”
তিনি বলেন, ইসরায়েলের যুদ্ধ অব্যাহত রাখার অন্যতম কারণ হলো— এ রাষ্ট্রটি সামরিক কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে, বেসামরিক কাঠামোর ওপর নয়। যদি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের ভিত্তিই নড়ে যায়।
অনেকে মনে করেন, যুদ্ধ অব্যাহত রাখার কারণ নিতানিয়াহুর চরম ডানপন্থী সরকার; কিন্তু আল-হাশেমির মতে, এটি পুরো সত্য নয়। আসল কারণ হলো ইসরায়েলের বিস্তারবাদী আদর্শ।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প ও নিতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত বক্তব্যগুলো আসলে আমেরিকার কূটনৈতিক নাটকের অংশ ছিল— যাতে ওয়াশিংটনের ইসরায়েলের ওপর আধিপত্য প্রমাণিত হয়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলিও বারবার রিপোর্ট করেছে যে, ট্রাম্প নিতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় সাড়া না দেওয়ায় তিরস্কার করেছেন।
আল-হাশেমির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখন এক “অস্বস্তিকর অবস্থায়” পড়েছে, কারণ ইসরায়েলের একমাত্র দৃঢ় মিত্র হিসেবে বিশ্বে তার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে— বিশেষত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবগুলোতে ধারাবাহিক ভেটো দেওয়ার কারণে।
তিনি বলেন, “গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করেছিল যেভাবে, শেষও করেছে সেভাবেই — যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও গাজার পুনর্গঠন।”
গাজার কোনো শিশু সাদা পতাকা তুলে আত্মসমর্পণ করেনি, যেমনটি কিছু আরব নেতা আশা করেছিলেন। বরং, হামাস দক্ষতার সঙ্গে সব ফিলিস্তিনি দল ও প্রশাসনকে জাতীয় ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে — যা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার নিদর্শন।

آتش‌بس؛ پیروزی مقاومت و شکست اسرائیل

হামাস অস্ত্র হাতে রেখেই আলোচনায় অংশ নিয়েছে; জনগণ তাদের সমর্থন করেছে; আর বিশ্বজুড়ে — এমনকি আমেরিকার অভ্যন্তরেও — তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। এই গণসমর্থনই প্রতিরোধের কূটনৈতিক শক্তি ও ভবিষ্যৎ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছে।
আল-হাশেমি বলেন, “আজ মধ্যপ্রাচ্য নিজের মানচিত্র নতুন করে আঁকছে, এবং এই পুনর্গঠনে প্রতিরোধই মূল চালিকাশক্তি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই বিজয় সম্ভব হতো না যদি না থাকত শহিদদের ত্যাগ, পুরুষদের বীরত্ব, নারীদের ধৈর্য এবং বিশ্বের স্বাধীনতাকামী জনগণের সমর্থন।”
তার মতে, গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্ব একেবারেই ভিন্ন হবে। তুফানুল আকসা যুদ্ধ বিশ্বকে ইতিহাসের এক নতুন মোড়ে নিয়ে গেছে।
শেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, “যারা আমেরিকার ভরসায় আছে তারা ডুবে যাবে; যারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ওপর বাজি ধরেছে, তারা জেনে রাখুক — এই রাষ্ট্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যেমন এক গাজাবাসী যুদ্ধবিরতির পর বলেছিলেন: ‘আমরা আমাদের শহর পুনর্নির্মাণ করব, গাজা হবে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর ভূমি।’”
 
captcha