IQNA

গাজা অপেক্ষা করছে মূসার (আ.) দিকে; সাগরের বিদীর্ণ হওয়া ও আদেশগুলোর বিস্মরণ

0:07 - July 29, 2025
সংবাদ: 3477786
ইকনা- আলী মারূফী আরানি, সিয়োনিজম ও ইহুদি ধর্মবিশারদ, তাঁর প্রবন্ধে—যার শিরোনাম “গাজা অপেক্ষা করছে মূসার দিকে؛ সাগরের বিদীর্ণ হওয়া, আদেশগুলোর বিস্মরণ”—এই ভাবনাটি উপস্থাপন করেছেন যে, যদি নবী মূসা (আ.) আজ জীবিত থাকতেন এবং জায়নবাদী ইহুদিদের হাতে গাজার মানুষের গণহত্যা দেখতেন, তাহলে তিনি গভীর প্রতিক্রিয়া দেখাতেন।
আলী মারূফী আরানি, সিয়োনিজম ও ইহুদি ধর্মবিশারদ, তাঁর প্রবন্ধে—যার শিরোনাম “গাজা অপেক্ষা করছে মূসার দিকে؛ সাগরের বিদীর্ণ হওয়া, আদেশগুলোর বিস্মরণ”—এই ভাবনাটি উপস্থাপন করেছেন যে, যদি নবী মূসা (আ.) আজ জীবিত থাকতেন এবং জায়নবাদী ইহুদিদের হাতে গাজার মানুষের গণহত্যা দেখতেন, তাহলে তিনি গভীর প্রতিক্রিয়া দেখাতেন।
 
 গাজা: প্রতিরোধের আর্তনাদ
আজকের ইসরাইল কেবল একটি রাজনৈতিক ভ্রান্তি নয়, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার—একটি জাতির নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতির উপরে দাঁড়ানো কল্পিত অস্তিত্ব, যা কোনো অভিধানেই যৌক্তিকতা পায় না। গাজার মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধা ও অবরোধের মুখে রয়েছে। আমেরিকা-সিয়োনি জোটের সামরিক ঘাঁটিগুলোর কাছে খাদ্যের খোঁজে গমন করা মানুষগুলো স্নাইপারদের গুলিতে নিহত হচ্ছে।
আজ গাজায়—যেখানে এক টুকরো রুটি জীবনের দামের সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে—সিয়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠী ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যেমন কারবালার শিশুদের জন্য পানি বন্ধ করা হয়েছিল।
 
 
 যদি মূসা (আ.) আজ থাকতেন...
• মূসা (আ.) তাঁর জাতির প্রতি ভালোবাসায় পূর্ণ ছিলেন। কিন্তু তিনি যদি গাজার মানুষদের ওপর বর্বরতা দেখতেন, তাঁর হৃদয় ফেটে যেতো।
• যেভাবে তিনি ফেরাউন ও তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি আজও নিশ্চয়ই জালিমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন।
• তিনি এই ভয়াবহতাকে তাঁর জাতির এক ঈশ্বরীয় সতর্কবার্তা হিসেবে নিতেন এবং সবাইকে আল্লাহর পথে ফেরার আহ্বান জানাতেন।
• তিনি নিপীড়িতদের সাহস দিতেন, আশ্রয় দিতেন এবং ভবিষ্যতের পুনর্গঠনের পথে নেতৃত্ব দিতেন।
• তিনি আবারও স্রষ্টার কাছে বিচার চাইতেন—অত্যাচারীর বিরুদ্ধে এবং নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়ের দোয়া করতেন।
 দশটি আদেশ এবং তাদের বিস্মরণ
তওরাতে বর্ণিত দশটি আদেশ, যেগুলো মূসা (আ.) সিনাই পর্বতে পেয়েছিলেন, সেগুলো ছিল নৈতিকতার ভিত্তি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে চুক্তির প্রতীক। এসব আদেশ ছিল:
১. আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য থাকবে না
২. কোনো প্রতিমা বানাবে না বা পূজা করবে না
৩. আল্লাহর নাম বৃথা নেবে না
৪. শনিবারকে পবিত্র রাখো
৫. পিতা-মাতাকে সম্মান করো
৬. হত্যা করো না
৭. ব্যভিচার করো না
৮. চুরি করো না
৯. মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না
১০. পরের ধন বা স্ত্রীতে লোভ করো না
কিন্তু আজ, মূসা (আ.) যদি গাজায় থাকতেন, তিনি এসব আদেশের কোনো প্রতিফলন দেখতে পেতেন না। তিনি যা দেখতেন তা হলো:
শিশুদের কান্না, বিধ্বস্ত শহর, ক্ষুধার্ত মানুষ, নিহত বাবা-মা ও বোনদের বিলাপ।
 ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: গাজা ও শোবে আবি তালিব
৭ম নবুয়তবর্ষের প্রথম মহররমে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর অনুসারীরা যখন শোবে আবি তালিবে অবরুদ্ধ হন, তখন তাদের ওপরও ক্ষুধা, বিচ্ছিন্নতা ও নিপীড়ন নেমে এসেছিল, যেমনটি আজ গাজার মানুষের ওপর চলছে।
তবে পার্থক্য হলো: তখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল অল্প, আজ তারা দুই শত কোটি। তখন মুসলিমদের সামরিক শক্তি ছিল না, আজ বিশাল আধুনিক বাহিনী থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ শাসক চুপ! কেউ কেউ তো গোপনে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা চুপ থাকলেও ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
গাজার ব্যতিক্রমী ঈমান
অবশ্য গাজার প্রতিরোধ কেবল অস্ত্রে সীমাবদ্ধ নয়—এটা ঈমানের প্রতিচ্ছবি। গাজার মানুষ বিশেষত যুবক-যুবতীরা, হাজার হাজার কোরআন হিফ্‌জ করেছে, এমনকি বোমা, যুদ্ধ আর ক্ষুধার মধ্যেও।
দুই বছর আগে কোরআন তিলাওয়াতকারীর সংখ্যা ছিল ১৫০০ জন। আজ হাফেজদের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা শুধু মুখস্থ করার নয়, বরং ঈমান, পরিচয় ও প্রতিরোধের প্রতীক।

