IQNA

কাবা ঘরের স্থানে আজ জেগে ওঠে পৃথিবীর প্রথম শুষ্ক ভূখণ্ড/ ২৫শে জিলক্বদ দাহুল আরদের ফজিলত ও আমল

15:34 - August 28, 2016
সংবাদ: 2601472
আজ হতে হাজার হাজার বছর আগে ঠিক আজকের দিনটিতে তথা ২৫শে জিলকদ তারিখে মহান আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবী নামক গ্রহের মহাসাগর থেকে শুষ্ক ভূখণ্ডের প্রথম অংশটুকু জেগে উঠেছিল। এ ছাড়াও এই দিনটি ইসলামী বর্ণনামতে হযরত ইব্রাহিম ও ঈসা (আ)'র পবিত্র জন্মদিন।


বার্তা সংস্থা ইকনা: এর আগে পৃথিবীর উপরিভাগের সব ভূখণ্ডই ছিল পানির নীচে। শুষ্ক ভূখণ্ডের যে অংশটুকু সর্বপ্রথম জেগে উঠেছিল সেটাই ছিল পবিত্র কাবা ঘরের স্থান তথা বিশ্বের মুসলমানদের নামাজ পড়ার কিবলা। এরপর ধীরে ধীরে আরও ভূমি জেগে উঠতে থাকে এবং গড়ে ওঠে নানা মহাদেশ, দ্বীপ ও উপদ্বীপ। কাবা-ঘরের স্থানটিকে পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল বলে উল্লেখ করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

আজকের এই দিনটি ইসলামী বর্ণনায় দাহল আরদ’ (ভূমির উন্মেষ ও বিস্তৃতি) নামে পরিচিত। কোনো কোনো ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী এই দিনে আবির্ভূত হবেন মানবতার শেষ ত্রাণকর্তা ও বিশ্বনবী (সা.)র শেষ উত্তরসূরি তথা বিশ্বনবী (সা.)র আহলে বাইতের (নিষ্পাপ বংশধারার) সর্বশেষ সদস্য হযরত ইমাম মাহদী (আ.)। তিনি সারা বিশ্বে ইসলামী হুকুমত ও পরিপূর্ণ ন্যায়বিচার-ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন।

এ দিনে অনেক মুসলমান নফল রোজা পালনসহ বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী আজ হতে চার হাজার চন্দ্রবছর আগে এই দিনের প্রাক্কালে মসোপটেমিয়া বা প্রাচীন ইরাক অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)। তিনি শীর্ষস্থানীয় ৫ জন রাসুলের অন্যতম। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে পবিত্র কুরআনে মিল্লাত বা জাতি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী আজ হতে দুই হাজার ৭১ চন্দ্রবছর আগে এই দিনের প্রাক্কালে জন্মগ্রহণ করেন হযরত ঈসা (আ.)। পিতা ছাড়াই হযরত মারিয়াম (সালামুল্লাহি আলাইহা)'র গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি মহান আল্লাহর ইচ্ছায়। হযরত ঈসা (আ.), হযরত ইব্রাহীম, হযরত নুহ, হযরত মুসা (আ.) এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সা.) এই ৫ জনের অন্যতম।

২৫শে জিলক্বদ দাহুল আরদের ফজিলত ও আমল

২৫শে জিলক্বদ হচ্ছে দাহউল আরদ্ব দিবস, তথা পৃথিবী বিস্তৃতি লাভের দিন। এদিনে পৃথিবীর পানি ও অসমতল ভূমি এমনভাবে শুষ্ক ও সমতল হয়েছিল যাতে এটা বসবাসের উপযোগী হয়।

