IQNA

আধুনিক জাহেলিয়্যাতের নানা চ্যালেঞ্জ ও উগ্রবাদ মহানবীর (সা) আদর্শ বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা

একই দিনে মহানবীর (সা) ওফাত ও ইমাম হাসানের (আ.) শাহাদাত-বার্ষিকী

0:04 - October 05, 2021
সংবাদ: 3470770
তেহরান (ইকনা): ঐতিহাসিক ২৮ সফর মহানবীর (সা) ওফাত-বার্ষিকী ও তাঁর বড় নাতি হযরত ইমাম হাসানের শাহাদাত-বার্ষিকী। দশম হিজরির ২৮ সফর দুনিয়া থেকে বিদায় নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। আর এর চল্লিশ বছর পর ৫০ হিজরির একই দিনে শাহাদত বরণ করেন মহানবীর প্রথম নাতি হযরত ইমাম হাসান (আ)। তাই গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি সবাইকে।
ইমাম হাসান-আ. ছিলেন রসুলেরই  আদর্শের অন্যতম প্রধান সুরক্ষক তথা ইসলাম-তরীর অন্যতম সফল কাণ্ডারি।
 
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন শান্তি, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামী ঐক্যের শ্রেষ্ঠ রূপকার। তিনি ছিলেন 'মানবজাতির মুক্তি ও সর্বোত্তম উন্নয়নের দিশারী। মানবজাতির নৈতিক উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নকে পরিপূর্ণতা দিতেই ঘটেছিল তাঁর আবির্ভাব।  মহানবী সব যুগের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ ও পূর্ণ মানব। তিনি মানব জীবনের সব ক্ষেত্রের ও সব পর্যায়ের সর্বোত্তম এবং পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। তিনি মানবজাতির সবচেয়ে বড় শিক্ষক ও এমনকি মহামানবদেরও শিক্ষক এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল ও নবী। আর মহান আল্লাহই ছিলেন তাঁর শিক্ষক।
 
মহানবীর মাধ্যমে নবুওত ও রিসালাতের ধারা পরিপূর্ণতা পেয়েছে বলে আর কোনো নতুন নবী-রাসুল বা নতুন ঐশী ধর্মের প্রয়োজন নেই। মহানবীর ওফাতের কারণে ওহি আসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পবিত্র কুরআনের ও নিজের বাণীর যুগোপযোগী ব্যাখ্যা দানের জন্য তিনি রেখে যান তাঁর পবিত্র আহলে বাইত।রাসূলে পাক সাঃ থেকে মোতাওয়াতির বা বহু সূত্রে বর্ণিত হাদিসে সাকালাইন নামে খ্যাত হাদিসে তিনি বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি ভারী জিনিস বা বস্তু রেখে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে  আল্লাহর কিতাব তথা পবিত্র কুরআন ও অন্যটি হচ্ছে আমার ইতরাত বা আহলে বাইত এবং এ দুটি ভারী জিনিষ কখনও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না আমার কাছে হাওজে কাউসারে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত এবং তোমরা যদি এ দুটি ভারী জিনিষকে আঁকড়ে ধরে রাখ তাহলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না।
 
 মহানবীর পবিত্র আহলে বাইত যুগে যুগে মানুষকে দিয়ে গেছেন সঠিক পথ ও মুক্তির সন্ধান তথা প্রকৃত ইসলাম ও কুরআনের প্রকৃত ব্যাখ্যা। আর এরই আলোকে প্রকৃত মুসলমানরা সঠিক ও জাল হাদিসের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম। মহানবীর হাদিস এবং তাঁর নির্দেশনাগুলোর যুগোপযোগী ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন তাঁরই বংশে জন্ম নেয়া পবিত্র ইমামগণ।  পবিত্র ইমামদের সংখ্যা হাদিসের আলোকে ১২ জন। তাঁদের মধ্যে মুসলমানরা কেবল ইমাম মাহদির প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব এখনও দেখতে পায়নি।  আর এ অবস্থায় মহানবীর আদর্শ অনুসরণের সর্বোত্তম পন্থা হল সবচেয়ে খোদাভীরু আলেম ও ইসলামী আইনবিদ তথা ইসলামী আইনের যুগোপযোগী ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম আলেমের অনুসরণ করা। কোনো কোনো হাদিসে বলা হয়েছে: আলেমরাই হচ্ছেন নবী-রাসুলদের উত্তরসূরি।
 