غزه در انتظار موسی؛ فروپاشی دریا، فراموشی فرمان‌ها

দায়িত্ব ও বিশ্বাস
গাজার পরিস্থিতি আমাদের কাঁদায়, কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আমাদের ঈমান ও ঐক্য হোক সেই ঢাল, যা এই অবরোধ, এই গণহত্যা ও এই বিশ্বজনীন ন্যায়বিচারহীনতাকে পরাজিত করবে।
গাজা আজও মূসার অপেক্ষায়,
সেই মূসা যে সমুদ্র বিদীর্ণ করে, অন্যায়ের ভিত কাঁপিয়ে দিতেন।
কিন্তু জাতিরা যদি তার বার্তা ভুলে যায়, তাহলে সমুদ্রও আর পথ দেবে না। 
গাজা অপেক্ষা করছে মূসার (আ.) দিকে; সাগরের বিদীর্ণ হওয়া ও আদেশগুলোর বিস্মরণ
অনুবাদ
ইকনা- আলী মারূফী আরানি, সিয়োনিজম ও ইহুদি ধর্মবিশারদ, তাঁর প্রবন্ধে—যার শিরোনাম “গাজা অপেক্ষা করছে মূসার দিকে؛ সাগরের বিদীর্ণ হওয়া, আদেশগুলোর বিস্মরণ”—এই ভাবনাটি উপস্থাপন করেছেন যে, যদি নবী মূসা (আ.) আজ জীবিত থাকতেন এবং জায়নবাদী ইহুদিদের হাতে গাজার মানুষের গণহত্যা দেখতেন, তাহলে তিনি গভীর প্রতিক্রিয়া দেখাতেন।
 
 গাজা: প্রতিরোধের আর্তনাদ
আজকের ইসরাইল কেবল একটি রাজনৈতিক ভ্রান্তি নয়, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার—একটি জাতির নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতির উপরে দাঁড়ানো কল্পিত অস্তিত্ব, যা কোনো অভিধানেই যৌক্তিকতা পায় না। গাজার মানুষ ভয়াবহ ক্ষুধা ও অবরোধের মুখে রয়েছে। আমেরিকা-সিয়োনি জোটের সামরিক ঘাঁটিগুলোর কাছে খাদ্যের খোঁজে গমন করা মানুষগুলো স্নাইপারদের গুলিতে নিহত হচ্ছে।
আজ গাজায়—যেখানে এক টুকরো রুটি জীবনের দামের সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে—সিয়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠী ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যেমন কারবালার শিশুদের জন্য পানি বন্ধ করা হয়েছিল।
 