দাহ্‌ভ (دحو) এর অর্থ হচ্ছে প্রসারণ এবং অনেকে কোন জিনিসকে তার স্বস্থান হতে নাড়া দেয়ার অর্থে তফসির করেছেন। সুতরাং দাহউল আরদ্ব (دحو الارض) (পৃথিবীর সম্প্রসারণ) এর অর্থ হচ্ছে যে, শুরুতে ভূপৃষ্ঠ পানি দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। এ পানি পর্যায়ক্রমে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন গর্তে স্থান করে নেয় এবং পানির তলা হতে শুষ্ক ভূমি উঁকি দেয়। ফলে দিনের পর দিন ভূপৃষ্ঠ প্রসারিত হতে থাকে। পৃথিবী শুরুতে অসমতল ও বসবাস অযোগ্য ছিল। পরবর্তী বন্যা আকারের প্রচণ্ড বর্ষণ ব্যাপক আকারে হতে থাকে ও ভূপৃষ্ঠকে ধুয়ে দেয় এবং উপত্যকাগুলোর পরিধি বাড়তে থাকে, আস্তে আস্তে ভূপৃষ্ঠ মানুষের বসবাস ও চাষাবাদের উপযোগী হয়ে ওঠে। আর এ সম্প্রসারণকেই দাহউল আরদ্ব বলা হয়।

পবিত্র কুরআনেও দাহউল আরদ্ব সম্পর্কে ইশারা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ সূরা নাযিয়াতের ৩০ নং আয়াতে বলছেন:

«وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِکَ دَحَیهَا»

এবং এর পর পৃথিবীকে (আসমান ও জমিনকে) বিস্তৃত করেছেন। অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে এ আয়াতে (دَحَیهَا) শব্দের অর্থ হচ্ছে দাহউল আরদ্ব।

এ গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বেশ কিছু আমল রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত সওয়াবের অধিকারী, তম্মধ্যে রয়েছে:

১। রোজা রাখা; যার সওয়াব সত্তর বছর রোজা রাখা ও ইবাদতের সমতুল্য।

২। দাহউল আরদ্বের রাত্রি জেগে থাকা; অর্থাৎ ২৪শে জিলক্বদের দিবাগত রাত্র জেগে থাকা ও ইবাদত করা। এর সওয়াব এক বছর ইবাদতের সমান।

৩। বিভিন্ন দোয়া ও যিকির পড়া।

৪। দাহউল আরদ্বের নিয়তে গোসল করা ও এ দিবসের বিশেষ নামায আদায় করা। নামাজটি যোহরের পূর্বেই আদায় করতে হবে,

৫। দুই রাকাত নামাজ, প্রতি রাকাতে সূরা হামদের পর ৫ বার সূরা শামস পড়া। নামাজ শেষে لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ الْعَلِیِّ الْعَظِیمِ، লা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আযীম পাঠ করা।

সূরা শামস:

بِسمِ اللَّهِ الرَّحمـٰنِ الرَّحيمِ

وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا ﴿١﴾ وَالْقَمَرِ اِذَا تَلَاهَا ﴿٢﴾ وَالنَّهَارِ اِذَا جَلَّاهَا ﴿٣﴾ وَاللَّيْلِ اِذَا يَغْشَاهَا ﴿٤﴾ وَالسَّمَآءِ وَمَا بَنَاهَا ﴿٥﴾ وَالْاَرْضِ وَمَا طَحَاهَا ﴿٦﴾ وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا ﴿٧﴾ فَاَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا ﴿٨﴾ قَدْ اَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا ﴿٩﴾ وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا ﴿١٠﴾ كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِطَغْوَاهَا ﴿١١﴾ اِذِ انبَعَثَ اَشْقَاهَا ﴿١٢﴾ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّـهِ نَاقَةَ اللَّـهِ وَسُقْيَاهَا ﴿١٣﴾ فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنبِهِمْ فَسَوَّاهَا ﴿١٤﴾ وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا ﴿١٥﴾

৬। এই দোয়াটি পাঠ করা: «یَا مُقِیلَ الْعَثَرَاتِ أَقِلْنِی عَثْرَتِی یَا مُجِیبَ الدَّعَوَاتِ أَجِبْ دَعْوَتِی یَا سَامِعَ الْأَصْوَاتِ اسْمَعْ صَوْتِی وَ ارْحَمْنِی وَ تَجَاوَزْ عَنْ سَیِّئَاتِی وَ مَا عِنْدِی یَا ذَا الْجَلالِ وَ الْإِکْرَامِ» .

৭। এই দিনে ইমাম রেযার যিয়ারতের ফজিলতও অনেক বেশী।

captcha