আলেমরাই হচ্ছেন নবী-রাসুলদের উত্তরসূরি- এই হাদিসের আলোকে সবচেয়ে যোগ্য ও খোদাভীরু ইসলামী আইনবিদ ইমাম মাহদিরও প্রতিনিধি হওয়ার মর্যাদা রাখেন। যাই হোক প্রকৃত খোদাভীরু ও যোগ্য ইসলামী আইনবিদকে চিনতে হলে মুসলমানদেরকেও অনেক জ্ঞানী হতে হবে। অতি সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী মুসলমানকে এক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হবে অপেক্ষাকৃত বেশি জ্ঞানী তথা ন্যায়নিষ্ঠ মুসলিম আলেম সমাজের। তবে সাধারণ বিবেক বুদ্ধি খাটিয়েও এ ব্যাপারে কিছু দিক-নির্দেশনা পেতে পারেন সাধারণ মুসলমানরা। যেমন, যিনি মহানবীর আদর্শ ও মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের আদর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে মানব-রচিত নানা মতাদর্শ বা বাতিল ধর্মমত ও মতবাদ, যেমন  পশ্চিমা আদর্শ বা আহলে বাইতের বিরোধী চরমপন্থী মতবাদগুলোর ওপর ইসলামের লেবেল লাগান তিনি মুসলমানদের জন্য মহানবীর প্রতিনিধি হতে পারেন না। ইসলামের প্রধান শত্রুরা তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ও ইহুদিবাদীরা যেসব আলেমদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করে থাকলে তারাও মহানবীর প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য নন।
 
হযরত আলীর খেলাফতের যুগের খারেজি সম্প্রদায়ের মত চরমপন্থী উগ্র দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী নানা গোষ্ঠী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামের খেদমতের নামে আসলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোরই সেবা করছে। তাই মুসলিম যুব সমাজসহ সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে এদের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে।বর্তমান যুগে এমন অনেক কথিত বড় আলেমের কথা শোনা যায় যারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের মত চরম জালিম ও শয়তানি শক্তির বিপক্ষে তো কোনো কথাই বলেন না, বরং তাদের সঙ্গে আপোষ করার বা মিলে-মিশে চলার কথা বলেন তথাকথিত শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে! এইসব ব্যক্তিরাও মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য নন। আমরা বর্তমান যুগে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার দাবিদার এমন অনেক নেতাকেও দেখছি যারা মুখে মুখে মজলুম ফিলিস্তিনি মুসলমানসহ মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের পক্ষে কথা বললেও বাস্তবে তেমন কিছু করছেন না অথচ ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বন্ধুত্ব বজায় রাখছেন!
 
মহানবীর আগমনের আগে সারা বিশ্ব  ডুবেছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও নানা অনাচারের অন্ধকারে। আরবদের অনেকেই সে সময় কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিত। জাতিভেদ, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার ও ব্যভিচারও ছিল আরব জাতিসহ প্রত্যেক জাতির মধ্যেই।  মহানবীর শিক্ষার আলোকে আরব ও ইরানি জাতিসহ মুসলিম জাতিগুলো সভ্য হয়ে ওঠে এবং মুসলমানরা প্রায় এক হাজার বছর পর্যন্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্ব-সভ্যতাকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়।
 
মহানবীর নেতৃত্বের বরকতে মুসলমানরা ব্যাপক শক্তিমত্তার অধিকারী হয় ও পরবর্তীকালে নানা দেশজয়ের সুবাদে ব্যাপক জনশক্তি ও সম্পদেরও অধিকারী হয়। আর ওইসব সম্পদের কিছু অংশ জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় ব্যবহৃত হয়। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্ব-সভ্যতাকে অনেক এগিয়ে নিতে সক্ষম হয় মুসলমানরা। কিন্তু ইসলামের জরুরি নানা শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাওয়ায় মুসলমানরা নৈতিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়। ফলে তারা পশ্চিমাদের কাছে রাজত্ব হারিয়ে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে।
 
তবুও এক শ্রেণীর সংগ্রামী আলেম পতনের যুগে মুসলমানদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন ও ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। সাইয়্যেদ জামালউদ্দিন আফগানি ছিলেন এমনই একজন সংগ্রামী আলেম। আর বর্তমান যুগে নবী-বংশের সন্তান মরহুম ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে আমরা সংগ্রামী ইসলামী আদর্শের  প্রবল পুনরুত্থান দেখতে পেয়েছি। আর এ ধারাকেই এগিয়ে নিচ্ছেন নবী-বংশের আরেক সন্তান ইসলামী ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি। তাঁর গতিশীল ইসলামী নেতৃত্বের প্রভাব গোটা পশ্চিম এশিয়াসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।  
 