 
 যদি মূসা (আ.) আজ থাকতেন...
• মূসা (আ.) তাঁর জাতির প্রতি ভালোবাসায় পূর্ণ ছিলেন। কিন্তু তিনি যদি গাজার মানুষদের ওপর বর্বরতা দেখতেন, তাঁর হৃদয় ফেটে যেতো।
• যেভাবে তিনি ফেরাউন ও তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি আজও নিশ্চয়ই জালিমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন।
• তিনি এই ভয়াবহতাকে তাঁর জাতির এক ঈশ্বরীয় সতর্কবার্তা হিসেবে নিতেন এবং সবাইকে আল্লাহর পথে ফেরার আহ্বান জানাতেন।
• তিনি নিপীড়িতদের সাহস দিতেন, আশ্রয় দিতেন এবং ভবিষ্যতের পুনর্গঠনের পথে নেতৃত্ব দিতেন।
• তিনি আবারও স্রষ্টার কাছে বিচার চাইতেন—অত্যাচারীর বিরুদ্ধে এবং নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়ের দোয়া করতেন।
 দশটি আদেশ এবং তাদের বিস্মরণ
তওরাতে বর্ণিত দশটি আদেশ, যেগুলো মূসা (আ.) সিনাই পর্বতে পেয়েছিলেন, সেগুলো ছিল নৈতিকতার ভিত্তি এবং ঈশ্বরের সঙ্গে চুক্তির প্রতীক। এসব আদেশ ছিল:
১. আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য থাকবে না
২. কোনো প্রতিমা বানাবে না বা পূজা করবে না
৩. আল্লাহর নাম বৃথা নেবে না
৪. শনিবারকে পবিত্র রাখো
৫. পিতা-মাতাকে সম্মান করো
৬. হত্যা করো না
৭. ব্যভিচার করো না
৮. চুরি করো না
৯. মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না
১০. পরের ধন বা স্ত্রীতে লোভ করো না
কিন্তু আজ, মূসা (আ.) যদি গাজায় থাকতেন, তিনি এসব আদেশের কোনো প্রতিফলন দেখতে পেতেন না। তিনি যা দেখতেন তা হলো:
শিশুদের কান্না, বিধ্বস্ত শহর, ক্ষুধার্ত মানুষ, নিহত বাবা-মা ও বোনদের বিলাপ।
 ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি: গাজা ও শোবে আবি তালিব
৭ম নবুয়তবর্ষের প্রথম মহররমে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর অনুসারীরা যখন শোবে আবি তালিবে অবরুদ্ধ হন, তখন তাদের ওপরও ক্ষুধা, বিচ্ছিন্নতা ও নিপীড়ন নেমে এসেছিল, যেমনটি আজ গাজার মানুষের ওপর চলছে।
তবে পার্থক্য হলো: তখন মুসলমানের সংখ্যা ছিল অল্প, আজ তারা দুই শত কোটি। তখন মুসলিমদের সামরিক শক্তি ছিল না, আজ বিশাল আধুনিক বাহিনী থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ শাসক চুপ! কেউ কেউ তো গোপনে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা চুপ থাকলেও ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
গাজার ব্যতিক্রমী ঈমান
অবশ্য গাজার প্রতিরোধ কেবল অস্ত্রে সীমাবদ্ধ নয়—এটা ঈমানের প্রতিচ্ছবি। গাজার মানুষ বিশেষত যুবক-যুবতীরা, হাজার হাজার কোরআন হিফ্‌জ করেছে, এমনকি বোমা, যুদ্ধ আর ক্ষুধার মধ্যেও।
দুই বছর আগে কোরআন তিলাওয়াতকারীর সংখ্যা ছিল ১৫০০ জন। আজ হাফেজদের সংখ্যা ৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা শুধু মুখস্থ করার নয়, বরং ঈমান, পরিচয় ও প্রতিরোধের প্রতীক।
দায়িত্ব ও বিশ্বাস
গাজার পরিস্থিতি আমাদের কাঁদায়, কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আমাদের ঈমান ও ঐক্য হোক সেই ঢাল, যা এই অবরোধ, এই গণহত্যা ও এই বিশ্বজনীন ন্যায়বিচারহীনতাকে পরাজিত করবে।
গাজা আজও মূসার অপেক্ষায়,
সেই মূসা যে সমুদ্র বিদীর্ণ করে, অন্যায়ের ভিত কাঁপিয়ে দিতেন।
কিন্তু জাতিরা যদি তার বার্তা ভুলে যায়, তাহলে সমুদ্রও আর পথ দেবে না। 4296613#
 
captcha