মহানবীকে (সা) সংগ্রাম করতে হয়েছিল জাহেলি জামানার কুসংস্কার ও নানা বিচ্যুত প্রথা ও ধর্মমতের সঙ্গে। অন্যদিকে মুনাফিকদের ব্যাপারেও তিনি সতর্ক ছিলেন।তবে মুনাফিকরা মহানবীর ওফাতের পর আবারও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং তারা প্রকৃত ইসলামী শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজতন্ত্র চালু করে ইসলামের নামে। আর এদের হাত থেকেই ইসলামকে রক্ষার জন্য আত্মত্যাগের মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হযরত ইমাম হুসাইন (আ)। তাঁরও আগে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংগ্রামের মাধ্যমে ইসলামকে রক্ষার প্রচেষ্টা চালান হযরত ইমাম হাসান আ.। আর বর্তমান যুগের সংগ্রামী মুসলমানদের সামনে রয়েছে আধুনিক জাহেলিয়্যাতের নানা চ্যালেঞ্জ। সেই সাথে মুনাফিক ও ধর্মের নামের গজিয়ে ওঠা উগ্র গোষ্ঠীগুলোর উৎপাতও তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অনেক সময় বিজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর প্রতিপালিত আধা-উগ্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে সংগ্রামী মুসলিম নেতৃবৃন্দকে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য  ও ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থ বজায় রাখার লক্ষ্যে। 
 
পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে মুসলমানরা এক আল্লাহ, এক বিশ্বনবী (সা.), অভিন্ন কুরআন ও ইসলামের মূল নীতিগুলো মেনে নেয়া সত্ত্বেও সাম্রাজ্যবাদীদের নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পরস্পরের মধ্যে সীসা ঢালা প্রাচীরের মত ঐক্য গড়ে তুলতে পারছে না। অথচ মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান, ইহুদি ও অন্য অমুসলিমদের সুদৃঢ় ঐক্য লক্ষণীয়।বিশ্বনবী (সা.) যে সমাজ-ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন সেখানে ভাষা, বর্ণ, গোত্র বা জাতিগত পার্থক্যের কারণে কারো অধিকার বেশি বা কম ছিল না। বরং খোদাভীরুতাকেই ধরা হত শ্রেষ্ঠত্বের বা মর্যাদার মানদণ্ড। একজন নিঃস্ব কালো বর্ণের ক্রীতদাসও পেত অন্য যে কোনো মুসলমানের মত স্বাভাবিক মর্যাদা এবং খোদাভীরুতার মত যোগ্যতার বলে সে সেনাপতি বা মুয়াজ্জিন হওয়ার মত উচ্চ পদেরও অধিকারী হত। আর এগুলোই হল সব ধরনের ঐক্যের মহা-সূত্র যার বাস্তবায়ন আজো মুসলিম সমাজের জন্য অপরিহার্য ও একান্তই জরুরি বিষয়।
 
পবিত্র কুরআন বলেছে, মুসলমানরা পরস্পরের ভাই। ইসলাম দু-জন মুসলমানের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দেয়া এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব জোরদারকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী (সা.) তাঁর সহনশীলতা, উদারতা ও ক্ষমাশীলতার মাধ্যমে বহু গোত্র এবং বিবদমান মুসলমানদের মধ্যে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ফেতনাবাজদের কঠোর হাতে দমনের শিক্ষাও দিয়ে গেছেন। বিবদমান দুই মুসলিম গ্রুপের মধ্যে যে ন্যায়বিচারপূর্ণ শান্তির আহ্বানে সাড়া দেবে না, তাকে ফেতনাবাজ হিসেবে ধরে নিতে হবে। যদি উভয় পক্ষই ফেতনা জিইয়ে রাখতে চায় তাহলে উভয় পক্ষকেই বর্জন করতে হবে এবং তাদের কাউকেই সমর্থন করা যাবে না।বিশ্বনবী (সা.)'র এই আদর্শ অনুসারেই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) বলেছেন, যারা শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধাতে চায় তারা শিয়াও নয় সুন্নিও নয়, বরং তারা সাম্রাজ্যবাদের দালাল। তিনি শিয়া ও সুন্নি মাজহাব সমর্থনের নামে এই উভয় মাজহাবের ফেতনাবাজদের বয়কট করার উপদেশ দিয়ে গেছেন।
 
পবিত্র কুরআন বলেছে, মুহাম্মাদের প্রকৃত সঙ্গী বা অনুসারীরা পরস্পরের প্রতি দয়ার্দ্র এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর।–মহান আল্লাহ আমাদেরকে মহানবীর প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তৌফিক দিন। 
 
২৮ সফর মহানবীর ও  তাঁর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য তথা তাঁর বড় নাতি ইমাম হাসানেরও শাহাদাত বার্ষিকী। তাই এ উপলক্ষে আবারও গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি সবাইকে।
 
মহানবী (সা.)-এর প্রিয় প্রথম নাতি তথা আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহার.)-এর প্রথম সন্তান জন্ম নিয়েছিলেন তৃতীয় হিজরির পবিত্র রমজান মাসের ১৫ তারিখে। নবী করীম (সা.) অভিনন্দন জানাতে হযরত আলীর ঘরে এসেছিলেন। তিনি এ নবজাত শিশুর নাম আল্লাহর পক্ষ থেকে রাখেন হাসান যার আভিধানিক অর্থ সুন্দর বা উত্তম। মহানবী (সা.)-এর সাথে তাঁর এ নাতীর জীবনকাল কেটেছে প্রায় সাত বছর।
 
দয়াল নানা বহু বার এই নাতিকে কাঁধে নিয়ে বলেছেন : “হে প্রভু,আমি তাঁকে ভালবাসি। তুমিও তাঁকে ভালবাস।” তিনি আরও বলতেন : “যারা হাসান ও হুসাইনকে ভালবাসবে তারা আমাকেই ভালবাসল। আর যারা এ দুজনের সাথে শত্রুতা করবে তারা আমাকেই তাদের শত্রু হিসাবে গণ্য করলো।”   “হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।”   তিনি আরও বলেছেন,“আমার এই দু’নাতি উভয়ই মুসলমানদের ইমাম বা নেতা চাই তারা তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক বা না দাঁড়াক।”ইমাম হাসান (আ.) তাঁর পিতার পথে চলতেন এবং তাঁর সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করতেন। নবী করীম (সা.)-এর জীবিত অবস্থায় তাঁরই নির্দেশ অনুযায়ী হযরত আলী (আ.)  নিজের ইন্তেকালের সময় ইমাম হাসানকে তাঁর খেলাফতের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন।
 
-ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন উভয়েই একরূপ ছিলেন এবং নীতির ক্ষেত্রেও তাঁদের মধ্যে অভিন্নতা ছিল। তাঁরা উভয়েই অত্যন্ত সাহসী ও বীর যোদ্ধা ছিলেন। ঐতিহাসিক মাসউদী তার ‘ইসবাতুল ওয়াসিয়া’ গ্রন্থে ইমাম হাসানের যে বক্তব্যটি উল্লেখ করেছেন তাতে ইমাম হাসান বলেছিলেন : ‘আমি যদি উপযুক্ত সঙ্গী পেতাম তবে খেলাফত লাভের জন্য এমন বিপ্লব ও আন্দোলন করতাম যে কেউ তার নজির দেখেনি।’মুয়াবিয়ার বাহ্যিক ধার্মিকতার কারণে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বৈধতাকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করা এই ইমামের জন্য বেশ কঠিন ছিল। তাই আমরা দেখি ইমাম হাসানের মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া দশ বছর জীবিত থাকলেও ইমাম হুসাইন তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের আহ্বান জানাননি। এর বিপরীতে ইয়াজিদের সময় যেভাবে অধার্মিকতা প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছিল ইমাম হাসানের জীবদ্দশায় এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে তিনিও বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে ইমাম হুসাইনের মতই বিদ্রোহ করতেন।
 
ইমাম হাসান যখন তিনি ওযুতে মগ্ন হতেন তখন আল্লাহর ভয়ে তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেতো, তিনি কাঁপতে থাকতেন। তিনি পদব্রজে বা নগ্নপদে আবার কখনো বাহনে চড়ে পঁচিশ বার হজ করেছেন। ইমাম হাসান (আ) ছিলেন খুবই দানশীল। তিনি জীবনে তিনবার তাঁর যা কিছু ছিল, এমন কি জুতো পর্যন্ত দু’অংশে ভাগ করে আল্লাহর পথে দান করে দেন। ইমাম হাসান (আ) ছিলেন ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রতীক।
 
মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের বয়সের স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে খেলাফত ইমামের হাতে সোপর্দ করতে প্রস্তুত ছিল না, সে তার নাপাক ও নোংরা পুত্র ইয়াজিদের জন্যে পরবর্তী শাসন কর্তৃত্ব পাকা-পোক্ত করতে কোমর বেঁধে লেগে যায়। কিন্তু সে এই পথে ইমাম হাসানকে এক মস্ত বড় বাধা হিসেবে বিবেচনা করত। তার ধারণা ছিল যদি তার মৃত্যুর পর ইমাম হাসান জীবিত থাকেন তাহলে মুয়াবিয়ার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট জনগণ ইমাম হাসানের দিকে ঝুঁকতে পারে। তাই সে পবিত্র ইমামকে হত্যার জন্য বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালায়। অবশেষে ইমামস হাসানের এক স্ত্রীর মাধ্যমে তাঁকে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে মুয়াবিয়া। দিনটি ছিল পঞ্চদশ হিজরির সফর মাসের আটাশ তারিখ। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। আল্লাহর অফুরন্ত দরুদ বর্ষিত হোক তাঁর ওপর। সবাইকে জানাচ্ছি আবারও গভীর শোক ও সমবেদনা। পার্সটুডে
 
captcha